Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

যাক গাঁটের কড়ি, চাই ঠান্ডি-মেশিন

ফ্ল্যাটবাড়িটা কি শেষপর্যন্ত সূর্যের কাছাকাছি চলে এল! এপ্রিল ঢুকতেই এই কথাটাই বারবার মনে হচ্ছিল শিক্ষক দম্পতি অনুপম ভুঁইয়া ও মহুয়া ভুঁইয়াদের। অনুপমবাবু সিউড়ি জেলাস্কুলের রাশি বিজ্ঞানের (স্ট্যাটিসটিক্স) শিক্ষক। আর মহুয়াদেবী রামপুরহাটের বড়শাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূগোল শিক্ষিকা। রামপুরহাটের ধূলাডাঙায় একটি বহুতলের পাঁচতলায় পছন্দের ফ্ল্যাট কিনেছেন ওঁরা।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। সিউড়ির দোকানে ছবি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। সিউড়ির দোকানে ছবি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৪২
Share: Save:

ফ্ল্যাটবাড়িটা কি শেষপর্যন্ত সূর্যের কাছাকাছি চলে এল!

এপ্রিল ঢুকতেই এই কথাটাই বারবার মনে হচ্ছিল শিক্ষক দম্পতি অনুপম ভুঁইয়া ও মহুয়া ভুঁইয়াদের। অনুপমবাবু সিউড়ি জেলাস্কুলের রাশি বিজ্ঞানের (স্ট্যাটিসটিক্স) শিক্ষক। আর মহুয়াদেবী রামপুরহাটের বড়শাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূগোল শিক্ষিকা। রামপুরহাটের ধূলাডাঙায় একটি বহুতলের পাঁচতলায় পছন্দের ফ্ল্যাট কিনেছেন ওঁরা। তীব্র গরমে দুই শিশু সন্তান-সহ চারজনের পরিবারের নাজেহাল দশা। বলছেন, দিনভর লু এড়াতে দরজা জানালা এঁটে থাকা! রাতে ছাদের গরমে ফ্যান চালানো দুষ্কর। অগত্যা এসি!

ভুঁইয়া দম্পতি গরম থেকে মুক্তি পেতে এপ্রিলের ১০ তারিখেই রামপুরহাটের একটি দোকান থেকে এসি কিনে ঘরে ফিরেছেন।

স্বস্তি পেতে রামপুরহাটের ওই বহুতলের একই ফ্লোরের পাশাপাশি আরও দুই পরিবার এসি লাগিয়েছেন। সম্পর্কে ওঁরা বাবা ছেলে। শান্তিনিকেতনে কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং ওঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত বৈদ্যনাথ চট্টোপাধ্যায়। তীব্র গরম থেকে মুক্তি পেতে এসি কেনার লাইনে রয়েছেন ওই তলেরই এক সেনাকর্মীর পরিবার। অন্যতলের এক মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টটিটভও তাঁর ঘরে এসি মেশিন লাগিয়েছেন। রামপুরহাটের ওই বহুতলে একসঙ্গে এতগুলি এসি মেশিন লাগানো খণ্ড চিত্র মাত্র।

তাপপ্রবাহে জেরবার হয়েই জেলাজুড়ে বহু পরিবারই ইলেকট্রনিক্সের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। এসি, কুলার, রেফ্রিজারেটার কেনার দিকে অনেকে ঝুঁকেছেন। কেউ কিনেছেন, কেউ কিনবেন। বোলপুরের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘দিনভর যে অফিসে কাজ করি, সেটা এসি। কিন্তু বাড়িতে থাকি কী করে! অনেকগুলো টাকা খরচ হয়ে যাবে জানি। তবু কোনও উপায় নেই। যা গরম পড়েছে!’’

এসি, কুলার— এ সবের চাহিদা এখন গগনচুম্বী বলছেন জেলার হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বিক্রেতারা। শুধু চাহিদাই বেশি নয়, জোগানেরও ঘাটতি দেখা দিয়েছে ইতিমধ্যেই। চাহিদা এত বেশি যে ক্রেতার পছন্দের ব্র্যান্ডের এসি মেশিনের সাপ্লাই সঠিকভাবে বা সময়ে তা দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার দুপুরে সিউড়ির নামকরা একটি ইলেক্ট্রনিক্স শো-রুমে গিয়ে তেমন ছবিই ধরা পড়ল।

শো-রুমে ব্যবসায়ী কুণাল দীক্ষিত তখনও তাঁর স্মার্ট ফোনে বাঁকুড়া ও বীরভূমের তাপমাত্রা গুগল সার্চ করছেন। বলেন, ‘‘দেখুন কত টেম্পারেচার!’’ জানা গেল, গত বছর যা ছিল এ বার চাহিদা তার পাঁচগুন। চাহিদার কথা মানছেন, সিউড়ি হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বিপনীর শাখা প্রবন্ধক পলাশ ঘোষ। এ বারই সিউড়িতে কলকাতার একটি নামকরা হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বিপনী তাদের শাখা খুলেছে। পলাশবাবুর কথায়, ‘‘শুধু এপ্রিল মাসেই ১০২টি এসি মেশিন বিক্রি করেছি। কুলার বিক্রি হয়েছে ২০০-র বেশি।’’ কুলারের বাজেট কম থাকায় কুলারের চাহিদা এসির থেকে বেশি।

দুবরাজপুর-সাঁইথিয়ার মতো জেলার অন্য শহরেরও একই রকম চাহিদা। দুবারাজপুরের এক ইলেক্ট্রনিক্স দ্রব্য বিক্রেতা রাকেশ ভিমরাজকা বলছেন, ‘‘এ বার এসি কুলার হু হু করে বিক্রি হচ্ছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী জোগান সবসময় দিতে পারছি না।’’

ঘটনা হল, জেলায় এত সংখ্যক কুলার-এসি মেশিন লেগে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। সঙ্গে ভোল্টেজের সমস্যাও শুরু হয়েছে। সিউড়ি শহরের দু’একটি অঞ্চলে ভোল্টেজের সমস্যা শুরু হয়েছে মানছে বিদ্যুৎ দফতরও। সিউড়ি ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ার তন্ময় মহাপাত্র বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী কেউ যদি বাড়িতে এসি মেশিন ব্যবহার করেন সেই উপভোক্তাকে লোড বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ দফতরে অবেদন করতে হবে। কিন্তু অনেকেই হয় সেটা জানেন না। বা মানছেন না। সিউড়ির দুটি স্টেশনে সাকুল্যে ১০০-র মতো আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে খবর কমপক্ষে ৩০০ মতো এসি মেশিন শহরে লেগেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

air conditioner
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE