Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সংক্রান্তির আগে ধান কেনার দাবি

কাছাকাছি সরকারি দামে ধান কেনার কেন্দ্র নেই। ফলে, প্রত্যন্ত এলাকার চাষিরা সেই কম দামেই চাষিদের কাছে ধান বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন— এমনই অভিযোগ তুলে অবিলম্বে বাঁকুড়া জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় ধান কেনার শিবির করার দাবি তুলেছে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন।

ফসল: চলছে ধান ঝাড়াই। বাঁকুড়ার তালড্যাংরায় শনিবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

ফসল: চলছে ধান ঝাড়াই। বাঁকুড়ার তালড্যাংরায় শনিবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:১৬
Share: Save:

কাছাকাছি সরকারি দামে ধান কেনার কেন্দ্র নেই। ফলে, প্রত্যন্ত এলাকার চাষিরা সেই কম দামেই চাষিদের কাছে ধান বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন— এমনই অভিযোগ তুলে অবিলম্বে বাঁকুড়া জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় ধান কেনার শিবির করার দাবি তুলেছে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। তাঁদের দাবি, পৌষ পার্বনের আগেই চাষিদের ধান কিনতে হবে। তা না হলে পার্বনের খরচ জোগাড় করতে গিয়ে চাষিদের অভাবি ধান বিক্রি বন্ধ করা যাবে না। আর সেই সুযোগে ফোড়েরাই লাভবান হবেন। যদিও খাদ্য দফতরের দাবি, জেলাজুড়েই ধান কেনা চলছে।

এসইউসি-র কৃষক সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া কিষান ক্ষেত মজদুর সংগঠন’ পৌষ পার্বনের আগেই সমস্ত ধান কেনার দাবিতে শনিবার বাঁকুড়ার মাচানতলায় সভা করল। সভা শেষে দুপুর ১টা থেকে শহরের সতীঘাট এলাকায় বাইপাস সাময়িক ভাবে অবরোধও করেন সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা।

এই জেলায় এ বার এমনিতেই বৃষ্টির অভাবে ধান উৎপাদন কিছুটা মার খেয়েছে। তার উপরে ঠিক মতো দামে ধান বিক্রি না করা গেলে চাষিদের ক্ষতির বোঝা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন কৃষি আধিকারিকেরা। এই পরিস্থিতিতে সরকার নির্ধারিত দামে ধান কিনতে না ঝাঁপালে ফোড়েদের কাছেই তাঁদের ধান বিক্রি করতে হবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে কৃষকদের মধ্যে।

অল ইন্ডিয়া কিষান ক্ষেত মজদুর সংগঠনের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি তথা রাজ্য কমিটির সদস্য দিলীপ কুণ্ডু জানান, পৌষ পার্বনের আগে জেলায় সরকারি ভাবে ধান কেনার প্রক্রিয়া শেষ করা, ফোড়ে-রাজ বন্ধ করতে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ধান কেনার শিবির করা, ধান বিক্রির টাকা চাষিদের দ্রুত প্রদানের ব্যবস্থা, সরকারি শিবিরে ধান বিক্রি করতে যাওয়া চাষিদের ধান যথাযথ ভাবে কেনা-সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে এ দিন আন্দোলনে নামেন তাঁরা।

ধান বিক্রির স্থায়ী কেন্দ্র

• বাঁকুড়ায় কিসান মান্ডি লাগোয়া গোডাউন
• বাঁকুড়া ২ ব্লকের কিসান মান্ডি
• শালতোড়া কিসান মান্ডি
• ছাতনা কিসান মান্ডি
• ছাতনার ভগবানপুরে
• ওন্দা সব্জি মার্কেট
• ওন্দা কিসান মান্ডি (মাজডিহা)
• বড়জোড়ার কর্মতীর্থ ভবন
• পাত্রসায়র কিসান মান্ডি
• ইন্দাস কিসান মান্ডি
• বিষ্ণুপুর কিসান মান্ডি
• জয়পুর কিসান মান্ডি
• কোতুলপুর কিসান মান্ডি
• সোনামুখীর পিয়ারবেড়া গ্রামীণ হাট
• রায়পুর পঞ্চায়েত অফিস
• সারেঙ্গা ব্লক অফিস
• সিমলাপাল আরএমসি বিল্ডিং
• সিমলাপালের বিক্রমপুর
• তালড্যাংরা মার্কেট কমপ্লেক্স

দিলীপবাবু বলেন, “গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে পৌষ পার্বন একটা বড় উৎসব। এই সময় বিভিন্ন বাড়িতে আত্মীয়েরা আসেন। অনেকেই সন্তানদের জন্য নতুন জামাকাপড় কেনেন। ফলে, তাঁদের হাতে টাকার দরকার পড়ে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি ভাবে ধান বিক্রির সুযোগ না পেলে টাকার জন্য বাধ্য হয়ে চাষিদের ফোড়েদের কাছে কম দামেই ধান বিক্রি করতে হবে।’’

তাঁর অভিযোগ, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গ্রামে ফোড়েরা চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনতে নেমে পড়েছেন। সরকারি ভাবে ধানের সহায়ক মূল্য ক্যুইন্টাল পিছু যেখানে ১৭৭০ টাকা, সেখানে ফোড়েরা ১২০০ টাকা ক্যুইন্টাল দরে ধান কিনছেন। সরকারি ভাবে বিক্রির সুযোগ মিলছে না বলে চাষিরা বাধ্য হচ্ছেন অভাবি বিক্রি করতে।

দিলীপবাবুর অভিযোগ, ‘‘পাশের পূর্ব বর্ধমান ও হুগলি জেলায় সরকারি ভাবে ধান কেনার বহু শিবির হচ্ছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি। কিন্তু বাঁকুড়া জেলায় এখনও সে ভাবে ধান কেনার শিবির হচ্ছে কোথায়? এ বছর একে ধান চাষ ভাল হয়নি। যেটুকু ফসল হয়েছে, চাষিরা যাতে তার ন্যায্য মূল্য পান, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।”

সিপিএমের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কৃষকসভার বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক যদুনাথ রায় দাবি করেন, ‘‘প্রশাসন কীসের ভিত্তিতে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে বলে দাবি করছে, বুঝতে পারছি না। আমি বড়জোড়ার বাসিন্দা। এখানে কোথাও ধান কেনা হচ্ছে বলে দেখতে পাচ্ছি না। জেলার অন্য এলাকা থেকেও চাষিদের কাছে একই কথা শুনছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আদৌ চাষিদের কাছ থেকে, নাকি ফড়েদের থেকে ধান কেনা হচ্ছে, প্রশাসন সে তথ্য প্রকাশ করুক।’’

যদিও কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ মানতে নারাজ বাঁকুড়া জেলা খাদ্য দফতর। ওই দফতরের দাবি, এ বার জেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্র রয়েছে ২ লক্ষ ২০ হাজার টন। গত নভেম্বর মাস থেকে জেলায় ধাপে ধাপে সরকারি ভাবে ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গোটা জেলা জুড়েই। শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় ৪৫ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে। ডিসেম্বরে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭ হাজার টন। ইতিমধ্যেই তা ছাপিয়ে গিয়েছে। জেলায় মোট ১৯টি স্থায়ী ধান্য ক্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া ৯০টি সমবায় সমিতি ও ৫৮টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ধান কিনতে নেমে পড়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ামক আবিরকুমার বালির দাবি, “লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় জেলায় ধান কেনার গতি অনেকটাই বেশি। সব ব্লকেই সরকারি ভাবে ধান কেনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে ধান কেনার গতি আরও কী ভাবে বাড়ানো যায়। তা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা চালাচ্ছি। শীঘ্রই জেলা স্তরে এ নিয়ে একটি বৈঠকও ডাকা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ধানকেনাকে কেন্দ্র করে কোথাও কোনও অভিযোগ ওঠেনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Makar Sankranti Paddy Farmer's Association
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE