Advertisement
০৪ মে ২০২৪

‘অশোকদা’র পুরুলিয়ার স্মৃতি ধরে রাখবে ফব

বাঘমুণ্ডির সুইসা নেতাজি সুভাষ আশ্রমের মাটির নীচে শুয়ে রয়েছেন তিনি। ফরওয়ার্ড ব্লকের সেই প্রবাদপ্রতীম নেতা প্রয়াত অশোক ঘোষের স্মৃতি সংরক্ষণে এ বার উদ্যোগী হল তাঁর দল।

বিদায়:  সুইসার নেতাজি সুভাষ আশ্রমে সে দিন। ফাইল চিত্র

বিদায়: সুইসার নেতাজি সুভাষ আশ্রমে সে দিন। ফাইল চিত্র

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০০:৫৬
Share: Save:

বাঘমুণ্ডির সুইসা নেতাজি সুভাষ আশ্রমের মাটির নীচে শুয়ে রয়েছেন তিনি। ফরওয়ার্ড ব্লকের সেই প্রবাদপ্রতীম নেতা প্রয়াত অশোক ঘোষের স্মৃতি সংরক্ষণে এ বার উদ্যোগী হল তাঁর দল।

গত বছরের ৩ মার্চ অশোকবাবু মারা যাওয়ার পরে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী, তাঁর হাতে গড়ে ওঠা সুইসার এই আশ্রমে তাঁর দেহ সমাহিত করা হয়। এ বার সেই নেতার প্রয়াণ দিবসে আশ্রম চত্বরে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। সেই উপলক্ষে অশোকবাবুর সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠা এই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা তাঁর স্মৃতিও ধরে রাখার কাজ শুরু হল।

দলের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুরুলিয়া জুড়ে অশোকদার অনেক আন্দোলনের স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে। অনেক মানুষ অশোকদার সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাঁর নানা চিঠিপত্র, ছবি, আন্দোলন কর্মসূচির নথি এই এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছে রয়েছে। সেই সমস্ত নথি আমরা এক জায়গায় এনে সংগ্রহে রাখতে চাই।’’ অশোক ঘোষ স্মৃতিরক্ষা কমিটির পক্ষে অসীম সিংহ জানিয়েছেন, যাঁদের কাছে অশোকবাবুর স্মৃতি বিজড়িত নথি রয়েছে, তাঁরা যাতে ওই সমস্ত জিনিস সুইসা আশ্রমে জমা দেন, সে জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এ ছাড়া দলের যে কোনও অফিসেও জমা দেওয়া যায়।

আজীবন ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা অশোক ঘোষ রাজনৈতিক জীবনের একটা অংশ কাটিয়েছিলেন পুরুলিয়ার গাঁয়েই। এই জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের মানুষের অধিকার আন্দোলনে যোগ দিতে ১৯৫৮ সালে প্রথমবার তিনি পুরুলিয়ায় আসেন। ১৯৫৬ সালে বিহার থেকে আলাদা হয়ে পুরুলিয়া তখন সবে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সে সময় পুরুলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের বাঘমুণ্ডি এলাকায় স্কুল তৈরি, সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ঝালদা-বাঘমুণ্ডি-বলরামপুর কাঁচা সড়ককে পাকা সড়ক তৈরি করা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন— এ রকম নানা দাবিতে এই এলাকার মানুষ পুরুলিয়ায় এসে তৎকালীন ডিসির দফতর ঘেরাও করেছিল। তখন রামশিঙ্গার সিং নামে বিহারের এক ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা এই এলাকায় এসে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর হস্তক্ষেপে ঠিক হয়েছিল, এই দাবিগুলি আদায়ের জন্য বিধানসভার সামনে আইন অমান্য করা হবে। সেই আন্দোলন সংগঠিত করতেই অশোকবাবু প্রথম বাঘমুণ্ডিতে আসেন।

ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রবীণ নেতা মহেশ্বর কুইরির কথায়, ‘‘বাঘমুণ্ডির নোয়াডি গ্রামের দুর্গামেলায় অশোকদা সভা করেছিলেন। তাঁকে বরণ করতে গানও লেখা হয়েছিল— ‘হে দরদি অতিথি এসো’। আমার উপরেই অশোকদাকে মালা পরানো ও সেই গান গাওয়ার দায়িত্ব ছিল। অনুষ্ঠান শুরু হতে রাত হয়েছিল বলে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মনে আছে, ঘুম থেকে উঠে আমি গান গেয়েছিলাম। ‘দরদি অতিথি’র বদলে আমি ‘দরিদ্র অতিথি’ গেয়ে ফেলেছিলাম। শৈশবের সেই কথা মনে পড়লে আজও লজ্জা পাই।’’ তিনি জানান, সে দিন অশোকবাবু পুরুলিয়ার মানুষকে ‘বন্ধু’ সম্বোধন করে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছিলেন।

দলের প্রাক্তন সাংসদ বীরসিংহ মাহাতোর স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল— ‘‘সে বার অশোকদার চেষ্টাতেই বাঘমুণ্ডির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাতারে কাতারে মানুষ সুইসা স্টেশন থেকে কলকাতাগামী ট্রেনে উঠেছিলেন। খড়গপুরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের জোর করে ট্রেন থেকে নামিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। তখন অশোকদা-সহ বহু নেতা কলকাতা থেকে খড়গপুরে আসেন। এরপরে সেখান থেকে পায়ে হেঁটেই কলকাতা রওনা হন।’’ অশোকবাবুর হাত ধরে পুরুলিয়ার পিছিয়ে পড়া এলাকায় তারপর অনেক কাজ হয়েছে। তাই অনেকের কাছে তাঁর স্মৃতি জড়িত নথি ও সামগ্রী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাঁর উদ্যোগে সুইসা চালু হওয়া নেতাজি মেলায় ফি বছর অশোকবাবু আসতেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে অশোকবাবু তাঁদের সুখদুঃখের সাথী হয়ে উঠেছিলেন। গত বছর তাঁকে সমাহিত করার দিন পুরুলিয়ার হাজার-হাজার মানুষের চোখের জলই বুঝিয়ে দিয়েছিল, তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Forward Block
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE