পাততাড়ি গুটিয়ে নির্মাণস্থল ছেড়েছে ঠিকাদারি সংস্থা। তাই গুনুটিয়ায় সেতু নির্মাণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। প্রশাসন অবশ্য সংশয় অমূলক বলে দাবি করেছে। প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে খবর, লাভপুর থানার গুনুটিয়া এবং ময়ূরেশ্বর থানার আমড়া গ্রামের মাঝে বয়ে যাওয়া ময়ূরাক্ষী নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের। সেই দাবি মেনে ২০১০ সালে বিধানসভা নির্বাচনের মুখে সেতুটির শিলান্যাস করেন তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী। বরাদ্দ হয় ১০ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। সেতু নির্মাণের নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ২ বছর। কিন্তু ৬ বছরে মাত্র ৪টি স্তম্ভ নির্মাণের পরেই থেমে যায় যাবতীয় উদ্যোগ। আর এরপরেই নানা জল্পনা ছড়ায় এলাকায়।
ঘটনা হল, পুজোর আগে গুদাম এবং অফিস ঘর ভেঙে আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি নিয়ে নির্মাণস্থল ছেড়ে চলে গিয়েছে ঠিকাদারি সংস্থা। তারপর থেকেই জনমানসে সেতু নির্মাণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আমড়ার বাবন মণ্ডল, ভোগপুরের অনিল মণ্ডলরা জানান, দীর্ঘ দিন দাবি জানানোর পরে সেতু নির্মাণের কাজ যদিও বা শুরু হল কিন্তু সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ঠিকাদার পাততাড়ি গুটিয়ে পালিয়েছে। তাই আদৌ সেতু হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ সরকারি কাজ শেষ হওয়ার আগে ঠিকাদারের নির্মাণস্থল ছেড়ে যাওয়ার এমন ঘটনা আমাদের জানা নেই।
সংশয়ের পাশাপাশি সেতু নিমার্ণের দীর্ঘ সূত্রিতায় স্থানীয় জনমানসে চরম ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে।
এই সেতু অভাবে এলাকার বাসিন্দাদের নদী পারাপার করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষায় নৌকা এবং অন্যসময় বাঁশের মাচাই নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম। ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়ার ব্রজমোহন সেন, লাভপুরের আবাডাঙ্গার সুনীল সূত্রধররা জানান, শুধু অর্থ ব্যয়ই নয়, সাইকেল, মোটরবাইক, মালপত্র নিয়ে গাদাগাদি পারাপারের ফলে প্রায়ই নৌকা উল্টে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় আমাদের। বাঁশের মাচাতেও যাতায়াতের সময়ও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বুক কাঁপে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সেতুটি নির্মাণ হলে শুধু নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারাই নন, লাগোয়া মুর্শিদাবাদ জেলার বিস্তৃর্ণ অঞ্চলের মানুষজনও উপকৃত হবেন। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিমি কমে যাবে।
সেতু নির্মাণে কেন এত টালবাহানা?
প্রশাসনেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ জন্য বিগত বাম সরকারই দায়ী। তারা নদীর দুইদিকে রাস্তার জন্য জায়গার সংস্থান না করেই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে। নির্মীয়মাণ ওই সেতুর একদিকে রয়েছে ব্যক্তি মালিকানা ইংরেজ আমলের একটি নীলকুঠি। অন্যদিকের জায়গাও ব্যক্তি মালিকানাধীন। মালিকদের একাংশ জমি ছাড়ার ব্যাপারে আপত্তি তোলেন। কেউ বা আদালতে মামলাও দায়ের করেন। তার ফলেই সমস্যা দেখা দেয়। ওই সূত্রটিই জানাচ্ছে, আগে জমি মালিকদের সঙ্গে কথা বললে সমস্যা এড়ানো যেত। সেক্ষেত্রে সামান্য নিচের দিকে সেতু নির্মাণ করা হলে একদিকে নদীবাঁধ অন্যদিকে গ্রাম্য রাস্তাই বিকল্প হতে পারত। কিন্তু সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হয়নি।
ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশাসন রাস্তার ব্যবস্থা করতে না পাড়ায় আমাদের দীর্ঘ দিন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে। তার উপরে ৬ বছরের দরপত্র অনুযায়ী কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছে। অথচ নির্মাণ সামগ্রীর দাম কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। তাই আমরা আর ওই কাজ করতে পারব না বলে প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছি।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী অবশ্য জানিয়েছেন, ‘‘আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। গুনুটিয়ায় সেতু নির্মাণ হবে। প্রয়োজনে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy