Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

সভাপতি পরিবর্তনে বিতর্ক স্কুলে

সূত্রের খবর, দু’বছর আগে এই দুই স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্যদের নামের তালিকা সুপারিশ করে রাজ্য শিক্ষা দফতরের কাছে পাঠিয়েছিলেন জেলার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁওতালডিহি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০২:০৮
Share: Save:

দু’টি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানালেন পরিচালন সমিতির সদস্যেরা।

তাঁদের অভিযোগ, পরিচালন সমিতির সদস্যদের অন্ধকারে রেখে শুধু সভাপতির হাতে স্কুলের দায়দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা। সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বয়েজ ও গার্লস হাইস্কুলের ঘটনা।

সম্প্রতি দুই স্কুলের পরিচালন সমিতির পাঁচ সদস্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নিয়মভঙ্গের ওই অভিযোগ জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। বয়েজ হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অভিজিৎ মণ্ডল ও গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বেলা মাঝি— দু’জনেই অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।

পাড়া ব্লকের সাঁওতালডিহির ওই দুই স্কুলের পরিচালন সমিতি গঠন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরেই টানাপড়েন চলছে। ব্লকের অন্য বহু স্কুলে দু’বছর আগেই পরিচালন সমিতি তৈরি হয়ে গেলেও ব্যতিক্রম ছিল ওই দুই স্কুল। অবশ্য এই টানাপড়েনের জন্য তৃণমূলের অন্দরের কলহকেই মূলত দায়ি করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে।

নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে এখন শিক্ষা দফতরের মনোনয়নের ভিত্তিতে স্কুলে পরিচালন সমিতি গঠিত হয়। সমিতিতে থাকেন স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা দফতরের দুই আধিকারিক, একজন অভিভাবক প্রতিনিধি এবং এলাকার দু’জন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি। সাধারণত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা সমিতির সদস্য ও সভাপতির নাম সুপারিশ করেন।

সূত্রের খবর, দু’বছর আগে এই দুই স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্যদের নামের তালিকা সুপারিশ করে রাজ্য শিক্ষা দফতরের কাছে পাঠিয়েছিলেন জেলার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো।

তার ভিত্তিতে পরিচালন সমিতির সভাপতি ও অন্য চার সদস্যের নামের তালিকা স্কুলগুলিতে পাঠিয়ে দেয় রাজ্য শিক্ষা দফতর। কিন্তু মন্ত্রীর সুপারিশ করা দুই সভাপতিকে গোড়া থেকেই এলাকার তৃণমূলের একাংশ মেনে নিতে পারেননি।

বিশেষত স্থানীয় বিধায়ক উমাপদ বাউড়িই বিষয়টি ভাল ভাবে নেননি বলে দলেরই একাংশের দাবি। সেই সময়ে, তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের ‘চাপে’ শিক্ষা দফতরের তৈরি দেওয়া পরিচালন সমিতির হাতে দায়িত্বভার তুলে দিতে পারেননি দুই ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক।

পাড়ার বিধায়ক উমাপদবাবু আলাদা করে দু’জনকে সভাপতি করার জন্য শিক্ষা দফতরে সুপারিশপত্র পাঠান।

মন্ত্রীর সুপারিশের ভিত্তিতে বয়েজ হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসাবে বগড়া প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা দেবিকা দত্ত এবং গার্লস হাইস্কুলের সভাপতি হিসাবে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কমালাকান্ত বাউড়ির নাম পাঠিয়েছিল শিক্ষা দফতর। স্থানীয় বিধায়কের সুপারিশ পাওয়ার পরে তা বদলে চলতি বছরের জুন মাসে নতুন দুই সভাপতির নাম স্কুলগুলিতে পাঠানো হয়।

এ বার শিক্ষা দফতর বয়েজ হাইস্কুলে মনোজ সিংহ ও গার্লস হাইস্কুলে দীপক সরকারকে পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসাবে মনোনীত করে। তাঁরা দু’জনের এলাকার ব্যবসায়ী তথা শিক্ষানুরাগী।

দু’টি স্কুলেরই পরিচালন সমিতির অন্য সদস্যদের অভিযোগ, নতুন সভাপতিদের নাম আসার পরেই তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে দুই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা তাঁদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেন। সেখানে পরিচালন সমিতির অন্য সদস্যদের ডাকাই হয়নি বলে অভিযোগ।

সেই অভিযোগে সই করেছেন পরিচালন সমিতিতে স্বাস্থ্য দফতরের সদস্য প্রতিনিধিও। আরও দাবি করা হয়েছে, দু’বছর আগে শিক্ষা দফতর পরিচালন সমিতি মনোনয়ন করে দিলেও দুই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা ওই সদস্যদের নিয়ে কোনও বৈঠক করেননি। মর্জি মাফিক স্কুল পরিচালনা করেছেন।

তবে বয়েজ হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অভিজিৎ মণ্ডল পাল্টা অভিযোগ করেছেন, আগে যাঁকে ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসাবে মনোনীত করা হয়েছিল, তিনি নিজে একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা।

নিয়ম অনুযায়ী তিনি অন্য কোনও স্কুলের পরিচালন সমিতিতে থাকতে পারেন না বলে অভিজিৎবাবুর দাবি। সেই সংক্রান্ত নিয়মের জটিলতার জন্যই পরিচালন সমিতির সভাপতির হাতে স্কুলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক।

তিনি বলেন, ‘‘পরে অন্য নাম আসার পরেই নতুন সভাপতির হাতে নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব দিয়েছি।” গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বেলাদেবী বলেন, ‘‘প্রথম বার পাঠানো তালিকা নিয়ে স্থানীয় ভাবে কিছু আপত্তি উঠেছিল। ওই তালিকার বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ পড়েছিল বলে বিতর্ক এড়াতেই সেই সময়ে দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব হয়নি।’’ বেলাদেবী জানান, নতুন সভাপতির নাম তাঁদের কাছে চলে আসার পরেই স্কুলের স্বার্থে দীপকবাবুকে পরিচালন সমিতির দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অন্য সদস্যদের ওই সভায় না ডাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিজিৎবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘নতুন নির্দেশিকায় শুধু সভাপতির নামই পাঠানো হয়েছিল। অন্য সদস্যদের নাম পাঠানো হয়নি বলেই ডাকা হয়নি।”

পুরো প্রক্রিয়াটিই তিনি জেলা শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলে সম্পন্ন করেছেন বলে দাবি করেছেন অভিজিৎবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE