Advertisement
E-Paper

লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি রোগী

ডেঙ্গির চোখ রাঙানি চলছেই। আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়াও।মশা-বাহিত এই দুই রোগের সাঁড়াশি আক্রমণে নাজেহাল বাঁকুড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪২
ধোঁয়া তো উড়ল। মশারা কি নির্বংশ হবে? প্রশ্ন পুরবাসীর। মঙ্গলবার কেঠারডাঙা এলাকায় অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

ধোঁয়া তো উড়ল। মশারা কি নির্বংশ হবে? প্রশ্ন পুরবাসীর। মঙ্গলবার কেঠারডাঙা এলাকায় অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

ডেঙ্গির চোখ রাঙানি চলছেই। আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়াও।

মশা-বাহিত এই দুই রোগের সাঁড়াশি আক্রমণে নাজেহাল বাঁকুড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর। গোটা রাজ্য-সহ এই জেলাতেও ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের মাথাব্যথা বাড়িয়েছে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া। স্বস্তির কথা একটাই, ডেঙ্গিতে জেলার অনেকে আক্রান্ত হলেও এ বছর এখনও কারও মৃত্যু ঘটেনি। কিন্তু, প্রাণ কাড়ছে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া!

জেলায় গত সপ্তাহে টানা ক’দিন নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টির ফলে মশার লার্ভা নষ্ট হবে বলেই আশা করেছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। কিন্তু তাঁদের আশার গুড়ে যে বালি পড়েছে, তার প্রমাণ মিলল মঙ্গলবারই। শুধুই এ দিনই জেলায় নতুন করে ১৩ জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে বলে জানানো হয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফে। যা শুনে উদ্বেগ কয়েক গুণ বেড়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। সোমবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যাটা ছিল ২১। এ দিনের রিপোর্ট সেই সংখ্যা এক ঝটকায় বেড়ে হল ৩৪। জেলার ছাতনা, ওন্দা, কোতুলপুর, সিমলাপাল, মেজিয়া, বড়জোড়া, তালড্যাংরা, বাঁকুড়া ২, হিড়বাঁধ, সোনামুখী এবং বাঁকুড়া পুরসভা এলাকায় ইতিমধ্যেই ডেঙ্গি রোগী ধরা পড়েছে। তবে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া ১৩ জন রোগী কোন কোন এলাকার বাসিন্দা, সেই রিপোর্ট এ দিন বাঁকুড়া মেডিক্যাল জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে দিতে পারেনি।

ডেঙ্গির পাশেই মারণ-থাবা বসিয়েছে ফেলসিফেরাম ম্যালেরিয়া। বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলায় গত জুন মাস পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ছ’জনের। গত দেড় মাসে মৃতের সংখ্যাটা আরও ছ’জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২। মৃতদের মধ্যে আট জন বাঁকুড়া স্বাস্থ্য জেলার বাসিন্দা। বাকি চার জন বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার। মৃত্যু আটকানো যাচ্ছে না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। উল্লেখ্য, জেলায় সরকারি ভাবে ডেঙ্গি নির্ণয়ের ব্যবস্থা একমাত্র বাঁকুড়া মেডিক্যালেই আছে। তাদের কাছে সেই ম্যাক অ্যালাইজা মেশিন রয়েছে। ফলে, গ্রামাঞ্চলে কারও শরীরে ডেঙ্গির উপসর্গ দেখা দিয়ে আক্রান্তের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে বাঁকুড়া মেডিক্যালেই পাঠাতে হয়। রিপোর্ট মিলতে বেশ কিছু দিন সময় লেগে যায়।

তবে ম্যালেরিয়া পরীক্ষার কিট দুই স্বাস্থ্য জেলার ব্লক ও গ্রামাঞ্চলের উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও মজুত রয়েছে। আশাকর্মীদের ওই কিট ব্যবহার করে ম্যালেরিয়া নির্ণয়ের পরীক্ষা করানো শেখানোও হয়েছে হাতেকলমে। জ্বর হলেই যাতে আশাকর্মীদের বাড়িতে ডেকে ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করানো হয়, সে বিষয়ে এলাকায় এলাকায় প্রচার চালানো হচ্ছে জোর কদমে। জ্বর নিয়ে কেউ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এলে ম্যালেরিয়া পরীক্ষা বাধ্যতামূলকও করেছে স্বাস্থ্য দফতর। এর পরেও জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ, ফ্যালসিপেরামে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে রোগ নির্ণয়ে দেরি হওয়াকেই দায়ী করছেন। ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় কোথাও গাফিলতি থেকে যাচ্ছে কিনা, তা জানতে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির গোটা চিকিৎসা পদ্ধতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস। তাঁর কথায়, “ম্যালেরিয়া পরীক্ষা এখন প্রত্যন্ত গ্রামেও হচ্ছে। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ওষুধও মজুত রয়েছে। তার পরেও কেন এই ঘটনা ঘটছে, আমরা তা খতিয়ে দেখছি।’’

স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গি রুখতে গ্রামাঞ্চলে নিয়মিত বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজ চলছে। বাড়িতে কোথাও জমা জল রয়েছে কি না, তা-ও কর্মীরা গিয়ে দেখছেন।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া দু’টি ফগিং মেশিন নিয়ে গত সপ্তাহ থেকেই বাঁকুড়া পুরসভা এলাকায় মশা রোধে ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। তবে দু’টি মেশিন নিয়ে পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডে এই অভিযান শেষ করতে বেশ কিছু দিন সময় লেগে যাবে না বুঝে সম্প্রতি আরও দু’টি ফগিং মেশিন জেলা স্বাস্থ্য দফতর পুরসভাকে দিয়েছে। মঙ্গলবার বাঁকুড়া শহরের ৪, ৭ ১৯ ও ২৪- নম্বর ওয়ার্ডে মশা নিধন অভিযান চালায় পুরসভা।

Dengue Malaria
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy