Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ভিড় কমছে শহরে, গ্রাম তিমিরেই

গত ক’দিনে চোখ-সওয়া হয়ে যাওয়া সেই দীর্ঘ লাইন আগের চেয়ে কিছুটা হলেও ছোট হয়েছে। এটিএমগুলির সামনের ভিড় ক্রমশ পাতলা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে শহরের পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে শুরু করলেও ভোগান্তির সেই ছবি থেকে গিয়েছে গ্রামাঞ্চলে।

সোনামুখীর পাথরমোড়া গ্রামে নিত্যদিন এই ভোগান্তি চলছে। —নিজস্ব চিত্র।

সোনামুখীর পাথরমোড়া গ্রামে নিত্যদিন এই ভোগান্তি চলছে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২০
Share: Save:

গত ক’দিনে চোখ-সওয়া হয়ে যাওয়া সেই দীর্ঘ লাইন আগের চেয়ে কিছুটা হলেও ছোট হয়েছে। এটিএমগুলির সামনের ভিড় ক্রমশ পাতলা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে শহরের পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে শুরু করলেও ভোগান্তির সেই ছবি থেকে গিয়েছে গ্রামাঞ্চলে।

সোনামুখীর পাথরমোড়া এলাকার একটি গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ভোর থেকেই টাকা তোলার লাইন পড়ে। কেউ ইটের টুকরো, কেউ ব্যাগ রেখে লাইন দিয়ে যান। সকাল ন’টার মধ্যেই গ্রাহকেরা লাইনে এসে দাঁড়িয়ে পড়েন। গ্রাহকদের ক্ষোভ, ব্যাঙ্ক থেকে পাঁচশো টাকার বেশি তুলতেই পারেননি তাঁরা। তবে এ দিন থেকে দু’হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। তবে দু’হাজার টাকার নোট নিয়ে ভাঙাতে না পেরে আবার ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকেরা।

পাথরমোড়ার বিদেশ ঘোষ কয়েক বিঘে জমিতে আলু বীজ লাগানোর কাজ শুরু করেছেন। এই কাজে প্রতিদিনই জমিতে মজুর লাগাতে হচ্ছে। বিদেশবাবু বলেন, “ভোর থেকে ব্যাঙ্কে লাইন দিয়ে দু’হাজার টাকার একটি নোট পেলাম। শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্যেই ওই টাকা তুলেছিলাম। কিন্তু ওই বড় নোট খুচরো করতে না পারায় শ্রমিকদের আগাম বাড়তি টাকা দিয়ে দিতে হল।”

এই গ্রামের অমিয় সাহা এ দিন ভোর চারটে থেকে ব্যাঙ্কে লাইন দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “মজুরি দেওয়ার টাকা না থাকায় এখনও মাঠ থেকে ধান তুলতে পারিনি!’’

মঙ্গলবার পুরুলিয়া শহরের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অবস্থা আগের সপ্তাহের চেয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে, তা মানছেন গ্রাহক থেকে শুরু করে ব্যাঙ্কের কর্মীরাও। জেলাশাসকের কার্যালয় লাগোয়া শহরের একটি বড় ব্যাঙ্ক যেটি জেলার ‘কারেন্সি চেস্ট ভল্ট ব্যাঙ্ক’ হিসেবে পরিচিত, সেই ব্যাঙ্কের শাখা প্রবন্ধক জয়কিষুণ দাস বলেন, ‘‘পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে এখনও ভিড় রয়েছে।’’ শহরের কোর্ট রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা প্রবন্ধক বিজয়কুমার মিশ্রও মানছেন, চলতি সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

তবে ভিড় কম বাঁকুড়া শহরের এটিএমে।

তাঁর কথায়, ‘‘গত সপ্তাহেও দেখা গিয়েছে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন মানুষজন। এ দিন সেই দৃশ্য ছিল না। তবে সাড়ে তিনশো গ্রাহক এ দিন টাকা তুলেছেন।’’ কারেন্সি চেস্ট ভল্ট ব্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এলাকার আরেক’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা প্রবন্ধক রাজকিশোর সাহুও জানাচ্ছেন, এ দিন ভিড় কম ছিল।

তবে, ঝালদা পুর এলাকার চার নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পেশায় বিদ্যুৎ-মিস্ত্রি টুকুন চট্টোপাধ্যায় জানালেন, কাজ করেও পারিশ্রমিক মিলছে না। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এমনটা চললে আমাদের ঘরে হাঁড়ি চড়বে কী ভাবে?’’ এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে পুরনো নোটেই পারিশ্রমিক নিচ্ছেন অনেকে। আদ্রার বাসিন্দা বিবেক মাজির বক্তব্য, ‘‘আমার মা মারা গিয়েছেন। একদিন পরেই কাজ। শ্রাদ্ধের খরচ রয়েছে। কোথা থেকে কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না!’’

এ দিকে, শহরের এটিএম পরিষেবা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। শহর বা শহরতলির সমস্ত এটিএম কাউন্টারের দরজা না খুললেও বিভিন্ন পাড়ায় এটিএম কাউন্টার থেকে মানুষজন পরিষেবা পেয়েছেন। যে এটিএমগুলি থেকে দু’হাজার টাকার নোট মিলছে, স্বাভাবিক ভাবেই সেই এটিএম কাউন্টারগুলিতে ততটা ভিড় ছিল না। শহরের বাসিন্দা পিয়ালি সেনগুপ্ত জানালেন, অল্প সময় লাইনে দাঁড়িয়েই এটিএম থেকে টাকা তুলেছেন। একই অভিজ্ঞতা অশোক বাউরিরও।

আর গ্রাম?

দুই জেলার বহু গ্রামেই খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, শহর যতটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, গ্রাম ততটা নয়। একাধিক ব্লক কিংবা প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মানুষজনের দুর্ভোগের খবর মিলেছে। আড়শা ব্লকের ধানাড়া গ্রামের পেশায় চাষি বিভূতি মাঝির কথায়, ‘‘বড়ই সমস্যায় পড়েছি। দু’হাজার টাকার নোট পেয়েছি। কোথাও খুচরো মিলছে না। নোট দেখেই সবাই জিজ্ঞেস করছেন, কত টাকার জিনিস নেবেন?’’ এই ব্লকের শিরিডি গ্রামের বাসিন্দা পেশায় চাষি হাবুলাল মাহাতো জানালেন, দিনভর লাইনে দাঁড়িয়ে দু’হাজার টাকার নোট পেয়েছেন। ভাঙাতে সমস্যার কথা জানিয়েছেন তিনিও।

দু’হাজার টাকার নোট দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন ব্যাঙ্ক কর্মীরাও। বহু গ্রাহকই খুচরো করানোয় সমস্যার কথা ভেবে নোট নিতে চাননি। এ দিনও বাঁকুড়ার ব্যাঙ্কগুলিতে নতুন পাঁচশো টাকার নোট আসেনি বলেই বিভিন্ন ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে। শহরের বেশির ভাগ এটিএমেও দু’হাজার টাকার নোট উঠছে। বাঁকুড়ার বাসিন্দা অনির্বাণ নন্দী মনে করেন, “অবিলম্বে নতুন পাঁচশো টাকার নোট বাজারে আনা দরকার।”

শহরের ব্যাঙ্কগুলিতে ভিড় কমলেও বিভিন্ন ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত টাকার জোগান এখনও নেই বলে জানাচ্ছেন ব্যাঙ্ক কর্মীরাই। ‘ব্যাঙ্ক এমপ্লইজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক তথা ইউনাটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এমপ্লইজ অ্যাসোসিয়েশনের পুরুলিয়া রিজিওন-এর সম্পাদক সাগর রায় বলেন, “শহরাঞ্চলের ব্যাঙ্কগুলিতে ভিড় অনেকটাই কমেছে। তবে ব্যাঙ্কগুলিতে পর্যাপ্ত টাকা এখনও আসেনি। নতুন পাঁচশো টাকার নোটও আসেনি। নতুন দু’হাজার টাকার নোট নিতে চাইছেন না বহু গ্রাহকই। ওই নোট দিতে গেলে ব্যাঙ্ক কর্মীদের সঙ্গে তর্কও জুড়ছেন অনেকে।” সমস্যা মেটাতে নতুন পাঁচশো টাকার নোট দ্রুত পাঠানোর এবং ব্যাঙ্কগুলিতে পর্যাপ্ত টাকা পাঠানোরও দাবি তুলছেন তিনিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crowd ATM Town-Village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE