সেজে উঠছে মন্দির। নিজস্ব চিত্র।
শিল্পীর কোনও জাত হয় না, ধর্ম হয় না। চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিচ্ছে শান্তিনিকেতনের সুরুলের ছোট সরকার বাড়ি। এক ঝাঁক মুসলিম সম্প্রদায়ের শিল্পীর হাতেই সেজে উঠেছে পরিবারের সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো লক্ষ্মী-জনার্দন মন্দির। মন্দিরের সংস্কার ঘিরে এমনই সম্প্রীতির নজির তৈরি হয়েছে সেখানে।
সরকার পরিবার সূত্রে জানা যায়, অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে বর্ধমানের নীলপুর অঞ্চল থেকে সুরুলে এসেছিলেন ভরতচন্দ্র সরকার। তাঁর পুত্র কৃষ্ণহরি সরকার ছিলেন ধার্মিক মনের মানুষ। জমিদারির পত্তন করার পাশাপাশি তিনি সুরুল এলাকায় টেরাকোটার কাজ করা বেশ কয়েকটি মন্দির নির্মাণ করেন। তারই একটি লক্ষ্মী-জনার্দনের মন্দির। জানা গিয়েছে,এই মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার বিভিন্ন নকশা খোদাই করা রয়েছে, যা পর্যটকদেরও নজর কাড়ে। ত্রিখিলানযুক্ত মন্দিরের প্রবেশপথের দুই দেওয়ালে রামায়ণের নানা ছবি খোদাই রয়েছে। কোথাও কোথাও রয়েছে সেই সময়কালের ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা দৃশ্য। এ ছাড়াও মন্দিরের গায়ে ফুটে উঠেছে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনি।
কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক ভাবে না-হওয়ায় মন্দিরটি জীর্ণ হয়ে পড়েছিল। টেরাকোটার ফলকগুলির ভগ্নাবস্থা। ছোট সরকার বাড়ির সদস্যেরা জানিয়েছেন, তাঁরা সকলে মিলে এই প্রাচীন মন্দিরের ঐতিহ্য, শিল্প, সংস্কৃতি ধরে রাখতে সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন। সমস্যা হল, টেরাকোটার এমনমন্দিরের সংস্কারের কাজ করবেন কোন শিল্পী? এই কাজে অভিজ্ঞ শিল্পী ছাড়া আর কেউ পারবেন না এমনসূক্ষ্ম কাজ।
প্রাচীন শিল্পকলা সংবলিত মন্দির সংস্কার করতে পারেন, এমন একদল শিল্পীকে মুর্শিদাবাদ থেকে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের হাতের ছোঁয়াতেই এখন সেজে উঠছে ছোট সরকার বাড়ির লক্ষ্মী-জনার্দন মন্দিরটি।
যাঁর তত্ত্বাবধানে মন্দির সংস্কার কাজ চলছে, সেই শিল্পী মহম্মদ তাজেম শেখ বলেন, “আমরা বেলুড় মঠ, স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি, বিভিন্ন মসজিদ, গির্জাতেও কাজ করেছি। মসজিদ হোক বা মন্দির, শিল্পকর্মই তো আমাদের কাজ।” ছোট সরকার বাড়ির অন্যতম সদস্য জয়দেব সরকার বলেন, “শতাব্দী প্রাচীন এই টেরাকোটাটি মন্দিরটি নষ্ট হয়ে যেতে বসেছিল। তাজেম শেখদের পাশাপাশি মন্দিরের টেনাকোটার কাজটিকরেছেন বোলপুরের ভুবনডাঙ্গার শিল্পী লক্ষ্মণ বাগদি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy