Advertisement
১১ মে ২০২৪
অভিযোগ বিষ্ণুপুরের শিল্পতালুকে, মৃতের নামেও নানা নালিশ

কারখানায় ঢুকে রক্ষীর গুলিতে মৃত্যু

কারখানা চত্বরেই এক যুবককে গুলি করে মারার অভিযোগ উঠল নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে। বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলে রবিবার গভীর রাতের এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। জখম যুবককে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে যান কারখানার রক্ষীরাই।

মর্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মৃত শেখ সাজ্জাদের দেহ। (ডান দিকে), ওই কারখানা চত্বরে তদন্তে পুলিশ। সোমবারের নিজস্ব চিত্র।

মর্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মৃত শেখ সাজ্জাদের দেহ। (ডান দিকে), ওই কারখানা চত্বরে তদন্তে পুলিশ। সোমবারের নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০৭:৩২
Share: Save:

কারখানা চত্বরেই এক যুবককে গুলি করে মারার অভিযোগ উঠল নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে। বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলে রবিবার গভীর রাতের এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। জখম যুবককে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে যান কারখানার রক্ষীরাই। কিন্তু, চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করার পরেই বেগতিক বুঝে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখ এড়িয়ে দেহ ফেলে হাসপাতাল থেকে ওই নিরাপত্তারক্ষীরা পালিয়ে যান বলে অভিযোগ।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবক শেখ সাজ্জাদ (২০) দ্বারিকা শিল্পাঞ্চল সংলগ্ন শ্যামসুন্দরপুর এলাকার বাসিন্দা। তাঁর পরিবার ওই নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে গুলি করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে। সাজ্জাদের দেহে থুতনি থেকে বুক অবধি অনেকগুলি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ছররা গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, সাজ্জাদ-সহ কয়েক জন দুষ্কৃতী রবিবার রাতে কারখানায় চুরির উদ্দেশ্যে ঢুকেছিল। পুলিশেরও দাবি, এর আগে সাজ্জাদের বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

কী হয়েছিল রাতে?

দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলের যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি ফেরো অ্যালয় কারখানার একটি বন্ধ ইউনিট। কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা জনাতে পেরেছেন, রাতে সাজ্জাদ-সহ এক দল লোকজন চুরির উদ্দেশ্যে ওই বন্ধ ইউনিটে ঢুকে পড়ে। নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও বিফল হয়। তার জেরেই এক জন বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী ছররা বন্দুক থেকে গুলি ছোড়েন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সেই গুলিই সাজ্জাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ছেদ করে দেয়। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ে সাজ্জাদ। তার বাকি সঙ্গীরা চম্পট দেয়। এর পর নিরাপত্তারক্ষীরাই সাজ্জাদকে কারখানার অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তা জানতে পেরেই সাজ্জাদের দেহ হাসপাতালে ফেলে পালান রক্ষীরা।

সোমবার সকালেই এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই হাসপাতালে গিয়ে শ্যামসুন্দরপুরের লোকজন সাজ্জাদের দেহ শনাক্ত করেন। সাজ্জাদের স্ত্রী রানু বিবি বিষ্ণুপুর থানায় ওই কারখানার নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার তদন্তে এ দিন কারখানায় পুলিশ বাহিনী নিয়ে তদন্তে আসেন ডিএসপি (প্রশাসন) আনন্দ সরকার। এলাকাবাসীরা প্রশ্ন তোলেন, নিরাপত্তারক্ষীর কাছে বন্দুক থাকে ভয় দেখানোর জন্য। এ ভাবে কারও উপর গুলি চালানোর অধিকার কারও রয়েছে কিনা।

গত মঙ্গলবারই দুর্গাপুর শিল্পতালুকের একটি ইস্পাত কারখানায় রাতে দুষ্কৃতীর দল ঢুকে পড়েছিল। তাদের রুখতে প্রথমে শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন কারখানার রক্ষীরা। দুষ্কৃতীরা তাতেও ভয় না পাওয়ায় রক্ষীরা মাটি তাক করে গুলি ছোড়েন। সেই গুলিতে এক দুষ্কৃতী জখম হলে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এই ঘটনার সূত্র টেনে মৃত সাজ্জাদের দাদা মনি শেখের ক্ষোভ, “যদি মেনেও নিই যে আমার ভাই চুরি করতে গিয়েছিল, তা হলে তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারত রক্ষীরা। এ ভাবে গুলি করে মেরে ফেলে ভাইয়ের পরিবারটাকেই পথে বসিয়ে দেওয়া হল!’’ সাজ্জাদের স্ত্রী রানু বিবি বলেন, “আমার স্বামীকে অন্যায় ভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ভাবে কারও উপর গুলি চালানো যায় না। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।’’

ওই কারখানার পার্সোনাল ম্যানেজার বিশ্বনাথ দে জানিয়েছেন, ঘটনার পরে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয়নি। ফলে কোন পরিস্থিতিতে গুলি চালানো হয়েছে, তা তাঁরা জানতে পারছেন না। পুলিশ জানিয়েছে, ওই নিরাপত্তাকর্মীরা ধানবাদের একটি এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছিলেন। ঘটনার পরে পলাতক রক্ষীরা এখনও পর্যন্ত এজেন্সির সঙ্গেও যোগাযোগ করেননি। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ‘সিঙ্গেল ব্যারেল গান’ থেকেই সাজ্জাদের উপর গুলি ছোড়া হয়েছে। এবং একাধিক রক্ষীর ছররা চালিয়েছিলেন। না হলে মৃতদেহে এতগুলি ক্ষতচিহ্ন হত না। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “বিশেষ শর্তে জেলাশাসকের কাছ থেকে নিজের কাছে বন্দুক রাখার অনুমতি মেলে। তবে আত্মরক্ষার স্বার্থ ছাড়া গুলি ছোড়া যায় না।’’ কিন্তু, রবিবার রাতে কারখানার নিরাপত্তারক্ষীদের উপরে দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছিল কিনা, তা নিয়ে এখনও পুলিশ ধোঁয়াশায়। ওই পুলিশ কর্তা বলেন, “নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা না হওয়া পর্যন্ত ঠিক কোন পরিস্থিতিতে গুলি চালানো হয়েছে, তা বলা যাচ্ছে না। আমরা ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে গুলির খোল বা কিছু পাইনি।’’

সম্প্রতি একাধিক কারখানায় চুরি-ডাকাতির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে। এই সব ঘটনা এড়াতে দুর্গাপুরের শিল্পতালুকে রাতে পুলিশি টহলের দাবিও তুলেছেন শিল্পপতিরা। বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলেও গত কয়েক বছরে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন কারখানায়। জেলার বড়জোড়া, মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি শিল্পাঞ্চলের বেশ কিছু বন্ধ কারখানার যন্ত্রপাতি ও দামি জিনিসপত্র প্রকাশ্য দিবালোকেই চোরের দল লুঠ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এর পর দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলের এই ঘটনাও বিষ্ণুপুর শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলির নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিল।

এখানকার শিল্পপতিদের একাংশের ক্ষোভ, “প্রায়ই দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার ভিতর থেকে কপার, স্ল্যাব, মেটাল, লোহা-সহ কারখানার দামি যন্ত্রাংশ চুরি যাচ্ছে। পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।’’ বিষ্ণুপুর থানার এক পুলিশ আধিকারিক অবশ্য বলেন, “রাতে পুলিশের মোবাইল ভ্যান এলাকায় টহল দেয়। কারখানাগুলির উপরেও নজর রাখা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Factory Security guard Youth Dead Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE