Advertisement
২০ মে ২০২৪

এক ডাক্তারই সাড়ে তিনশো রোগীর ভরসা

পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডেরও কিছু এলাকার রোগীরা এখানে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে আসেন। ফলে চাপ বেশি। কিন্তু সে তুলনায় পরিকাঠামোয় নজর নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৭ ১৩:৩৩
Share: Save:

বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা দৈনিক তিনশোর কিছু বেশি। অন্তর্বিভাগেও রোগী ভর্তি থাকে জনা ষাটেক। কিন্তু ভরসা এক জন মাত্র চিকিৎসক! এ ভাবেই চলছে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের বান্দা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

শুধু এই ব্লকেরই নয়, পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডেরও কিছু এলাকার রোগীরা এখানে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে আসেন। ফলে চাপ বেশি। কিন্তু সে তুলনায় পরিকাঠামোয় নজর নেই।

ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুধু স্থায়ী চিকিৎসকের অভাব রয়েছে তাই নয়, ঘাটতি রয়েছে নার্সের ক্ষেত্রেও। ১২ জন নার্স থাকার কথা। রয়েছেন মাত্র ছ’জন। এর ফলে পরিষেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ব্লক মেডিক্যাল অফিসার (বিএমওইচ) ইন্দ্রনীল মিত্র বলেন, ‘‘এখানে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বহুবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু স্থায়ী চিকিৎসক মেলেনি।”

এ দিকে, এই ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য দফতরও নিজেদের অসহায়তার কথা জানাচ্ছে। জানানো হয়েছে, সমগ্র পুরুলিয়া জেলাতেই সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। রঘুনাথপুর ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চাহিদা থাকলেও চিকিৎসক না থাকায় সেখানে কাউকে নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা রঘুনাথপুর ২ ব্লকের এই বান্দা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল ব্লকের ছ’টি পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও এই ব্লকে আছে মাত্র দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেই নীলডি ও বগড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রও কার্যত বেহাল। চিকিৎসকের অভাবে সপ্তাহে প্রতি দিন সেখানে পরিষেবা মেলে না বলে অভিযোগ। ফলে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রই ভরসা সমগ্র ব্লকের। অথচ সেই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রও ধুঁকছে।

ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা দিয়েছে, বান্দা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিএমওএইচ-সহ চিকিৎসকের সংখ্যা দু’জন। কিন্তু ইন্দ্রনীলবাবু আবার রঘুনাথপুর মহকুমার এসিএমওএইচের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। ফলে তাঁর পক্ষে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী দেখা কার্যত সম্ভব হয় না। হাসপাতাল চলে মেডিক্যাল অফিসার রবীন মুর্মুর ভরসায়।

বিএমওএইচ জানাচ্ছেন, খাতায়-কলমে হাসপাতালে দু’জন চিকিতসক থাকলেও এসিএমওএইচের দায়িত্বে থাকায় তাঁকে প্রতিদিনই মহকুমার ছ’টি ব্লকের স্বাস্থ্য দফতরের কাজকর্ম সামলাতে হয়। বছর ভর প্রায় ৩০টি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কর্মসূচি চলে স্বাস্থ্য দফতরের।

প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকায় তাঁকেই মহকুমা জুড়ে ওই কর্মসূচি সামলাতে হচ্ছে। তার পরে আছে জেলায় বিভিন্ন বৈঠক ও ব্লক হাসপাতালগুলিতে যাওয়া-আসা। তাঁর কথায়, ‘‘রঘুনাথপুর ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসার ভার পুরোটাই সামলান মেডিক্যাল অফিসার রবীন মুর্মু। আমার পক্ষে রোগী দেখা কার্যত সম্ভব হয় না।”

তাহলে কী ভাবে সামলানো হয় এই বিশাল সংখ্যক রোগীকে? ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, রোগীর চাপ সামলাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসককে আনা হয় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেক্ষেত্রে আবার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা ব্যাহত হয়। জোড়াতালি দিয়ে বহির্বিভাগের রোগীর চাপ কোনও ভাবে সামলানো গেলেও সমস্যা বাড়ে অন্তর্বিভাগের ক্ষেত্রে।

বান্দা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বেডের সংখ্যা ৩০। কিন্তু রোগী ভর্তি থাকে ৬০ জনের মতো। বেডের অভাবে রোগীরা মাটিতে শুয়ে থাকেন। এমনও হয়েছে রোগী বেড না পাওয়ায় আত্মীয়েরা বাড়ি থেকেই খাটিয়া নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। চাপ বাড়লেও তা সামাল দেওয়ার মতো চিকিৎসক ও নার্স না নিয়োগ করায় সঙ্কট এখানে দিন দিন বাড়ছেই।

এই পরিস্থিতিতে স্থায়ী সমাধানের পথ চেয়ে এলাকার বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Patients Doctor বান্দা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE