২ জুন ২০১৬ আনন্দবাজারে প্রকাশিত।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের আশঙ্কাই সত্যি হল। এ বারেও ফাঁকা আওয়াজ করে হাত গুটিয়ে নিল প্রশাসন। রবিবার সকাল থেকেই এলাকায় মাইক নিয়ে আরও এক দফা প্রচার করে গন্ধেশ্বরী নদীতে গড়ে ওঠা অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কথা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সতীঘাট মোড় দিয়ে পুলিশের জিপ পার হওয়ার সময়ে বাসিন্দাদের মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে—এই বুঝি শুরু হল অভিযান। কিন্তু আদৌ যে কিছু হবে না দুপুর গড়াতেই সে ব্যাপারে এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারা।
কেন হল না? প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি প্রশাসনের থেকে। বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “অভিযান হবেই। তবে রাজ্যপাল বাঁকুড়ায় আসছেন বলে পুলিশ একটু ব্যস্ত রয়েছে। তাই আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।’’ মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালার মাপা বক্তব্য, “অভিযান স্থগিত রাখা হয়েছে।”
এটাই অবশ্য প্রথম নয়। শহরের বাসিন্দাদের একাংশ মনে করাচ্ছেন, গত জুনেও প্রশাসন মাইক নিয়ে এলাকায় ঘুরে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার দিনক্ষণ জানিয়ে গিয়েছিল। সে যাত্রা অভিযান স্থগিত করা হয় রমজান মাস এবং রথযাত্রার কথা বলে। বলা হয়েছিল, রথযাত্রার পরেই অভিযান হবে। রথযাত্রার পরে আরও পাঁচ মাস পেরিয়ে গিয়েছে। ঘুম ভঙেনি প্রশাসনের।
দীপাবলির ছুটি কাটিয়ে সদ্য অফিস কাছারি খোলার পরে অভিযান শুরু হবে বলে হঠাৎই প্রচার শুরু করে প্রশাসন। গত কয়েক দিন ধরে এলাকায় ঘোষণা করা হচ্ছিল, রবিবার নদীতে অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হবে। এ দিন সেই অভিযান না হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে। সতীঘাট ব্যবসায়ী কমিটির সম্পাদক দুর্গাদাস মিশ্রের কথায়, “বারবার ঘোষণা করেও অবৈধ নির্মাণ ভাঙার অভিযানে নামছে না প্রশাসন। এই ঘটনায় বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এলাকায়। কার কতটা নির্মাণ ভাঙা হবে তা নিয়ে সকলেই চিন্তিত। অভিযান হয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা চিন্তা মুক্ত হতে পারতেন।”
গন্ধেশ্বরী দখল মুক্ত করা নিয়ে প্রশাসনের এই টালবাহানায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে বলে দাবি করছেন গন্ধেশ্বরী নদী বাঁচাও কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সন্তোষ ভট্টাচার্য। সন্তোষবাবুর কথায়, “এলাকার মানুষ ও ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশই চান গন্ধেশ্বরী দখল মুক্ত হোক। প্রশাসন ঢাক পিটিয়েও বারবার পিছিয়ে আসায় প্রত্যেকেই ক্ষুব্ধ। এতে প্রশাসনের ভাবমূর্তিই খারাপ হচ্ছে।”
২৫ জুন ২০১৬ আনন্দবাজারে প্রকাশিত।
কয়েক মাস আগে বাঁকুড়া পুরসভার রামানন্দ পাম্প হাউস লাগোয়া এলাকায় গন্ধেশ্বরীর বুকে একটি নির্মাণ কাজ নিয়ে সরব হন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, সেচ দফতরে লিখিত অভিযোগ করার পরেও কোনও পদক্ষেপ হয়নি। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু সেচ দফতরকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। জুনের গোড়ায় এলাকায় গিয়ে নদীর বুকে আস্ত বাড়ি দেখে কংসাবতী সেচ দফতরের আধিকারিককেরা তাজ্জব বনে যান। জুনের শেষের দিকে নদী বক্ষে ৫০টিরও বেশি নির্মাণকে বেআইনি বলে চিহ্নিত করে প্রশাসন। সেগুলি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। তার পরে এ নিয়ে দু’দফা প্রচার পর্ব হয়েছে। কিন্তু অভিযানে আর নামা হয়নি প্রশাসনের।
এই ঘটনার পিছনে অনেকেই রাজনৈতিক যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলছেন। তাঁদের মতে, আসলে রাজনৈতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করে কখনও রমজান মাস বা রথযাত্রা, কখনও রাজ্যপালের জেলা সফরের তত্ত্ব সামনে আনছে প্রশাসন। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “এই সব ভিত্তিহীন কথা। গন্ধেশ্বরীতে গড়া অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হবেই। সঠিক সময়েই অভিযান হবে।”
সময় কবে সঠিক হবে, বাঁকুড়ার বাসিন্দাদের কাছে সেটাই আপাতত বড় প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy