ভর্তুকির টাকায় গাড়ি কিনে বেকাররা চালিয়ে টাকা উপার্জন করবেন। এই ভাবনা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গতিধারা’ প্রকল্প চালু করেছেন। কিন্তু এই প্রকল্পের বাঁকুড়ার বহু উপভোক্তাই ভর্তুকির টাকা পেয়েও বছর খানেক ধরে গাড়ি না কিনে তা ফেলে রেখেছেন।
নিয়ম ভঙ্গকারী ওই সব উপভোক্তাদের কাছ থেকে সরকারি টাকা ফিরিয়ে আনতে এ বার কড়া অবস্থান নিল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। আজ সোমবারের মধ্যে ড্রাফট করে ভর্তুকির টাকা প্রশাসনকে ফেরত না দিলে, ওই উপভোক্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের শেষ দিকে গতিধারা প্রকল্প চালু করে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পে গাড়ি কিনে ব্যবসা করার জন্য উপভোক্তাদের গাড়ির মোট দামের ৩০ শতাংশ (সর্বোচ্চ ১ লক্ষ) টাকা ভর্তুকি দেয় রাজ্য সরকার। বাঁকুড়া জেলায় এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে ২৮৭টি আবেদন জমা পড়ে। ধাপে ধাপে ভর্তুকি দেওয়ার কাজ চলছে।
তবে অনেকেই ভর্তুকি পেয়েও গাড়ি কেনেননি বলে প্রশাসনের তদন্তে উঠে এসেছে। এই রকম দশ জন উপভোক্তার নামের তালিকা তৈরি করে নোটিস পাঠানো শুরু করে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই তিন বার ওই ব্যক্তিদের নোটিস পাঠানো হয়ে গিয়েছে। জেলাশাসক ওই উপভোক্তাদের নিয়ে আলোচনাতেও বসেছিলেন। সেখানেও তাঁদের সাফ নির্দেশ দেওয়া হয়, গাড়ি না কিনলে টাকা ফেরত দিতে হবে।
জেলাশাসক বলেন, “গতিধারা প্রকল্পে যাঁরা ভর্তুকির টাকা পেয়েও গাড়ি কেনেনি, তাঁদের সোমবারের মধ্যে টাকা ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছি। যাঁরা সেই নির্দেশ মানবেন না, মঙ্গলবারই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।” তিনি জানান, বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের কথা রাজ্য পরিবহণ দফতরকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভর্তুকির টাকা পেয়েও গাড়ি না কেনায় অভিযুক্ত উপভোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন ওন্দার মাজডিহা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান বিশ্বেশ্বর মণ্ডল। কেন টাকা পেয়েও গাড়ি কেনেননি তিনি? বিশ্বেশ্বরবাবুর অভিযোগ, “গতিধারা প্রকল্পে গাড়ি কিনতে গেলেই ডিলাররা গাড়ির দাম কয়েক লক্ষ টাকা বাড়িয়ে দিচ্ছেন।” যদিও এ বিষয়ে তিনি কোনও ডিলারের বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগও করেননি। মৌমিতাদেবীর কথায়, “এই ধরনের কোনও সমস্যার কথা আমার সামনেও কেউ বলেননি।” বিশ্বেশ্বরবাবু অবশ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ড্রাফট করে ভর্তুকির টাকা প্রশাসনকে ফেরত দেবেন বলেই জানিয়েছেন।
বাঁকুড়ার আরটিও বোর্ডের সদস্য সমীর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রশাসন ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছে। এ ক্ষেত্রে কোনও রাজনীতির বাছবিচার করা চলবে না। ওই ভর্তুকির টাকা ন্যায্য বেকার পেলে কাজে লাগবে।’’
কেবল গতিধারাই নয়, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ভর্তুকির টাকা নিয়ে তা অন্য কাজে লাগানোর অভিযোগও আকছার ওঠে। এর আগে ওই সব টাকা ফিরিয়ে আনতে তেমন একটা নড়েচড়ে বসতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে। তবে গতিধারা প্রকল্পে জেলা প্রশাসনের এই কড়া পদক্ষেপ অবশ্য অন্য বার্তাই দিচ্ছে। মৌমিতাদেবী বলেন, “সাধারণ মানুষকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যেই ভর্তুকি দিয়ে সহায়তা করে সরকার। তবে সেই টাকা সঠিক ভাবে ব্যবহার না করলে তা বরদাস্ত করা হবে না।” টাকা পেয়েও গাড়ি না কেনায় অভিযুক্ত গতিধারা প্রকল্পের এক উপভোক্তার কথায়, “সরকারি প্রকল্পের টাকা উপভোক্তার হাতে চলে গেলে প্রশাসন আর কোনও খবর রাখে না বলেই জানতাম। এ ক্ষেত্রে এমন উলট পুরাণ হবে বলে জানলে ভেবে চিন্তে এগোতাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy