Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বেয়াই কেন বিরোধী, তৃণমূল ফাঁপরে বোলপুরে

তাঁর দাপটে নাকি বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায়। কিন্তু নিজের বেয়াইকে ধরে রাখতে পারলেন না দলে। আর তাই নিয়ে শুরু হয়েছে কানাঘুষো। বোলপুরে পুরভোটের ময়দানে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী শিবিরে খোদ তাঁর বেয়াই, অনুপেন্দ্র রায় ওরফে বাবলা রায়। কেষ্ট (অনুব্রতের ডাকনাম) বনাম বাবলার এই লড়াই দেখে কার্যত ভ্যাবাচ্যাকা শাসক দল। অস্বস্তিতে অনুব্রত-অনুগামীরাও।

ভোট ময়দানে মুখোমুখি। অনুব্রত মণ্ডল ও অনুপেন্দ্র রায়।

ভোট ময়দানে মুখোমুখি। অনুব্রত মণ্ডল ও অনুপেন্দ্র রায়।

মহেন্দ্র জেনা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১২
Share: Save:

তাঁর দাপটে নাকি বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায়। কিন্তু নিজের বেয়াইকে ধরে রাখতে পারলেন না দলে। আর তাই নিয়ে শুরু হয়েছে কানাঘুষো।

বোলপুরে পুরভোটের ময়দানে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী শিবিরে খোদ তাঁর বেয়াই, অনুপেন্দ্র রায় ওরফে বাবলা রায়। কেষ্ট (অনুব্রতের ডাকনাম) বনাম বাবলার এই লড়াই দেখে কার্যত ভ্যাবাচ্যাকা শাসক দল। অস্বস্তিতে অনুব্রত-অনুগামীরাও। সুযোগ বুঝে এই গৃহযুদ্ধের আসর জমিয়ে দিতে পিছন থেকে ‘ইন্ধন’ দিচ্ছে কংগ্রেস। ভোটের ময়দানে গরম গরম প্রচার চালালেও, দুই বেয়াই অবশ্য মুখে বলছেন, তাঁদের পারিবারিক সম্পর্ক অটুট।

২০০০ সালে অনুপেন্দ্রবাবুর মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রাজা ঘোষের। আর রাজাবাবু তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ভাগ্নে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে, জামাই রাজা ঘোষ ও বেয়াই অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন নির্দল প্রার্থী অনুপেন্দ্র রায়।

নিজের জামাই আর বেয়াই বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন? অনুপেন্দ্রবাবু বলেন, “নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি যখন, তখন তাই বলতে হবে। তবে এই লড়াই আমাদের পরিবারে বা সম্পর্ককে কোনও প্রভাবিত করবে না।” বরাবরই দক্ষিণপন্থী ঘরানার মানুষ, সত্তর ছুঁই-ছুঁই অনুপেন্দ্র রায় বোলপুরের পুরভোটে কংগ্রেসের টিকিটে দু’বারের কাউন্সিলর। টানা তিন বার (১৯৮৬ থেকে ২০০০)-এর জয়ী, ছিলেন পুরপ্রধানও।

রাজ্যে পরিবর্তন আসার পর, দল বদলে ২০১১ সাল নাগাদ তৃণমূলে নাম লেখান অনুপেন্দ্রবাবু। তবে এই পুরভোটে বোলপুরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন। তৃণমূলের নেতা হয়ে নির্দলে কেন? অনুপেন্দ্রবাবুর জবাব, ‘‘আসলে দল চাইছিল আমি ১৯ নম্বরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। তার জন্য প্রস্তাবও দিয়েছিল। কিন্তু আমি ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু দলগত ভাবে আমার এবং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সিদ্ধান্তে সহমত হয়নি দল। তাই তৃণমূল থেকে এই ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে দল।”

অনুপেন্দ্রবাবু ওরফে বাবলাবাবুর দল বদল এবং মত বদলের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর নির্বাচনের কাজকর্ম, জনসংযোগ করার জন্য অফিসের বদল হয়েছে। এখন সকালে, দুপুরে এবং অনেক রাত পর্যন্ত কর্মী-সমর্থক এবং অনুগামীদের নিয়ে নির্বাচনের কাজ সারেন আলাদা অফিসেই। পথে প্রচারে নামেন সেখান থেকেই। আর তাঁর এহেন প্রচার ও জনসংযোগ নিয়েই কার্যত কপালে ভাঁজ শাসক দলের ওই ওয়ার্ডের কর্মী-সমর্থকদের।

কিন্তু দলের দাপুটে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, যাঁর হুমকিতে বিরোধী থেকে পুলিশ অবধি সকলেই থরহরিকম্প বলে কানাঘুষো, তাঁর বেয়াইয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস কার? তৃণমূল প্রার্থীর দাবি, লড়াইয়ের ময়দানে বাবলাবাবুকে ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই দেখছেন তিনি। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ৬৮ বছরের প্রতাপ সিংহ রায় কেন্দ্র সরকারের (পূর্ব রেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের) অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। তিনি বলেন, “জেলায় দলের কাণ্ডারী অনুব্রতবাবু। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁর বা রাজাবাবুর সম্পর্কিত হতে পারেন। কিন্তু, এটাও মনে রাখি ভোটে জেতাটা কেষ্টদা বা রাজাবাবুরও সম্মান রক্ষার লড়াই। তাই সবটা নিংড়ে লড়াইয়ে নেমেছি।’’

কী বলছেন শাসকদলের অন্যতম নেতা তথা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রাজা ঘোষ?

অনুপেন্দ্রবাবুর সমর্থনে পোস্টার, দেওয়াল লিখন বোলপুরে।

“আমি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতাদর্শে বিশ্বাসী। শ্বশুর মশাই নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী। উনি প্রতিদ্বন্দিতা করতেই পারেন। তবে দুই অণুর লড়াই হচ্ছে, কোনও পরমাণু থাকে সেটা আমিও দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। তবে উনি এই পরিস্থিতিতে এক জন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে না দাঁড়ালেই পারতেন।”

আর দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত? যিনি কখনও বিরোধীদের ইঁদুরের সঙ্গে তুলনা করে গর্ত থেকে বের করে বিষ দিয়ে মারার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কখনও বিরোধীদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এখন বেয়াইয়ের বিরুদ্ধেই কি তেমন দাওয়াই দেবেন? স্বভাবসুলভ কোনও তোপ দাগলেন না। শুধু বললেন, “বেয়াই হলেই বা, আমার দলের, মা মাটি মানুষের প্রতিনিধির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যখন, তখন উনি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। পরিবার, সম্পর্ক অন্য জায়াগায়। তবে, সে সম্পর্কের ফলে কোনও হেরফের হবে না।’’

ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE