Advertisement
২১ মে ২০২৪
Mentally Deranged

বছরখানেক হাত-পা বাঁধা শিকলে, চিকিৎসার আর্জি

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিভিন্ন গ্রামের বাজারে কখনও হাঁটু মুড়ে বসে থাকতে দেখা যায় সুনীলকে। কখনও আবার রাস্তার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েন। কেউ চায়ের কাপ এগিয়ে দিলে খান।

রাস্তার ধারে বসে সুনীল টুডু।

রাস্তার ধারে বসে সুনীল টুডু। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ছাতনা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:১৭
Share: Save:

দু’হাত ও দু’পা বাঁধা শিকলে। অনেক দিন ধরে এ ভাবে বাঁধা থাকায়, সেখানে ঘা হয়ে গিয়েছে। বাঁকুড়ার ছাতনার কমলপুর থেকে কুঁকড়িবাসা, বহড়া থেকে ভালুকগড়ার রাস্তায় মুঠো করা দু’হাত দিয়ে লাঠিতে ভর করে হেঁটে বেড়াতে দেখা যায় বছর চল্লিশের সুনীল টুডুকে। পরিবার ও পড়শিদের দাবি, মানসিক ভারসাম্যের সমস্যা রয়েছে তাঁর। উত্তেজিত হয়ে কারও উপরে চড়াও হওয়া থেকে আটকাতেই এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।

ছাতনার চিনাবাড়ির বাসিন্দা সুনীলের মা বুধনি টুডু জানান, ছোট থেকে সুস্থ-স্বাভাবিক ছিলেন সুনীল। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। তার পরে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন। বছর আটেক আগে তাঁর মানসিক সমস্যা শুরু হয়, দাবি বুধনির। তাঁর কথায়, “এক বার এক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পরেই ছেলের ব্যবহারে পরিবর্তন দেখি। রাঁচীতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলাম। কিন্তু টাকার অভাবে সেই চিকিৎসা চালানো যায়নি।’’ হাত-পায়ে শিকল দেওয়া নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘বছরখানেক আগে গ্রামের একটি ছেলেকে মারধর করেছিল। সে নিয়ে এলাকার লোকজনের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলাম। বাধ্য হয়েই হাত-পায়ে শিকল বাঁধতে হয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘ছেলেকে এ ভাবে দেখতে আমাদেরও ভাল লাগেনা। কিন্তু আমাদের সামর্থ্য নেই ভাল জায়গায় চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলার।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিভিন্ন গ্রামের বাজারে কখনও হাঁটু মুড়ে বসে থাকতে দেখা যায় সুনীলকে। কখনও আবার রাস্তার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েন। কেউ চায়ের কাপ এগিয়ে দিলে খান। বুধনি জানান, সুনীল বেশির ভাগ দিনই বাড়ির বাইরে রাত কাটান। কখনও-কখনও বাড়ি ফেরেন। বেশ কিছু দিন তাঁর দেখা না মিললে বাড়ির লোকজন খোঁজ শুরু করেন। তিনি বলেন, “প্রশাসন ছেলের চিকিৎসায় সাহায্য করলে হয়তো আবার ও সুস্থ হয়ে যাবে, আর বেঁধে রাখতে হবে না।’’

পড়শি অনিল মুর্মু বলেন, “হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সুনীলকে ঘুরে বেড়াতে দেখে কষ্ট হয়। কী ভাবে এই পরিস্থিতিতে এত দিন রয়েছে, অবাক হই!’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমলপুরের এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা ওঁকে বিশেষ উত্তেজিত হয়ে উঠতে দেখিনি কখনও। মাঝেমাঝেই বাজারে বসে থেকে নীরবে কাঁদতে দেখেছি। খুবই কষ্টদায়ক।’’

চিনাবাড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান চণ্ডীদাস রক্ষিত বলেন, ‘‘পরিবারটির তরফে সাহায্যের আবেদন নিয়ে কখনও যোগাযোগ করা হয়নি। ওঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করব।’’ ছাতনার বিডিও শিশুতোষ প্রামাণিক বলেন, ‘‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। বিশদে খোঁজ নিচ্ছি। পরিবার সাহায্য চাইলে, প্রশাসনের তরফে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mentally Deranged
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE