Advertisement
E-Paper

জমিতে পড়ে মড়ার ভান করে ছিলাম

সে দিন সকালের ঘটনা আজও ছবির মতো মনে আছে শম্ভুবাবুর। তাঁর কথায়, “প্রথমেই আমাদের ঘিরে দিয়ে বড় বড় পাথর ছোড়া শুরু করল ওরা। পাথরের ঘায়ে জখম হয়ে আমরা জমিতে পড়ে গিয়েছিলাম। ওই অবস্থায় আমাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারতে থাকে। অনেকের মলদ্বারেও ধারালো অস্ত্র ঢুকিয়ে দিচ্ছিল!”

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ০১:২৩
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

চব্বিশ বছর আগের সেই দিনটার কথা মনে পড়লে আজও বুক কেঁপে ওঠে মানিক রানার। উন্মত্ত হামলাকারীদের হাতে বেধড়ক মার খেয়েও বরাতজোরে প্রাণে বেঁচেছিলেন রায়বাঁধের এই যুবক। কিন্তু, বাঁচেননি তাঁর বাবা প্রথম রানা। যেমন বাঁচেননি প্রমথবাবুর দুই পড়শি অনিল রানা ও তাঁর ভাই রঞ্জিত রানা।

বুধবার বাঁকুড়া আদালত ওই তিন খুনে অভিযুক্তদের যাবজ্জীবনের সাজা শোনানোর পরে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে নিহতদের পরিবারে।

এ দিন রায়দান শুনতে এজলাসে উপস্থিত ছিলেন মানিক। তিনি বলছিলেন, “তখন আমার বয়স কুড়ি-বাইশ হবে। সকালে বাবা জমিতে গিয়েছিলেন। লোকমুখে শুনলাম জমিতে হামলা হচ্ছে। শুনেই জমিতে ছুটে যাই। কিন্তু হামলাকারীরা আমাকেও মারতে তেড়ে আসে।’’ ওই ঘটনায় হামলাকারীদের কাছে মার খেয়ে জখম হয়েছিলেন শম্ভু রানা। তাঁর মাথায় টাঙ্গির কোপ মারা হয়েছিল। ভেঙে দিয়েছিল বাঁ হাত।

সে দিন সকালের ঘটনা আজও ছবির মতো মনে আছে শম্ভুবাবুর। তাঁর কথায়, “প্রথমেই আমাদের ঘিরে দিয়ে বড় বড় পাথর ছোড়া শুরু করল ওরা। পাথরের ঘায়ে জখম হয়ে আমরা জমিতে পড়ে গিয়েছিলাম। ওই অবস্থায় আমাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারতে থাকে। অনেকের মলদ্বারেও ধারালো অস্ত্র ঢুকিয়ে দিচ্ছিল!”

কী ভাবে বাঁচলেন? শম্ভুবাবুর জবাব, “রক্তাক্ত অবস্থায় মড়ার মতো ভান করে পড়েছিলাম। তার পর হামাগুড়ি দিয়ে জমির পাশে গন্ধেশ্বরী নদীর বালির চরে চলে যাই। সেখানে গিয়ে বেহুঁশ হয়ে যাই।’’

কেন গ্রামেরই একটি অংশ অপর একটি অংশের উপর এই হামলা চালালো?

মামলার সরকারি আইনজীবী অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, রাজনৈতিক কারণেই পরিকল্পনা করে ওই হামলা চালানো হয়েছিল। নিহত ও জখম গ্রামবাসীরা সিপিএম করতেন না বলে আক্রোশ ছিল।

শম্ভুবাবুও বলেন, “ওরা (সাজাপ্রাপ্তেরা) সিপিএম করত বলে গ্রামের সবাইকে নিজেদের মতো করে চালাতে চাইত। কিন্তু, আমরা ওদের সমর্থন করতাম না। ওদের দাদাগিরিও মানতে চাইতাম না। তাই আমাদের উপরে এত আক্রোশ ছিল।’’

এদিন রায়দানের পরই বিজেপি-র রাজ্য নেতা সুভাষ সরকার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দাবি করেন, “ওই গ্রামের মানুষ বিজেপি মনোভাবাপন্ন ছিলেন বলেই সিপিএমের লোকজন হামলা চালিয়েছিল। বাম জামানায় শাসক দল কতটা নৃশংস ছিল, এই ঘটনা তার প্রমান দিল।’’ তাঁর সংযোজন, “সত্যেরই জয় হয়েছে। অন্যায়কে ধামা চাপা দেওয়া যায় না। এটা সবারই মনে রাখা উচিত।’’

যদিও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্রের বক্তব্য, “শরিকি জমি নিয়ে গ্রাম্য বিবাদের জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছিল। এখন অহেতুক ঘটনাটিতে রাজনৈতিক রং দেওয়া হচ্ছে।’’

এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া এত দীর্ঘ হওয়ার জন্য পুলিশের তদন্ত ও রাজনৈতিক প্রভাবকেই দায়ী করেছেন সরকারি আইনজীবী। তাঁর কথায়, “চার্জশিট জমা পড়ে অনেক দেরিতে। এতে অভিযুক্তদের জামিন পেতে সুবিধে হয়। মাঝে ঘটনার কেস ডায়েরিও হারিয়ে গিয়েছিল তৎকালীন পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস থেকে।’’

বিজেপি নেতৃত্বের আরও দাবি, অভিযুক্তেরা সে সময় শাসক দলের কর্মী হওয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অরুণবাবুকে সরকারি কৌঁসুলির পদ থেকেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মাঝে বেশ কয়েক বছর অরুণবাবু অভিযোগকারীদের ব্যক্তিগত আইনজীবী হিসেবেই এই মামলা লড়ে গিয়েছিলেন।

রাজ্যে পালাবদলের পরে ২০১১ সাল থেকে ফের এই মামলার সরকারি আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।

অমিয়বাবু অবশ্য দাবি করেন, ‘‘প্রভাবই যদি খাটানোর থাকত, তা হলে বহু আগেই তদন্ত অন্য পথে চলে যেত। এ সবই ভিত্তিহীন অভিযোগ।’’

Murder lynch Bankura বাঁকুড়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy