Advertisement
০৬ মে ২০২৪

সারি সারি বালির ট্রাক আটকালেন বাসিন্দারা

অতিরিক্ত পরিমাণে বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগে বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের গেলিয়া পঞ্চায়েতের লোকপুর গ্রামে স্থানীয় বাসিন্দারা মঙ্গলবার রাতে বালি বোঝাই বহু ট্রাক আটকে দিলেন।

আটক: বাঁকুড়ার জয়পুরের লোকপুর গ্রামে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

আটক: বাঁকুড়ার জয়পুরের লোকপুর গ্রামে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০০:৪০
Share: Save:

অতিরিক্ত পরিমাণে বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগে বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের গেলিয়া পঞ্চায়েতের লোকপুর গ্রামে স্থানীয় বাসিন্দারা মঙ্গলবার রাতে বালি বোঝাই বহু ট্রাক আটকে দিলেন। রাতেই খবর পেয়ে জয়পুর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক শুভেন্দু বিশ্বাস ঘটনাস্থলে যান। গভীর রাত পর্যন্ত তাঁরা গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা করেন এবং গ্রামবাসীর অভিযোগ খতিয়ে দেখে অতিরিক্ত বালি বোঝাই ট্রাকগুলি থেকে স্পট ফাইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিষ্ণুপুর ভূমি এবং ভূমি সংস্কার দফতরের বিশেষ রাজস্ব আধিকারিক পার্থবাবু বলেন, ‘‘আমি গ্রামে গিয়ে চালকদের চালান পরীক্ষা করে দেখি ২২০ সিএফটি বালির উল্লেখ থাকলেও তারও বেশি বালি ট্রাকে তোলা হয়েছে।’’ তিনি জানান, জয়পুর ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিক আজ বৃহস্পতিবার ওই গ্রামে গিয়ে অতিরিক্ত বালি বোঝাই ট্রাক থেকে ২৫ হাজার টাকা করে ‘স্পট ফাইন’ আদায় করবেন। টাকা না দিলে গাড়ি ছাড়া হবে না।

বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় এলাকার একটি নির্মীয়মাণ শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে গ্রামবাসীরা জয়পুর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক এবং বিষ্ণুপুর মহাকুমা ভূমি রাজস্ব দফতরের বিশেষ রাজস্ব আধিকারিক পার্থ লোধকে সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। লোকপুর গ্রামের প্রবীণ গদাধর সাঁই, কারকবেড়িয়া গ্রামের নরোওম পাল, লোকপুর গ্রামের চন্দন চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘গত পাঁচ মাস আগে দ্বারকেশ্বর নদের গেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বালিখাদগুলি চালু হওয়ার পর থেকে দিনে-রাতে ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক অতিরিক্ত বালি নিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটছে। এক বছর আগে পাকা হওয়া সংকীর্ণ রাস্তা থেকে পিচ উঠে গিয়েছে। পাশাপাশি দু’টি গাড়ি যাওয়া দূরে থাক, সাইকেল কিংবা মোটরবাইক নিয়ে যেতে গেলেও বুক কাঁপে। মনে হয় এই বুঝি ট্রাকের চাকার তলায় চলে গেলাম।’’

এই রাস্তা দিয়ে আশপাশের পরাশিয়া, ডান্নে,কলাগ্রাম, কারকবেড়িয়া, লোকপুর গ্রামের হাজার আটেক মানুষ যাতায়াত করেন। লোকপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কার্তিকচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘স্কুলে আসা যাওয়ার সময় ছোট ছেলেমেয়েগুলোকে নিয়ে খুব চিন্তায় থাকি।’’ তাঁর মতে, প্রশাসনের স্কুল যাওয়া-আসার সময়ে বালি বোঝাই ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।’’

জয়পুরের বিডিও ধ্রুবপদ শান্ডিল্য বলেন, ‘‘আমি খবর পেয়েছি, অতিরিক্ত বালি নিয়ে ট্রাকগুলি ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে জয়পুর ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিককে সেখানে পাঠাই। আমি দ্রুত ওই রাস্তা সংস্কারের ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

গেলিয়া পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা তথা জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রবিয়াল মিদ্যা দাবি করেন, ‘‘ওই রাস্তা নিয়মিত সারানো হয়। যাতে ধুলো না ওড়ে, সে জন্য রাস্তায় জল ছড়ানোও হয়।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘ওই এলাকার লোকজন নানা কারণ দেখিয়ে রাস্তা থেকে প্রায়ই চাঁদা আদায় করত। পুলিশ তা বন্ধ করে দেওয়ায়, সেই আক্রোশেই এই সব করছে।’’ তাঁর আশ্বাস, ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই বোল্ডার ফেলা হয়েছে। ওই রাস্তাটি সারানো হবে।

অভিযোগ মানতে চাননি বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, সরকারের বালি তুলতে দিয়ে নিজের রাজস্ব আদায় বাড়ুক তা তাঁরা চান। কিন্তু তার আগে রাস্তার পরিকাঠামো হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dwellers Sand truck
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE