গৌরগোপাল সাহা। নিজস্ব চিত্র
চায়ের দোকানে সংসার টানতেন তিনি। কাজ করতেন সাইকেল সারাইয়েরও। তার ফাঁকেই সমানতালে নিজের কথায় সুর বসিয়ে গুনগুনিয়ে গাইতেন গৌরগোপাল সাহা। সে সব গানই সাড়া ফেলেছে জেলায়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেও।
লাভপুরের গোবিন্দপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম গৌরবাবুর। বাবা প্রয়াত দু’কড়িবাবু যৎসামান্য বেতনে বিভিন্ন দোকানে খাতা লেখার কাজ করতেন। তাঁর আয়েই চলত ৭ ভাইবোনের পড়াশোনা। অর্থাভাবে নবম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা এগোয়নি গৌরবাবুর। বাড়ির লাগোয়া বাকুল মোড়ে কখনও চায়ের দোকান দিয়েছেন, কখনও সাইকেল বা ঘড়ি মেরামতের। জীবিকার টানে বাসের খালাসিও হয়েছেন। পরে সময় বদলায় তাঁর। কয়েক দিন সেচ দফতরে অস্থায়ী কর্মী হিসেব কাজ করার পর ১৯৯৭ সালে ওই দফতরেই স্থায়ী চাকরি হয় তাঁর। কাজ বদলেছে একের পর এক। কিন্তু বদলায়নি গানের নেশা। ৬৪ পেরিয়ে আজও সমানতালে গান লিখে চলেছেন তিনি। ঠিক কিশোর বয়েসের মতোই। তাঁর গানে সব সময় উঠে এসেছে মাটি, মানুষের কথা। সেই গান ছড়িয়েছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।
আকাশবাণীর নিয়মিত গীতিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন গৌরবাবু। তাঁর লেখা গান গেয়েছেন জগন্নাথ মুখোপাধ্যায়, নিতাই দাস বাউল, দুলাল কাহার, স্বপ্না চক্রবর্তী, কার্তিক দাস বাউল, আমিনূর রসিদের মতো প্রথিতযশা শিল্পীরা। মানপত্র গান লিখে তা তিনি তুলে দিয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে।
গৌরবাবুর লেখা সচেতনামূলক গান সাড়া ফেলেছে জেলায়। তাঁর লেখা স্বাক্ষরতা সংক্রান্ত গান শুনেছেন প্রাক্তন রাজ্যপাল রঘুনাথ রেড্ডি, ইউনেস্কোর কর্তারা। ১৯৯১ সালে বিজ্ঞান মঞ্চে তাঁর লেখা গান রাজ্যে প্রথম হয়। বাকুল মোড়েই স্ত্রী, দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁর ছোট্ট সংসার। সেখানে বসেই গান লেখেন গৌরবাবু। বাবার লেখা গান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শোনান কৃষ্ণগোপাল, মানসগোপাল।
লিখতে লিখতেই গৌরবাবু কখনও গেয়ে ওঠেন— ‘লেখাপড়া শিখব আরও তার পরে ভাই বিয়ে/ কম বয়সে বিয়ে হলে জীবনখানা যায় বিষিয়ে।’ গৌরবাবুর বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওই সুর শুনে কখনও থমকে যান পথচলতি মানুষ। গৌরবাবুর স্ত্রী সাধনাদেবী বলেন, ‘‘বিয়ের পর থেকেই মানুষটার গান নিয়ে পাগলামি দেখছি। আজও গানের নেশায় ঘর-সংসারের কথা বেমালুম ভুলে যান। গৌরবাবুর কথায়, ‘‘শুধু সংসারই নয়, গানের টানে চা করতে বা সাইকেল মেরামতের কথাও ভুলে যেতাম। যাঁরা দোকানে আসতেন, তাঁদের জীবন-যন্ত্রণার কথা শুনেই সুর ভাঁজতে শুরু করে দিতাম। তারপর শব্দ বসাতাম। সে জন্য ভাল ভাবে ব্যবসাও জমাতে পারিনি।’’
বোলপুর মহকুমা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক অরিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গৌরবাবুর লেখা সচেতনতামূলক গান প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়। সে সব গানে সাড়া পড়েছে জেলায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy