Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩
বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্ক

অনাহারে ধুঁকছে কাঁটাতারে ঘেরা হরিণেরা

কাঁটাতারে ঘেরা জায়গায় খাবার ঘাসটুকুও এখন নেই। ছোলা, ভুসি খেয়েই দিন চলত ওদের। সেপ্টেম্বর মাস থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সামান্য সেই সরকারি বরাদ্দটুকুও। তারপর থেকেই দিন কাটছে অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে! অসুস্থও হয়ে পড়েছে কেউ কেউ।

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:১২
Share: Save:

কাঁটাতারে ঘেরা জায়গায় খাবার ঘাসটুকুও এখন নেই। ছোলা, ভুসি খেয়েই দিন চলত ওদের। সেপ্টেম্বর মাস থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সামান্য সেই সরকারি বরাদ্দটুকুও। তারপর থেকেই দিন কাটছে অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে! অসুস্থও হয়ে পড়েছে কেউ কেউ। বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্কের হরিণের খাবার বরাদ্দের কথা জানে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনও। তারপরেও হয়নি খাবারের সংস্থান।

Advertisement

বাঁকুড়ার রানীবাঁধ থানার পুড্ডি অঞ্চলের অধীনে বনপুকুরিয়া বনাঞ্চলে এই ডিয়ার পার্কটি রয়েছে। মুকুটমণিপুর জলাধার মাঝখানে থাকায় পুরুলিয়ার মানবাজার থেকে এখানে সহজে যাতায়াত করা যায়। যাঁরা মুকুটমণিপুর বেড়াতে আসেন, তাঁদের অনেকেই ডিয়ার পার্ক ঘুরে যান। ডিয়ার পার্কের পশ্চিমে তিন কিলোমিটার দূরে দোলাডাঙা পিকনিক স্পট রয়েছে।

এত দিন বন দফতর বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্কের হরিণদের দেখভাল করে আসছিল। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রানীবাঁধ রেঞ্জ অফিসের মাধ্যমে প্রতি মাসে হরিণদের জন্যে ২কুইন্ট্যাল ছোলা এবং ৪ কুইন্ট্যাল ভুসি এবং কয়েক কিলো নুন বরাদ্দ ছিল। দিনে দু’বার ঘণ্টা পিটিয়ে হরিণদের ডাকা হত। দফতরের কর্মীরা ঘেরা জায়গায় দুটি সিমেন্টের বেদিতে খাবার রাখতেন। প্রায় তিন মাস হল কর্মীরা আর ঘণ্টা পেটান না!

হঠাৎ খাবার বন্ধ হল কেন?

Advertisement

দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে ডিয়ার পার্কটির মালিকানার বদল ঘটে। বন দফতরের পরিবর্তে ‘জু’ কর্তৃপক্ষের হাতে মালিকানা চলে যায়। কিছু দিনের মধ্যে এই ডিয়ার পার্কের হরিণদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, এই মর্মে দফতরের বাঁকুড়া এবং রানীবাঁধ রেঞ্জ অফিসে চিঠিও আসে। রানীবাঁধের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার বাদলচন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘‘যে সংস্থা খাবার দিত, তাদের কয়েক লক্ষ টাকা বাকি থাকায় তারা আর হরিণের খাবার দিতে চাইছে না।’’

ডিয়ার পার্কের দেখভালের দায়িত্বে থাকা বন দফতরের কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, আগে হরিণদের খাবার, জল দেওয়ার কাজ ছাড়াও কোনও হরিণ অসুস্থ হলে চিকিৎসককে খবর দেওয়ার কাজ করতেন। এক বনকর্মী বলেন, ‘‘বাড়িতে গরু পুষলে তাকেও সময় মতো খড়-জল দেওয়া হয়। এখন অসহায় হরিণদের কষ্ট দেখা ছাড়া আর কাজ নেই। মাঝেমধ্যে জঙ্গলের ডাল-পাতা ভেঙে দিই। কিন্তু সে আর কতটুকু!’’

পুড্ডি গোড়াবাড়ি, অম্বিকানগর এলাকার বহু পরিবারের রুটি-রুজি ডিয়ার পার্কের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এঁদেরই অন্যতম কৃত্তিবাস সিং, চৈতন মাহাতো, নেপাল পাল। কেউ বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্কে ভ্যান-রিকশো চালিয়ে কেউবা বোট চালিয়ে রোজগার করেন। তাঁদের আশঙ্কা, ‘‘ডিয়ার পার্কের হরিণ চলে গেলে এখানে আর কেউ আসবে তো?’’

হরিণদের খাবার বন্ধ হওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি দক্ষিণ বাঁকুড়ার ডিএফও দেবাশিস প্রধান। তাঁর দাবি, ‘‘হরিণদের খাবার বন্ধ করা হয়নি।’’ তবে খাবার সরবরাহ বন্ধের কথা জানেন মানবাজার ১ এর বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস। বিষয়টি তিনি জেলাস্তরে জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হরিণদের খাবার বন্ধ হয়েছে বলে শুনেছি। কিছু হরিণ পুরুলিয়ায় রাখা সম্ভব কিনা আলোচনা চালাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.