Advertisement
E-Paper

শিল্পের টানে বিষ্ণুপুরে

অপূর্ব নিদর্শন মন্দিরের জন্য খ্যাত বিষ্ণুপুর হস্তশিল্পের জন্যও কম বিখ্যাত নয়। এই শহরের অলিতে গলিতে ঘুরলে কানে আসে তাঁতের মাকু চলার ঠকাঠক শব্দ। কোথাও আবার ঘুরছে কুমোরের চাকা। কোথাও তৈরি হচ্ছে কাঁসার বাসন। এখানকার নানা আয়তনের লন্ঠনও চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২৪
আনাগোনা বেড়েছে বিদেশি পর্যটকদেরও।—নিজস্ব চিত্র।

আনাগোনা বেড়েছে বিদেশি পর্যটকদেরও।—নিজস্ব চিত্র।

অপূর্ব নিদর্শন মন্দিরের জন্য খ্যাত বিষ্ণুপুর হস্তশিল্পের জন্যও কম বিখ্যাত নয়।

এই শহরের অলিতে গলিতে ঘুরলে কানে আসে তাঁতের মাকু চলার ঠকাঠক শব্দ। কোথাও আবার ঘুরছে কুমোরের চাকা। কোথাও তৈরি হচ্ছে কাঁসার বাসন। এখানকার নানা আয়তনের লন্ঠনও চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। শাঁখা কাটার কাজও দৃষ্টিনন্দন। আবার এই শহরে তৈরি দশাবতার তাসও বিদেশে সমাদৃত।

মল্ল রাজধানী বিষ্ণুপুর জুড়ে ঘরে ঘরে এমন শিল্প-শালা। এ দৃশ্য প্রতিদিনের। কৃষ্ণগঞ্জ থেকে মাধবগঞ্জ, কালীতলার তাঁতি পাড়ায়, শাঁখারিবাজার, কামারপাড়ায়-কুমোরপাড়া সর্বত্র এই একই ছবি।

এ সব শিল্পসামগ্রী শুধু এ রাজ্যে নয়, সারা দেশেই সুখ্যাতি অর্জন করেছে। বিষ্ণুপুরের বালুচরী শাড়ি পেয়েছে সর্বভারতীয় পরিচিতি। বিষ্ণুপুরী চৌকো লন্ঠনও বিভিন্ন রাজ্যের মানুষও কিনে নিয়ে যান। ওই লণ্ঠন না জ্বালিয়ে ঘরে রাখলেও ড্রয়িংরুমের উজ্জ্বল্য অনেক বেড়ে যায়। জনপ্রিয়তা রয়েছে এখানকার শাঁখা ও কাঁসাশিল্পেরও। শিল্প রসিকদের কাছে বিষ্ণুপুরের দশাবতার তাসও একটি বিশেষ হস্তশিল্প হিসেবে স্বীকৃত।

ইতিহাস বলছে, বিষ্ণুপুরের মল্লরাজারা চৈতন্য শিষ্য শ্রীনিবাস আচার্যের কাছে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর মন্দির গড়ার কাজে নামেন। একে একে গড়ে ওঠে জোড়বাংলা, শ্যামরাই, রাসমঞ্চের মতো স্থাপত্যকীর্তি। শুধু বিষ্ণুপুরই নয়, আশপাশের বহু গ্রামেও মন্দির তৈরি করেছিলেন তাঁরা। সে সব মন্দিরের গায়ে পুরাণের নানা চিত্র এখনও শিল্পরসিকদের কাছে বিস্ময়।

বিষ্ণুপুরের রাজাদের অনুপ্রেরণায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রসার হয়। যা কালে কালে ‘বিষ্ণুপুর ঘরানা’ নামে আলাদা জায়গা করে নেয়। যদুভট্ট, জ্ঞান গোস্বামী, গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিষ্ণুপুর ঘরানার বহু ওস্তাদ সঙ্গীত শিল্পী দেশবাসীকে মুগ্ধ করেছেন। শুধু শিল্পক্ষেত্রেই নয়, মল্লভূমের নিরাপত্তা নিয়েও দৃষ্টি ছিল রাজাদের। রাজবাড়িকে শত্রুপক্ষের হাত থেকে রক্ষা করতে পরিখা তৈরি করা হয়েছিল। শত্রুপক্ষ গোলাবারুদ নিয়ে যাতে ঢুকে পড়তে না পারে, সে জন্য জল ছেড়ে রাখা হতো পরিখায়।

প্রবল গ্রীষ্মেও যাতে জলকষ্টে ভুগতে না হয় নগরবাসীকে, সে জন্য বিষ্ণুপুরে খনন করা হয়েছিল সাতটি বাঁধ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সে সব এখন মজে যেতে বসেছে। সেই সব লালবাঁধ, শ্যামবাঁধ, কৃষ্ণবাঁধ, যমুনাবাঁধের মতো বাঁধগুলি দেখলে বোঝা যায় তখনকার রাজারা কত দূরদর্শী ছিলেন।

শাঁখারিবাজারে মদনমোহন, মাধবগঞ্জে মদনগোপাল, বসুপাড়ায় শ্রীধর, রাসতলায় রাসমঞ্চ আর কালাচাঁদে ও রাজদরবার সংলগ্ন এলাকায় যেন মন্দিরের মিছিল। স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন নিয়েই পঞ্চরত্ন মন্দির শ্যামরাই, জোড়বাংলা ও রাসমঞ্চ ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছে। বিদেশি পর্যটকদের কাছেও এইসব অনবদ্য শিল্পকর্ম ও দর্শনীয় মন্দিরের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

রাজ-ইতিহাসের কয়েক শতাব্দী পর যখনই দেশের পর্যটন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল হচ্ছে বিষ্ণুপুরের নাম, তখনই বিশেষভাবে মনে পড়ে সেই স্রষ্টাদের, যাঁরা একের পর এক অসাধারণ কারুকার্য মণ্ডিত মন্দির নির্মাণ করেছেন। বিষ্ণুপুরের মতো এত মন্দির নেই রাজ্যের কোনও শহরে। সেই কারণেই বিষ্ণুপুরকে বলা হয় শিল্প ও মন্দির নগরী।

Beautiful Handicrafts Foreign Tourists Bishnupur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy