জেলা খাদ্য দফতর থেকে ব্লকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কার্ড। —নিজস্ব চিত্র
দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলায় আগেই চালু হয়েছে। এ বার পুরুলিয়ায় চালু হতে চলেছে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প। জঙ্গলমহল জুড়ে বিশেষ বিপিএল কার্ড চালু থাকায় এই এলাকাকে আপাতত এই প্রকল্প থেকে বাদ রাখা হয়েছে। জঙ্গলমহলের আটটি ব্লক বাদে জেলার বাকি ১২টি ব্লক ও তিনটি পুর এলাকায় প্রকল্প চালু হচ্ছে। তবে কবে থেকে এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত মানুষ খাদ্য পাবেন, সেই মর্মে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত বছরের অগস্ট মাসে এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত হওয়ার জন্য জেলার বাসিন্দাদের কাছে ফর্ম পূরণের আবেদন রেখেছিল প্রশাসন। সেই ফর্মের ভিত্তিতে জেলায় কার্ড পৌঁছে গিয়েছে। চলতি সপ্তাহ থেকেই তাঁদের হাতে কার্ড তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করছে প্রশাসন। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী প্রকল্পের কার্ডগুলি চলতি মাসের মধ্যেই প্রাপকদের হাতে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
পুরুলিয়ায় কী ভাবে প্রকল্প চালু হবে তা নিয়ে মঙ্গলবার জেলা পরিষদের প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠক হয়। জেলাশাসক, খাদ্য দফতরের পদস্থ আধিকারিক থেকে শুরু করে যে ১২টি ব্লকে এই প্রকল্প চালু হচ্ছে, সেখানকার বিডিও, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছাড়াও প্রশাসনিকের কর্তারা ছিলেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় প্রায় ৩০ লক্ষ বাসিন্দা রয়েছেন। এর মধ্যে ২৬ লক্ষের কিছু বেশি বাসিন্দা এই প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। এঁদের ক্ষেত্রে পুরনো রেশন কার্ড বাতিল হয়ে যাবে। জেলাশাসক জানান, বাকি তিন লক্ষ বাসিন্দা যাঁদের এই তালিকায় নাম নেই তাঁরা ৩ নম্বর ফর্ম পূরণ করে ফের প্রকল্পে নাম তোলার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের বর্তমান যে রেশন কার্ড রয়েছে, সেই কার্ডের উপরে একটি শিলমোহর দিয়ে দেওয়া হবে। আবেদনকারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি শিলমোহর লাগানো পুরনো রেশন কার্ড দিয়েই পণ্য পাবেন। আর আবেদনকারী যদি এই প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার যোগ্য হন, তা হলে তাঁর নাম তালিকায় উঠবে না। তালিকায় নাম না থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি খাদ্যপণ্য পাবেন না। তবে কেরোসিন পাবেন।
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, যাঁরা ফর্ম পূরণ করেছিলেন তাঁরা আরকেএসওয়াই (রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা) ১, আরকেএসওয়াই ১ ও এনএফএস— এই তিনটি শ্রেণির একটিতে শ্রেণিভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু, কোন শ্রেণিতে, তা জানা যাবে খাদ্য দফতরের ওয়েবসাইট www.wbpds.gov.in থেকে। শুধু তাই নয়, সিরিয়াল নম্বর কত, যেখান থেকে তিনি রেশন পাবেন সেই দোকান কোথায়, সংশ্লিষ্ট ডিলারের নাম সবই থাকবে।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আরকেএসওয়াই ১ শ্রেণিভুক্তেরা প্রতি মাসে মাথাপিছু ২ কেজি করে চাল ও ৩ কেজি করে গম পাবেন ২ টাকা করে কেজি দরে। আরকেএসওয়াই ২ শ্রেণিভুক্তেরা প্রতি মাসে মাথাপিছু ১ কেজি করে চাল ১৩ টাকা কেজি দরে এবং ১ কেজি করে গম ৯ টাকা কেজি দরে পাবেন। আর এনএফএসের আওতায় অন্ত্যোদয় কার্ডের প্রাপকেরা প্রতি মাসে পরিবার পিছু ১৫ কেজি করে চাল, কেজি প্রতি ২ টাকা দরে এবং ২০ কেজি গম কেজি প্রতি ২ টাকা দরে পাবেন।
এই শ্রেণিভুক্ত পিপিএইচ (প্রায়োরিটি অফ হাউসহোল্ড) কার্ডের প্রাপকেরা প্রতি মাসে মাথাপিছু ২ কেজি করে চাল ২ টাকা করে কেজি দরে এবং ৩ কেজি করে গম কেজি প্রতি ২ টাকা করে কেজি দরে পাবেন। এর পাশাপাশি এসপিএইচএইচ (স্পেশ্যাল প্রায়োরিটি অফ হাউসহোল্ড) কার্ডের গ্রাহকেরা মাসে মাথাপিছু ২ কেজি করে চাল কেজি প্রতি ২ টাকা করে দরে, ৩ কেজি করে গম কেজি প্রতি ২ টাকা করে দরে এবং ৫০০ গ্রাম করে চিনি কেজি প্রতি ১৩.৫০ টাকা দরে পাবেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বিভিন্ন জেলায় এই প্রকল্প চালু হলেও নানা কারণে পুরুলিয়ায় এই প্রকল্প চালু হয়নি। গত বছর বৃষ্টি না হওয়ায় গোটা জেলা খরার কবলে পড়েছিল। গত ডিসেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী বান্দোয়ানের প্রশাসনিক সভা থেকে জঙ্গলমহলের বাইরে থাকা ব্লকগুলির মানুষের জন্যে ২ টাকা কেজি করে চাল দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেন। জঙ্গলমহলের বাইরে থাকা ব্লকগুলির দারিদ্রসীমার উপরে থাকা বাসিন্দারাও এই প্রকল্পের আওতায় চলে
আসায় মানুষজন এখনও এই প্রকল্পের থেকে সুবিধা পাচ্ছেন।
প্রতি সপ্তাহে মাথাপিছু ১ কেজি করে চাল ২ টাকা দরে মিলছে। এই ব্যবস্থা চালু থাকায় এবং বিধানসভা ভোট সামনে এসে পড়ায় প্রকল্প চালুর বিষয়টি আটকে ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy