Advertisement
০৪ ডিসেম্বর ২০২৩
Bhadu Dance

মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা থেকে সরকারি প্রকল্প, ভাদুর সুরে আসছে সবই

'ভাদর মাসে ভাদু পুজা, ভাদু গানের ঘটা'। বীরভূমে এ কথা সবাই জানে। বাংলার বিশেষত রাঢ় বাংলার অন্যতম পরিচিত উৎসব ছিল ভাদুপুজো।

Bhadu Dance

শান্তিনিকেতনের ক্যানাল পাড়ের রাস্তায় ভাদু নাচ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

সৌরভ চক্রবর্তী
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৮
Share: Save:

ক্যালেন্ডারে ভাদ্র পেরিয়ে আশ্বিন পড়েছে। তবে লালমাটির পথে এখনও ইতিউতি দেখা মিলছে ভাদু গানের শিল্পীদের। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে পুজোর আগে যেমন নাকাল গৃহস্থ, সেই ছবিই যেন তুলে ধরছে ভাদু গানও।

'ভাদর মাসে ভাদু পুজা, ভাদু গানের ঘটা'। বীরভূমে এ কথা সবাই জানে। বাংলার বিশেষত রাঢ় বাংলার অন্যতম পরিচিত উৎসব ছিল ভাদুপুজো। বীরভূম, বর্ধমান, বাকুড়া, পুরুলিয়া সহ রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলিতে প্রতি বছরই ভাদ্রমাসে বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে ভাদুপুজো পালিত হত। তার দোসর ছিল ভাদুগান। অন্য লোকগানের মতোই সমাজ জীবনের কথা, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কথা উঠে আসে ভাদুগানের মধ্য দিয়ে।

বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির কথাও উঠে আসছে লেখা ভাদুগানের মধ্যে। রাস্তায় ঘুরে ভাদু শিল্পীরা গাইছেন, “দুর্মূল্য বাজারে মা গো, বাড়ছে জিনিসের দাম/ আলু, বেগুন, পটল, ঝিঙে, কলা, আমরা কৃষিতে ফলায় তাজা আম/ জমিতে ফসল ফলিয়ে করব কৃষিতে আমরা কাজ/ মা গো কিসের ভাবনা ভাবো আজ”— এ ভাবেই মূল্যবৃদ্ধির অসুবিধের কথা উল্লেখ করে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার ডাক দিচ্ছেন ভাদুশিল্পীরা।

তবে জনপ্রিয় অন্য নানা বিনোদন মাধ্যমের দাপটে এখন অনেক লোকশিল্পের মতো কোণঠাসা ভাদুগানও। তাই নানা সরকারি প্রকল্পের প্রচারে কাজে লাগানো হয় ভাদু শিল্পীদের। সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ-সহ প্রত্যেকটি সরকারি প্রকল্প নিয়েই তাঁরা বাঁধেন গান। সেই গান গাওয়া হয় বিভিন্ন সরকারি মঞ্চে ও গ্রামে গ্রামে।

বোলপুর সংলগ্ন বাহাদুরপুরের ভাদুশিল্পী অনাদি দাস, চন্দন খাঁরা জানান, “আমার ভাদু, সোনার জাদু, পড়বে ইস্কুলে/ এমএ বিএ পাশ করে করবে ভাদু মাস্টারি/ পায়ে স্যান্ডেল, চোখে চশমা, হাতে বেঁধে চেন ঘড়ি/ ইস্কুলেতে যাবে ভাদু চেপে সাইকেলে/ আমার ভাদু সোনার জাদু পড়বে ইস্কুলে।” কন্যাশ্রীর প্রচারমূলক এই পদে বাড়ির মেয়ে ভাদু যেন মিলেমিশে যায়। আবার সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের প্রচারে লেখা “ও ড্রাইভার গাড়ি চালাও হেলমেট পরে”র মতো পদ ভাদুর সুরে গাওয়া হলেও, সেখানে ভাদুর উপস্থিতি নেই।

দুবরাজপুরের রূপশিমুল গ্রামের প্রবীণ ভাদুশিল্পী পার্বতী বাগদি বলছেন, “ভাদুগানে সমসাময়িক জীবনের কথা, উন্নয়নের কথা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামোর কথা মানুষ শুনতে চান। আমরা চোখের সামনে যা ভাল দেখি বা খারাপ দেখি, ভাদুগানে তাই তুলে ধরার চেষ্টা করি। মানুষও সেটাই ভালবাসেন।’’ নবীন শিল্পী রূপা বাগদি বলছেন, ‘‘ভাদুগানকে বাঁচিয়ে রাখতেই মূল্যবৃদ্ধি হোক বা কন্যাশ্রী সবই হয়ে উঠেছে ভাদুর বিষয়। আর এই বিষয়গুলিকে ভর করেই মৃতপ্রায় এই লোক সংস্কৃতি আবার বেঁচে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE