Advertisement
০৪ মে ২০২৪
বকেয়া টাকা, বেপাত্তা যুবক

সারের দোকানের আড়ালে বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ

শুরুতে ছিল রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের দোকান। বছর চারেকের মধ্যেই ভোল পাল্টে হয়েছিল বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা। তা বলে দোকান থেকে সারের বস্তা কিংবা কীটনাশকের শিশি-বোতল উধাও হয়নি।

টাকার দাবিতে গাড়িতে ভাঙচুর। নিমপুরডাঙায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

টাকার দাবিতে গাড়িতে ভাঙচুর। নিমপুরডাঙায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৪
Share: Save:

শুরুতে ছিল রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের দোকান। বছর চারেকের মধ্যেই ভোল পাল্টে হয়েছিল বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা। তা বলে দোকান থেকে সারের বস্তা কিংবা কীটনাশকের শিশি-বোতল উধাও হয়নি। কারণ এ সবের আড়ালেই চলত সংস্থার ওই বেআইনি কারবার। প্রাপ্য টাকা পেয়ে শুক্রবার সকালে ময়ূরেশ্বরের নিমপুরডাঙায় সেই দোকানেই হামলা চালালেন আমানতকারীদের একাংশ। দোকান-সহ দু’টি গাড়িতে ভাঙচুর চলে। রাত পর্যন্ত অবশ্য ওই ঘটনায় কোনও পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর চারেক আগে ওই গ্রামে জমি কিনে রাসাওনিক সার ও কীটনাশকের দোকান খোলেন বছর বত্রিশের এক যুবক। ওই যুবকের বাবা অবগারি দফতরের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। মহম্মদবাজারের খড়িয়া গ্রামে বাড়ি হলে স্থানীয় আকোলপুর গ্রামে মামারবাড়ি রয়েছে ওই যুবকের। সেই হিসাবে অল্প দিনেই তাঁর সার ও কীটনাশকের ব্যবসা জমে ওঠে। গ্রামাঞ্চলে চাষিদের অনেকেই সাধারণত আড়তে ধান বিক্রি করে সেই টাকা সার ও কীটনাশকের দোকানে জমা রাখেন। প্রয়োজনের সময় তাঁরা ওই দোকান থেকে সার ও কীটনাশক নেন। অগ্রিম টাকা জমা রাখার সুবাদে চাষিরা ওই সব সামগ্রী কিছুটা সুবিধাজনক দরেও পান। প্রচলিত ওই আদান-প্রদান ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ওই যুবক আর্থিক প্রতারণার এমন কারবার ফেঁদে বসেন বলে অভিযোগ।

এ দিনের বিক্ষোভকারীদের দাবি, ওই যুবক আগাম টাকা রাখার জন্য অন্য দোকানের থেকে চাষিদের অনেক কম দামে সার ও কীটনাশক দিতেন। সে কারণে দূর-দূরান্তের বহু চাষিও তাঁর কাছে টাকা জমা রাখতে আসতেন। সেই সুযোগটাই ওই যুবক তাঁর বেআইনি কারবারে কাজে লাগান বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত ঘোষ, আশুতোষ মণ্ডলদের দাবি, ‘‘ওই ভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তোলার পরে ওই যুবক আমাদের জানান, অগ্রিম টাকা জমা রাখলে শুধু সার-কীটনাশকই নয়, মিলবে মোটা টাকা সুদও। সে ক্ষেত্রে অগ্রিম টাকা জমার রাখার জন্য চাষিদের বাজারমূল্যের সমপরিমাণ সার কিংবা কীটনাশকের বুকিং কুপন দেওয়া হবে। আমানতকারী চাষিরা চাইলেই সার-কীটনাশক কিংবা সুদ হিসাবে নগদ টাকাও নিতে পারেন।’’

কেমন ছিল সুদের পরিমাণ?

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এক বছরের জন্য এক লক্ষ টাকা জমা দিলে প্রতি দু’মাস অন্তর মিলত ৩৮, ৮৫০ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের মাথায় মিলত প্রায় দ্বিগুণ টাকা। প্রথম দিকে ঠিকঠাক ফেরত পাওয়ায় বহু মানুষ বাড়ির ঘটিবাটিটুকুও বিক্রি করে টাকা জমা দিয়েছিলেন ওই যুবকের কাছে। শুধু সরাসরি টাকা জমা করাই নয়, পরবর্তী কালে চালু করা হয়েছিল এজেন্ট কমিশনও। লগ্নিকারীদের অধিকাংশই জানাচ্ছেন, একত্রে এক লক্ষ টাকা জমা দিলে হাতে হাতে মিলত ৩০ হাজার টাকার কমিশন। যে কারণে শুধু চাষিরাই নন, বহু ব্যবসায়ী, সরকারি পেশায় থাকা ব্যক্তিরাও একসঙ্গে ১ লক্ষ টাকা জমা দিয়ে ওই যুবকের থেকে প্রথমে ৩০ হাজার টাকা কমিশন নিয়েছেন। তার পরে কমিশনের টাকাটুকুও ফের জমা করে দিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা উত্তম বড়াল, প্রতাপ ঘড়ামি, ধীরেন মণ্ডল জানান, প্রথম দিকে সময়মতো টাকা ফেরত পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় কেউ অবসরকালীন পাওনা টাকা, কেউ বা ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে ফিক্সড ডিপোজিট করা টাকা মেয়াদের আগেই ভাঙিয়ে জমা করেছিলেন। এমনকী, এলাকার ভ্যানচালক, ফুচকাওয়ালারাও ওই যুবকের কাছে টাকা জমা রেখে সারের কুপন সংগ্রহ করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। ওই কুপন হাতেই এ দিন কয়েকশো মানুষ দোকানের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের কয়েক কোটি টাকা ওই ভাবে গায়েব করে গত মঙ্গলবার থেকেই ওই যুবক বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন।’’ ফোন বন্ধ থাকায় এ দিন ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর এক মামার বক্তব্য, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই।’’ পুলিশ জানায়, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পদক্ষেপের দাবি। সাঁইথিয়া ১০ নম্বর ওয়ার্ডের হাটতলা লাগোয়া অবিনাশচন্দ্র ঘোষ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রাধাগোবিন্দ মন্দির পাশাপাশি। কিন্তু দুর্গন্ধের কারণে নাকে রুমাল না দিলে ওই চত্বরের রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করা যায় না। স্থানীয়দের দাবি, সব্জি বা মাছ বাজারের পাঁচিলের কোনও অস্তিত্ব নেই। ফলে বাজারের ভিতরের ওই পুকুর পাড়ে এখনও বহু মানুষ প্রাতঃকর্ম করেন। সব্জি ও মাছ বাজারের নোংরা জলের কারণেও দুর্গন্ধ হয়। ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় কাউন্সিলর মানস সিংহ বলেন, ‘‘বাজারের জমিটি পুরসভার নয়। তাই কিছু সমস্যা আছে। তবে আগের চেয়ে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ওই চত্বর পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fertiliszer illegal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE