Advertisement
১৮ মে ২০২৪

পঞ্চায়েত হারাল তৃণমূল

শাসকদলের খাতায় নাম লেখাতে চারদিকে যখন হুড়োহুড়ি চলছে, সেখানে পুঞ্চার একটি পঞ্চায়েতে উলটপুরাণ ঘটল। এক বিক্ষুদ্ধ তৃণমূল সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে আগেই তলবিসভায় অনাস্থা পাশ করিয়ে ছিলেন বিরোধীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কেন্দা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:২৫
Share: Save:

শাসকদলের খাতায় নাম লেখাতে চারদিকে যখন হুড়োহুড়ি চলছে, সেখানে পুঞ্চার একটি পঞ্চায়েতে উলটপুরাণ ঘটল। এক বিক্ষুদ্ধ তৃণমূল সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে আগেই তলবিসভায় অনাস্থা পাশ করিয়ে ছিলেন বিরোধীরা। এ বার সেই পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচন হলেন সিপিএমের সদস্য। কেন্দা থানার চাঁদড়া-রাজনোয়াগড় পঞ্চায়েতের ঘটনা।

শুক্রবার প্রধান নির্বাচনের সময় তৃণমূলের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। অন্য কেউ এই পদের দাবিদার না থাকায় ৫-০ ভোটে সিপিএমের ভুদি বাউরি বিরোধী জোটের হয়ে প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন ।

চাঁদড়া-রাজনোয়াগড় পঞ্চায়েতে আসন সংখ্যা ৮। গত পঞ্চায়েত ভোটে এই পঞ্চায়েতে তৃণমূল ৪, সিপিএম ৩ ও বিজেপির একটি আসন ছিল। তৃণমূলের বন্দনা বাউরি প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তৃণমূল সদস্য অষ্টমী মাহালি প্রধানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছারিতার অভিযোগ এনে তৃণমূলের সংস্পর্শ ত্যাগ করেন। যদিও প্রধান ওই অভিযোগ মানতে চাননি। বিরোধী জোট গত ২২ মার্চ তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আসে। অনাস্থাপত্রে সিপিএমের ৩, বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের ১ ও বিজেপির ১ সদস্য সই করেন। নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অনাস্থা সংক্রান্ত তলবিসভায় প্রধান বন্দনা বাউরির বিরুদ্ধে সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোট পড়ে। প্রধান পদ থেকে তিনি অপসারিত হন।

কিন্তু নতুন প্রধান নির্বাচন ঘিরে জটিলতা তৈরি হয়। পুঞ্চার বাসিন্দা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিপত্তারণ শেখরবাবুর অভিযোগ, ‘‘পুঞ্চার বিডিও স্বেচ্ছাচারিতা ও পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করেছেন। এই পঞ্চায়েতে প্রধান গঠনে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা টালবাহানা চালিয়ে গিয়েছেন। প্রতিবাদে সম্প্রতি আমরা তাঁর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে স্মারকলিপি দিয়েছি এবং পথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছি। এত করেও শেষ পর্যন্ত পঞ্চায়েতটি তৃণমূল ধরে রাখতে পারল না।’’ সিপিএমের পুঞ্চা জোনাল সম্পাদক অনিল মাহাতোর অভিযোগ, ‘‘পুঞ্চা ব্লকেরই বাগদা পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে ছিল। শাসকদলের নেতারা ভয় এবং প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের দুই সদস্যকে তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করে। বিডিও দ্রুততার সঙ্গে বাগদা পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচন সেরে ফেললেও এতদিন ধরে চাঁদড়া-রাজনোয়াগড়ের প্রধান নির্বাচন ঝুলিয়ে রেখেছিলেন।’’

যদিও পুঞ্চার বিডিও অজয় সেনগুপ্তের পাল্টা দাবি, ‘‘ওঁরা আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছেন। পঞ্চায়েত আইন মেনেই আমি কাজ করেছি। চাঁদড়া-রাজনোয়াগড় পঞ্চায়েতে কিছু আইনি জটিলতা থাকার জন্য প্রধান নির্বাচনে বিলম্ব হয়েছে।’’

সিপিএম নেতা অনিলবাবু জানান, চাঁদড়া-রাজনোয়াগড় পঞ্চায়েতে তৃণমূল প্রধানকে সরাতে বিজেপি সদস্য ধুলু মাহাতো অনাস্থার পক্ষে ছিলেন। পঞ্চায়েত পরিচালনাতেও তিনি তাঁদের সঙ্গেই রয়েছেন। সবাইকে নিয়েই তাঁরা এলাকার উন্নয়ন করতে চান বলে জানিয়েছেন। পুঞ্চার বিজেপি ব্লক সভাপতি মনসুর আলি বলেন, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে কোনও লিখিত জোট হয়নি ঠিকই। তবে সাধারণ মানুষের চাহিদা মেনে এবং পরিস্থিতি বুঝে আমাদের সদস্য সিপিএমের ভুদি বাউরিকে প্রধান পদে সমর্থন জানিয়েছেন।’’ সিপিএম নেতৃত্ব জানিয়েছেন, কয়েকদিন পরে তৃণমূলের উপপ্রধান প্রশান্তি মান্ডিকে তাঁর পদ থেকে সরাতে অনাস্থা আনা হবে।

নতুন প্রধান সিপিএমের ভুদি বাউরি দাবি করেছেন, ‘‘এই পঞ্চায়েতে এতদিন গণতন্ত্র ছিল না। বন্দনাদেবী পঞ্চায়েত পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়েছেন। আমি সবার মতামত নিয়েই পঞ্চায়েত চালাব।’’ তবে তৃণমূলের পুঞ্চা ব্লক সভাপতি কৃষ্ণচন্দ্র মাহাতোর কটাক্ষ, ‘‘ওঁরা উন্নয়নের কথা বলে প্রধান বদল করেছেন। দেখা যাক কতটা উন্নয়ন ওঁরা করতে পারেন।’’ সিপিএম নেতৃত্বের প্রশ্ন— ‘‘এটা তৃণমূলের চ্যালেঞ্জ, না প্রশাসনিক অসহযোগিতার হুমকি?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat TMC CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE