Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ঝড়ে লন্ডভন্ড হল দুবরাজপুরের গ্রাম

ঝড় আসার আগেই বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। নিকষ অন্ধকারে তার পরই শুরু হয় ঝড়ের তাণ্ডব। সঙ্গে বিদ্যুতের চমক আর বৃষ্টি। সোমবার রাতে ঘণ্টাখানেকের ঝড়ের তাণ্ডব এখনও ভুলতে পারছেন না দুবরাজপুরের রামপুর ও ঘাট গোপালপুর। ঝড়ের পর তুমুল আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে তুমুল। প্রশাসনের হিসাবে দুটি গ্রামের অন্তত ৩০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

ঝড়ে উড়ে গিয়েছে টিনের ছাদ। সিউড়ির বড়বাজার এলাকায় ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঝড়ে উড়ে গিয়েছে টিনের ছাদ। সিউড়ির বড়বাজার এলাকায় ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৫ ০১:০৩
Share: Save:

ঝড় আসার আগেই বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। নিকষ অন্ধকারে তার পরই শুরু হয় ঝড়ের তাণ্ডব। সঙ্গে বিদ্যুতের চমক আর বৃষ্টি। সোমবার রাতে ঘণ্টাখানেকের ঝড়ের তাণ্ডব এখনও ভুলতে পারছেন না দুবরাজপুরের রামপুর ও ঘাট গোপালপুর। ঝড়ের পর তুমুল আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে তুমুল। প্রশাসনের হিসাবে দুটি গ্রামের অন্তত ৩০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তনুশ্রী ঘোষ বলেন, ‘‘বসতবাড়ি, গোয়াল ঘরের চালা উড়ে গাছ ভেঙে খুবই খারাপ অবস্থা দুটি গ্রামের। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলি অধিকাংশই গরিব। কতটা সাহায্য করা যায় আমারা দেখছি।’’

দুবরাজপুরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের ওই দুটি গ্রামে ঢোকার আগেই বনদফতরের জঙ্গলটা দেখে ক্ষয়ক্ষতির একটা আন্দাজ মিলছিল। অন্তত শ’খানেকের বেশি গাছ ভেঙে পড়ে রয়েছে। সেই ঝড়ে ভাঙা গাছের ডাল সংগ্রহে ভিড় জমিয়েছেন বাসিন্দারা। ঘাটগোপালপুর গ্রামের বাগানপাড়ায় পৌঁছে দেখা গেল তাণ্ডবের চিহ্ন। বাসিন্দা জাকির খান, রবিউল খান, আতাবুল খান, চাঁদ মহম্মদ সকলেরই বাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। চাঁদ মহম্মদের বাড়ির টিনের চাল অন্তত ৩০০ মিটার দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলেছে। চালা উড়ে যাওয়ার সময় হালকা জখম হয়েছেন আতাবুলের মেয়ে অষ্টমশ্রেণির ছাত্রী সাবেরা খাতুন।

গ্রামের ভিতর যত এগোন যায়, চারিদিকে লণ্ডভণ্ড অবস্থা। হতভম্ব চোখমুখ বাড়ির মহিলাদের। কেউ কেউ আবার ঝড়ে উড়ে যাওয়া সামগ্রী এখান সেখান থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসছেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মহিলা শর্মিলা বিবি, সঞ্জিমা বিবি, জেহেনুর বিবি, সায়েরা বিবি প্রত্যেকেই বলেন, ‘‘কেউ ঘুমিয়ে ছিলেন শিশুদের নিয়ে। কেউ বা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার মধ্যেই শুরু হল প্রবল ঝড়। তাই বলে একের পর এক চালা উড়ে যাবে ভাবতে পারিনি! ছাদ না খাকলেও অনেকেই বাইরে বেরোতে সাহস পাননি, ঝড়ের এত দাপট!’’

জানা গেল, ঝড়ের সময় বাইরে বের হতে পারেননি বাসিন্দারা। কেন না, সে সময় বাইরে টিনের চাল উড়ে বেড়াচ্ছিল। বাড়ির অবস্থা যাঁদের খুব খারাপ, তাঁরা প্রাণ হাতে করে প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। তাঁদের একটাই ভরসা, ‘সকলেই বেঁচে গিয়েছি!’ প্রায় একই দৃশ্য রামপুরের হাবল সাহা, রজনী বাউড়ি, লালি বাদ্যকর দীপক বাউড়িদের। প্রত্যকেরই বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। বাড়ির উপর গাছে ভেঙে পড়ে সারারাত আতঙ্কে কেটেছে। বৃদ্ধা ডাবু বাদ্যকরের তিনটি মুরগির খামার মাটিতে মিশেছে।

তবে ঝড়ে শুধু দুবরাজপুরের দুটি গ্রাম নয়, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সিউড়ির কড়িধ্যা পঞ্চায়েত এলাকার বড়বাগান পাঁচের পল্লিতেও। সুফল রায়, অরূপ দলুই আলো হাজরাদের টিনের চাল, খড়ের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। গাছ ভেঙে তার ছিঁড়ে বিপর্যস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ পরিষেবা। সিউড়ি ১ ব্লকের বিডিও মুনমুন ঘোষ বলেন, ‘‘বড়বাগান এবং কড়িধ্যারই ব্রজগ্রাম মিলিয়ে মোট ১৩ টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বড়বাগানে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ির সংখ্যা ১০টি। এমনিতেই ত্রিপলের অভাব রয়েছে, তবে যেটুকু ছিল তা দিয়েই ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলিকে তা দেওয়া হয়েছে।’’

অন্যদিকে সিউড়ি শহরেও বেশ কিছু গাছ ভেঙেছে। সিউড়ির বড়বাগান এলাকায় একটি বড় অংশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল দীর্ঘক্ষণ। বিদ্যুৎ দফতরের সিউড়ি ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়র তন্ময় মহাপাত্র বলেন, ‘‘গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে যাওয়া শুধু নয়, বেশ কিছু খুঁটিও ভেঙেছিল। সেগুলি নতুন করে বসিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই স্বাভাবিক হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE