ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ ফ্রি টু এয়ার চ্যানেল ও আরও কয়েকটি পে চ্যানেল জন্য ২৬০ টাকা রিচার্জ করিয়েছিলেন দুবারজপুরের সীতাংশ রুজ। ভেবেছিলেন, আর হয়তো ছুটতে হবে এলাকার কেব্ল অপারেটরের কাছে। কোথায় কী! ৬ ফেব্রুয়ারি থেকেই তাঁর টিভিতে ‘ব্ল্যাক আউট’। একটি চ্যানেলও দেখতে পাচ্ছেন না তিনি। বিরক্তির সুরে বলছেন, ‘‘কেবল অপারেটরের কাছে ছাপানো চ্যানেল-তালিকা থেকে বেছে পে চ্যানেলগুলোতে টিক দিয়ে এলাম। তার পরেও এই হাল। এ তো দেখছি আগের ব্যবস্থাই ভাল ছিল। ওই একই টাকায় অনেক বেশি সংখ্যক চ্যানেল আসত টিভিতে।’’
ফ্রি টু এয়ার চ্যানেলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় পে চ্যানেলের জন্য মোট ৪৫০ টাকা দিয়ে রিচার্জ করিয়েছেন দুবরাজপুরেরই শেখ মনির। সীতাংশুর মতো হাল না হলেও মনিরের টিভিতেও সব চ্যানেল আসছে না। তাঁর ক্ষোভ, এতগুলো টাকা দিয়েও পছন্দের অধিকাংশ চ্যানেলই দেখছে পাচ্ছেন না। একই অভিজ্ঞতা ইলামবাজারের সপ্তর্ষি মণ্ডল এবং সিউড়ি ধল্লা গ্রামের বাসিন্দা প্রবীর চৌধুরীর। তাঁরা বলছেন, ‘‘প্রথমত কী চ্যানেল নেব, কোনটা কোনটা বাদ দেব, সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত ২৫০ টাকা দিয়ে রিচার্জ করেও বেশির ভাগ পে চ্যানেল দেখতে পাচ্ছি না। কেব্ল অপারেটরের কাছে গেলেই বলছেন, সিস্টেম আপডেট হয়নি। একই কথা শুনতে শুনতে বিরক্তি এসে যাচ্ছে।’’
তাঁদের যা আশঙ্কা ছিল, ঠিক সেটাই ঘটেছে বলে দাবি বীরভূমের কেব্ল অপারেটরদের। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আমরা তো প্রথম থেকেই বলছিলাম টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা ট্রাই-এর নির্দেশ কার্যকর হলে এক ধাক্কায় কেব্ল টিভি দেখার খরচ অনেকটা বাড়বে। অথবা পুরনো টাকায় দেখতে গেলে চ্যানেল সংখ্যা অনেক কমে যাবে। মানুষের মনে যে ভাবে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে, তাতে আমাদের গ্রাহক সংখ্যা কমে যাবে বলেই আশঙ্কা। আমরাও গ্রাহকদের জবাবদিহি করতে করতে পাগল হয়ে যাচ্ছি।’’ দুবারজপুরের কেব্ল অপারেটর শেখ রেজ্জাকের কথায়, ‘‘রিচার্জ করেও কেন ছবি পাচ্ছি না, এই অভিযোগ শুনতে শুনতে হয়রান হয়ে গেলাম।’’
গ্রাহককে নিজের পছন্দমতো টেলিভিশন চ্যানেল দেখার স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ‘টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’ বা ট্রাইয়ের নির্দেশ কার্যকর করতে গিয়ে নাজেহাল গোটা কেবল সম্প্রচার ব্যবস্থা। গ্রাহক থেকে অপারেটর— সকলেই বিভ্রান্ত। কথা ছিল, ট্রাইয়ের নির্দেশে ২৯ ডিসেম্বর রাত বারোটার পর থেকে কেবল টিভি, ডিটিএইচ, আইপিটিভি সহ সব ধরনের টেলিভিশনে সমস্ত পে চ্যানেলে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। এর পর থেকে গ্রাহক শুধুমাত্র তাঁর পছন্দমতো চ্যানেলগুলিই বেছে নিয়ে দেখতে পাবেন। এ জন্য তাঁকে প্রতিটি চ্যানেলের জন্য নির্দিষ্ট দাম দিতে হবে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে তা সাময়িক ভাবে স্থগিত হয়ে যায়। পরে ফের আদালতের নির্দেশে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ট্রাইয়ের পূর্ব ঘোষণা মতো নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হওয়া শুরু হয়েছে। তাতেই বিপত্তি এবং বিভ্রান্তি বাড়ছে বলে অভিযোগ।
গ্রাহকদের অভিযোগ, অতিরিক্ত টাকা গুনেও পছন্দের চ্যালেন দেখতে পাচ্ছেন না। একাধিক রিয়্যালিটি শো, খেলার চ্যানেল, জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল, কার্টুন দেখতে না পাওয়ায় হতাশ বড় থেকে ছোট। পছন্দমাফিক পে চ্যানেলগুলি দেখার দেখার জন্য নির্ধারিত মূল্য দিয়ে কেব্ল অপারেটরদের কাছে আবেদন করার পরেও সব চ্যানেল টিভির পর্দায় না আসার বিষয়টি গ্রাহকদের অসন্তোষ আরও বাড়িয়েছে। কেব্লের মাধ্যমে ১০০টি ফ্রি টু এয়ার চ্যানেল দেখার খরচ ১৩০ টাকা। সঙ্গে অতিরিক্ত ১৮ শতাংশ জিএসটি ধরে ১৫৩ টাকা। এর পরে যে গ্রাহক যে যে পে চ্যানেল দেখতে চান, তার জন্য নির্ধারিত মূল্য (জিএসটি-সহ) দিতে হচ্ছে। পে-চ্যানেলের জন্য কেবল অপারেটরদের কাছ থেকে একটি বাকেট বা প্যাকেট কিনতে হচ্ছে। গ্রাহকদের দাবি, আগে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় যে সংখ্যক চ্যানেল দেখা যেত, সমসংখ্যক চ্যানেল দেখতে এখন কার চেয়ে বেশি টাকা লাগছে।
তবে সমস্যার গভীরতা বুঝতে আরও দিন কয়েক অপেক্ষা করতে হবে বলে জানাচ্ছেন জেলার কেব্ল টিভির অপারেটরেরা। সিউড়ির কেব্ল অপারটর অজয় চট্টোপাধ্যায়, রামপুরহাটের রবিউল আলমরা বলছেন, ‘‘যতক্ষণ না সিস্টেম পুরোপুরি আপডেট হচ্ছে, জনরোষ এড়াতে এখনও সব চ্যানেল বব্ধ করে দেয়নি মাল্টি সিস্টেম অপারেটর বা এমএসওদের একাংশ। সচেতন গ্রাহকদের অনেকেই আগে থেকে রিচার্জ করাতে শুরু করলেও জেলার অধিকাংশ গ্রাহক এখনও রিচার্জ করাননি।’’
তাঁরা জানান, পছন্দের চ্যানেলে টিক দিয়ে আবেদনপত্র জমা নেওয়ার কাজ চলছে। তবে যে দিন থেকে চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাবে, আসল সমস্যা বোঝা যাবে তার পরেই
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy