Advertisement
E-Paper

নালিশে নাম জাহেরের সঙ্গীদেরই

সিপিএম বিরোধিতা দিয়ে শুরু। পরে তৃণমূলে ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দলেই বিরোধ। চেনা মুখের শত্রু হয়ে যাওয়া বুঝেও কোথাও মেনে নিতে পারেননি তিনি। সেই বিরোধেই বোধহয় থমকে গেল কেতুগ্রামের রাজনীতির অন্যতম চরিত্র জাহের শেখের জীবন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪৩

সিপিএম বিরোধিতা দিয়ে শুরু। পরে তৃণমূলে ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দলেই বিরোধ। চেনা মুখের শত্রু হয়ে যাওয়া বুঝেও কোথাও মেনে নিতে পারেননি তিনি। সেই বিরোধেই বোধহয় থমকে গেল কেতুগ্রামের রাজনীতির অন্যতম চরিত্র জাহের শেখের জীবন।

বুধবার সন্ধ্যায় নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে মোটরবাইকে ফেরার পথে ছটা গুলি মাথা ফুঁড়ে দেয় তাঁর। একসময়ের ছায়াসঙ্গী জাহাঙ্গির শেখ, সাউদ মিঞা, উজ্জ্বল শেখদের নামে খুনের অভিযোগ হয়। তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতা বলেন, ‘‘এমনটা ভবিতব্যই ছিল।’’

চাষবাস, সেখান থেকে ধান চালের ব্যবসা করে খাসপুরের সংসার চলত জাহের শেখের। ২০০৮ সালের শেষ দিকে মাটির বাড়ি ভেঙে পাকা বাড়ি তৈরির সময় সিপিএম পঞ্চায়েত বাড়ি তৈরিতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। সেই বিরোধিতা শুরু। পরে সাবমার্সিবল বসানোর সময়ে বাধা দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে জাহেরকে গ্রেফতারও করা হয়। ফিরে সিপিএমের বিরুদ্ধে গ্রামে সংগঠন শুরু করেন তিনি। পরিবারের দাবি, ব্যবসার টাকা আদায়ের জন্য খাসপুর থেকে রতনপুরে যাওয়ার সময় তাঁকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মারধর করা হয়। এরপরেই খাসপুর, আরগুন, কাঁটারি, সুলতানপুরে কংগ্রেসের হয়ে সংগঠন শুরু করেন। এলাকার সাংসদ তখন অধীর চৌধুরী।

২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের পর বীরভূমের নানুরের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের ভাই কাজল শেখের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। খাসপুরে জাহেরের বাড়ি থেকে কাজলের ডেরা পাপুরির দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। কাজলের মদতে বাদশাহি রোডের দু’পাশে সংগঠন বাড়াতে থাকেন তিনি। এর মধ্যে নানুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক আনন্দ দাস খুনে নাম জড়ায় কাজল ও জাহেরের। বামুনডিহির সাউদ মিয়াঁ, কান্দরার হারা শেখ ও জাহের মিলে কেতুগ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দাপিয়ে বেড়াতে সে সময়। পাশে পেয়ে যান বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকেও। গ্রাম দখল, পার্টি অফিস দখলে জাহের নেতৃত্ব দেন। ২০১১ সালের ভোটে সেখ সাহনেওয়াজ কেতুগ্রামের প্রার্থী হলেও প্রচার, ভোট বকলমে জাহেরের নেতৃত্বেই চলে।

ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে বা়ড়তে থাকে শত্রু। বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত তখনও ছিল সিপিএমের হাতে। উপপ্রধান উজ্জ্বল শেখ জাহেরের মদতে প্রধান হন। কয়েকমাস পর থেকে তাঁর সঙ্গে মনোমালিন্য. শুরু হয়। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত সমিতি দখলে নেওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। ২০১৫-য় তৃণমূল নেতা আপেল শেখ ও তৃণমূলের উপপ্রধান বাদশা শেখ খুনের পরে শত্রুতা বাড়ে। জাহেরের বিরুদ্ধে মুখ খুললেও সেই সময় গ্রামছাড়া করে দেওয়া হতো বলে স্থানীয়দের দাবি। কয়েকমাস পরে পঞ্চায়েতের নানা কাজ নিয়ে ক্ষোভ দেখাতে থাকেন সাউদ, উজ্জ্বলেরা। ততদিন বীরভূমে অনুব্রত-কাজলের লড়াই প্রকাশ্যে চলে আসে। একের পর খুন গোলমালে জাহেরের নাম জড়ায়। স্ত্রী নূরনেসাকেও জেল খাটতে হয়। পুলিশ জানায়, জাহেরের নামে পাঁচটা খুন, গাঁজা পাচারের অভিযোগ ছিল। সঙ্গে বীরভূমেও বেশ কয়েকটি মামলা চলছে তাঁর নামে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘পুরোটাই ক্ষমতা আর টাকার ভাগের লড়াই।’’

খাসপুরের এক সিপিএম নেতা বলেন, ‘‘গ্রামে দু’টি বর্ধিষ্ণু পরিবার ছিল। একটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিল জাহের। তাঁদের দ্বন্দ্বেই সিপি‌এম বিরোধী রাজনীতির বীজ বোনা হয়ে যায়।’’ স্থানীয় এক তৃণমূল নেতাও বলেন, ‘‘দু’মাসের ব্যবধানে জাহের শেখের পিসেমশাই ও ভায়রাভাই খুন হন। অনেক দিক থেকে শত্রু হয়ে গিয়েছিল তাঁর।’’ খুনের পরে জাহেরের পরিবারেরও দাবি, কাছের লোকেরা জোট বেঁধেই খুন করেছে তাঁকে।

এ দিন সাহানেওয়াজ সারাদিন জাহেরের বাড়িতে ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘কিছুই বুঝতে পারছি না। পুলিশ তদন্ত করছে।’’ অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘সৎকার মিটে যাওয়ার পরে দলীয় ভাবে খোঁজ নেব কী হয়েছে। পুলিশ তো তদন্ত শুরুই করেছে।’’ আর দাঁইহাটের সভা থেকে রাজ্য বিজেপি নেতা রাহুল সিংহের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এটা তারই ফল। ’’

Murder TMC Leader
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy