অন্ডাল–সাঁইথিয়া শাখা পরিদর্শনে আসছেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার ঘনশ্যাম সিংহ। সে খবর জানাজানি হতেই কৌতূহল ছড়িয়েছে দুবরাজপুরে। এ বার কি তবে দূরপাল্লা ট্রেন দাঁড়াবে দুবরাজপুর স্টেশনে?
পূর্ব রেলের ওই শাখায় থাকা দুবরাজপুর স্টেশন থেকে টিকিট বিক্রির গড় মাসে ১৫ লক্ষেরও বেশি। ছ’বছর ধরে রয়েছে সংরক্ষিত রেলের টিকিট কাটার ব্যবস্থা। স্টেশনের উপর নির্ভরশীল এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। অথচ একমাত্র সিউড়ি-হাওড়া (ভায়া অন্ডাল) হুল এক্সপ্রেস ছাড়া কোনও ট্রেন দুবরাজপুর স্টেশনে দাঁড়ায় না। বিগত দশ বছর ধরে রেল কর্তাদের কাছে দূরপাল্লার অন্তত দু’টি ট্রেনের স্টপ দেওয়ার দাবি করে আসছেন শহরবাসী ও নাগরিক সমিতি। বহুবার স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রেলকর্তাদের তরফে আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি।
রেল সূত্রে খবর, ওই শীর্ষকর্তা বুধবার অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, দুবরাজপুর, চিনপাই ও সিউড়ি স্টেশন পরিদর্শন করবেন। তাঁকে নাগালে পেয়ে সেই দাবিটাকেই সামনে রাখতে চান শহরবাসী। ‘‘যদি এ বার ভাগ্য প্রসন্ন হয়!’’— বলছেন নাগরিক সমিতির শামাপ্রসাদ মিশ্র, কিশোর অগ্রবাল, পূর্ণচন্দ্র গড়াইরা।
রেল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, প্ল্যাটফর্মটি দৈর্ঘ্যে সামান্য ছোট। এ ছাড়া পরিকাঠামোয় ঘাটতি নেই। ডাবল লাইন সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে বহু আগে। কাজ শেষ লাইনের বৈদ্যুতিকরণেরও। অথচ রেল পরিষেবায় কোনও উন্নতি হয়নি। চার জোড়া ডিএমইউ, সকালে কলকাতা যাওয়ার ময়ূরাক্ষী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার এবং দুপুরে সিউড়ি থেকে হাওড়াগামী হুল এক্সপ্রেস ছাড়া আর কোনও ট্রেন এই স্টেশেনে দাঁড়ায় না। যাত্রী থেকে এলাকাবাসী— সকলের আপত্তির জায়গা সেটাই। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘দুবরাজপুর ব্লক বা পুর এলাকায় বসবাসকারীরা নন, এই স্টেশনের উপর নির্ভরশীল লাগায়ো ঝাড়খণ্ড এলাকার মানুষও। শহরবাসীর আক্ষেপ, যে স্টেশনের উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার অনেক ট্রেন চলছে, কেন দূরপাল্লার একটি ট্রেনও থামে না?’’
এলাকাবাসীর মূল দাবি ছিল— দু’টি ট্রেন, ভাগলপুর থেকে রাঁচীগামী বনাঞ্চল এক্সপ্রেস ও মালদা থেকে দিঘা— এই দু’টি ট্রেন থামুক। ওই দু’টি ট্রেন থামানোর লক্ষ্যে নাগরিক সমিতির পক্ষে রেল কর্তাদের স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। যদিও নিট ফল শূন্য। পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মু অবশ্য বলছেন, ‘‘এলাকার মানুষের দাবি রেলের বিবেচনায় রয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে অর্থনৈতিক ও ব্যবস্থাপনার দিকটিও।’’ কিন্তু তাতে ভুলতে নারাজ নাগারিক সমিতি ও শহরবাসী। দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে এবং ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সত্যপ্রকাশ তিওয়ারিরা বলছেন, ‘‘টালবাহানা ছেড়ে রেলের উচিত দূরপাল্লার ট্রেনের স্টপ দেওয়া। তাতে মানুষের অনেক উপকার হবে।’’
তবে, এ বার রেলের শীর্ষ কর্তার কাছে একটি ভিন্ন দাবি পেশ করতে চলছে দুবরাজপুরের বাসিন্দা ও নাগরিক সমিতি। বিকেল ৫টায় সিউড়ি থেকে হুল এক্সপ্রেস নাম দিয়ে প্রান্তিক হয়ে হাওড়াগামী একটি ট্রেন চলে। রেলের খবর ওই ট্রেন থেকে আয় অত্যন্ত কম। বাসিন্দাদের দাবি থাকবে, যদি ওই ট্রেনটিকেই ভোর ৫টায় দুবরাজপুর হয়ে চালানো হয় এবং ময়ূরাক্ষী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারের পরে হাওড়া থেকে সন্ধ্যা ৬টার সময় ছাড়া হয়। এমনটা হলে দুবরাজপুরের পাশাপাশি সিউড়ি শহরের মানুষও উপকৃত হবেন। বিশেষত ব্যবসায়ীরা। সঙ্গে ট্রেনটি লাভের মুখও দেখবে। সহমত জানিয়েছেন সিউড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কিসান পালও।
সেই দাবি মেটে কিনা, তারই উত্তর খুঁজছে দুবরাজপুর।।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy