Advertisement
E-Paper

খোলা তারে ঢাকনা পরাচ্ছে মেডিক্যাল

হচ্ছে-হবে করে কেটে গিয়েছে অনেকগুলি বছর। মাঝের বছরগুলিতে ছোটখাটো আগুন লাগার ঘটনা জানান দিচ্ছিল, দ্রুত পরিকাঠামো ঠিকঠাক করা দরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩১
এই এসি মেশিনেই লেগেছিল আগুন। চলছে সারানোর কাজ। —নিজস্ব চিত্র

এই এসি মেশিনেই লেগেছিল আগুন। চলছে সারানোর কাজ। —নিজস্ব চিত্র

হচ্ছে-হবে করে কেটে গিয়েছে অনেকগুলি বছর। মাঝের বছরগুলিতে ছোটখাটো আগুন লাগার ঘটনা জানান দিচ্ছিল, দ্রুত পরিকাঠামো ঠিকঠাক করা দরকার। কিন্তু, ঢিলেমি-ই হোক বা অন্য কোনও কারণ, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা সেই মান্ধাতার আমলেই পড়েছিল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রবিবারের অগ্নিকাণ্ড এক ধাক্কায় কাটিয়ে দিয়েছে সব ঢিলেমি। দক্ষিণবঙ্গের এই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালটির পরিকাঠামোর উন্নয়নে তৎপর হয়েছে স্বাস্থ্য ভবন।

সোমবারই রাজ্য পূর্ত দফতরের (ইলেকট্রিক্যাল) কয়েক জন আধিকারিককে বাঁকুড়া মেডিক্যাল পরিদর্শনে পাঠানো হয়। তাঁরা হাসপাতালের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন। পাশাপাশি, এ দিনই হাসপাতালের বিভিন্ন দেওয়ালে জট পাকিয়ে ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারগুলির উপরে ঢাকনা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

রবিবার দুপুরে বাঁকুড়া মেডিক্যালের দোতলায় সার্ভার রুমে আগুন লেগে ধোঁয়ায় ভরে যায় গোটা হাসপাতাল। আতঙ্কে সার্ভার রুমের পাশের মেল ও ফিমেল অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের রোগীদের বাইরে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্য ওয়ার্ডের রোগীরাও আতঙ্কে ওয়ার্ড ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। হাসপাতালের কর্মীরা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে দ্রুত সার্ভার রুমের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনায় বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যায় হাসপাতাল। পরে, দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন পুরোপুরি নেভায়। সার্ভার রুমের পুরনো এসি মেশিন থেকেই আগুন ছড়িয়েছে বলে অনুমান হাসপাতালের কর্তাদের একাংশ।

যদিও এ দিন জেলাশাসক তথা বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মৌমিতা গোদারা বসু দাবি করেন, আগুন লেগেছিল সার্ভার রুমের প্রিন্টার-স্ক্যানারে শর্ট সার্কিট হয়ে। পরে আগুন ছড়িয়ে যায় এসি মেশিনে।

হাসপাতালের বিদ্যুৎ-পরিকাঠামোর হাল দেখে যে কোনও সময়ে বড়সড় বিপদ ঘটে যেতে পারে বলে অনেক আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বাঁকুড়ার দমকল আধিকারিকেরা। ২০১১ সালে কলকাতায় আমরি-কাণ্ডের পরে বাঁকুড়া মেডিক্যালের পরিকাঠামো ঢেলে সাজার দাবি উঠেছে বেশ কয়েক বার। মাঝের কয়েক বছরে বার কয়েক ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডও ঘটেছে এখানে। তবে হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারের ছবিটা কিছুতেই বদলায়নি।

রবিবারের আগুন লাগার ঘটনার পরে অবশেষে নড়ে চড়ে বসতে দেখা গিয়েছে হাসপাতালের কর্তাদের। হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু জানান, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ৪০০টি নতুন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কেনা হবে। ইতিমধ্যেই বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ড ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় একাধিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা হয়েছে। হাসপাতালের বেশির ভাগ পুরনো এসি মেশিন বদলে ফেলা হয়েছে। যেগুলি এখনও রয়েছে, সেগুলি সারানো হবে।

রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পরে প্রথম থেকেই এই হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। তিনি জানান, আজ, মঙ্গলবার হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ পরিকাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে। মৌমিতাদেবী বলেন, “শুধু বিদ্যুতের তার ঢাকলেই কাজ শেষ হবে না। হাসপাতালকে বিপদ মুক্ত করতে প্রতিটি কম্পিউটার, এসি মেশিন, স্যুইচ বোর্ড-সহ খুঁটিনাটি দিকে নজর দিতে হবে।’’

এ প্রসঙ্গে হাসপাতাল সুপারের আশ্বাস, ‘‘বিদ্যুতের তার ও স্যুইচ বোর্ডগুলি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে কলকাতা থেকে ইঞ্জিনিয়ারেরা হাসপাতাল পরিদর্শন করতে এসেছেন। আমরা একটুও ঝুঁকি নেব না।”

তবে, রবিবারের ঘটনার পরে আতঙ্কের রেশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা। পায়ে চোট নিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি পুরুলিয়ার নারায়ণী বাউরি। এ দিন তিনি বলেন, “সরকারি হাসপাতালে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ব স্বপ্নেও ভাবিনি। পাছে আবার কিছু হয়, সেই দুশ্চিন্তায় রবিবার রাতভর ঘুমোতে পারিনি।’’ মানবাজারের লক্ষ্মীমণি বেসরার কথায়, “আমার এক আত্মীয় এখানে ভর্তি। রবিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনা জানতে পারি। খুব চিন্তায় ছিলাম। সকালেই ছুটে এসেছি।”

Heath department hospital safety Bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy