Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দলের শাস্তির খাঁড়ায় বিজেপির পাঁচ নেতা

ঝগড়া থামাতে দু’-দু’বার জেলা সভাপতির পদে রদবদল করা হয়েছে। কিন্তু বিজেপি-র সংসারে শান্তি ফেরেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০০:১৩
Share: Save:

দলবিরোধী কাজের দায়ে পুরুলিয়ার এক বর্ষীয়ান নেতাকে বহিষ্কার করল বিজেপি। সাসপেন্ড করা হয়েছে দলের কৃষক সংগঠনের জেলা সভাপতি-সহ চার নেতাকেও।

মঙ্গলবার বিকেলে দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু পুরুলিয়া জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের পর্যবেক্ষক গোপাল সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পরে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী জানান, দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতা অম্বিকা মিশ্রকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাসপেন্ড করা হয়েছে কিষাণ মোর্চার জেলা সভাপতি পরেশ রজক, সব্যসাচী আচার্য, মৃত্যুঞ্জয় পাণ্ডে এবং জগদীশ কুমারকে। কিন্তু এ সব করেও দলের কোন্দল থামবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে তৃণমূল স্তরের কর্মীদের মধ্যে।

বস্তুত গত এক বছর ধরে পুরুলিয়া জেলা বিজেপির অন্দরে কোন্দলের খবর উঠে আসছে। ঝগড়া থামাতে দু’-দু’বার জেলা সভাপতির পদে রদবদল করা হয়েছে। কিন্তু বিজেপি-র সংসারে শান্তি ফেরেনি।

বিভিন্ন সময়ে রাজ্য নেতৃত্বে জেলায় বৈঠক করতে এসে সেই অসন্তোষের আঁচ পেয়েছেন। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও সামলাতে পারেননি। উল্টে দলের তৎকালীন জেলা সভাপতি বিকাশ মাহাতোর বিরুদ্ধে দলের কিছু কর্মীই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাস্তায় নামেন, দলের জেলা কার্যালয়ের দেওয়ালে পোস্টারও সাঁটান। এরপরেই রাজ্য নেতৃত্ব বিদ্যাসাগরবাবুকে জেলা সভাপতির পদে বসান।

কিন্তু কোন্দল যে বিদ্যমান, তার প্রমাণ মেলে গত ১৭ অক্টোবরের জেলা কমিটির বৈঠকে। সে দিন বৈঠকের মধ্যে রাজ্য নেতৃত্বের সামনেই কিছু কর্মী আগে তাঁদের বক্তব্য শুনতে হবে বলে দাবি করে হইচই শুরু করে দেন। বৈঠকের মাঝে স্লোগান ওঠে, চেয়ার ছোড়াছুড়ি থেকে হাতাহাতিও করা হয় বলে অভিযোগ।

এর এক সপ্তাহের মধ্যে নেতৃত্ব সাসপেন্ড ও বহিষ্কার করে কড়া মনোভাব দেখাতে চাইল। দলের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ১৭ অক্টোবরের বিক্ষোভের পিছনে বর্তমান জেলা সভাপতির বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বলে পরিচিত এই নেতাদের মদত ছিল। তবে শাস্তি পাওয়া নেতাদের দাবি, কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সে দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।

ওই নেতাদের অবশ্য আগেই দলে কোণঠাসা করার কাজ শুরু হয়েছিল। বিদ্যাসাগরবাবু জেলা সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরেই যে জেলা কমিটি তৈরি করা হয়, সেখানে ওই পাঁচজনের মধ্যে চার নেতাকে ঠাঁই দেওয়া হয়নি। জেলা কমিটিতে ছিলেন শুধু পরেশবাবু, কিন্তু তাঁর সঙ্গে সম্প্রতি জেলা সভাপতির ব্যবধান তৈরি হয় জেলা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে। যার পরিণতি ‘সাসপেনশন’।

দলের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক অম্বিকা মিশ্র দীর্ঘদিন রাজ্য কমিটিরও সদস্য ছিলেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘শুনেছি দল থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু কারণ কী জানি না। বহিষ্কারের আগে আমাকে শো-কজও করা হয়নি!’’ বছর চারেক আগে তাঁকে শো-কজ করা হয়েছিল। তিনি জানান, সে বার অবশ্য জবাব দিয়েছিলেন।

পরেশবাবুরও দাবি, সাসপেন্ড করার চিঠি তিনিও পাননি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘দল এখন কিছু নেতার মর্জিতে চলছে। প্রশ্ন করলেই হয় সাসপেন্ড, নয় তো বহিষ্কার জুটবে। কিষাণ মোর্চার জেলা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু জেলা সভাপতি আপত্তি করেছিলেন। সেটাই কি দল বিরোধী কাজের মধ্যে পড়ে?’’

তবে এই ঘটনায় জেলা বিজেপিতে ভাঙনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সাসপেন্ড করা নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা প্রকৃত বিজেপি কর্মীদের নিয়ে সংগঠন গড়ে প্রমাণ করে দেবেন, যে তাঁরাই দলের মূল স্রোত। দলের জেলা প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সব্যসাচী আচার্যের দাবি, ‘‘প্রতি ব্লকে দলের নিচুতলার অনেক কর্মীই বর্তমান নেতৃত্বের কাজকর্মে অসন্তুষ্ট। কিন্তু ভয়ে তাঁরা মুখ খুলতে পারছেন না। আমরা তাঁদের নিয়ে প্রকৃত সংগঠন গড়ে প্রমাণ করে দেব যে যাঁরা দল চালাচ্ছেন তাঁরা কেউ নন, কর্মীরাই দলের প্রকৃত শক্তি।’’

জেলা সভাপতি অবশ্য এই নেতাদের অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘বৈঠকের ওই গোলমাল রাজ্য নেতৃত্ব প্রত্যক্ষ করেছেন। এ দিন যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার রাজ্য নেতৃত্বই নিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Leaders Suspended
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE