Advertisement
৩০ মার্চ ২০২৩

নিষেধ, তবু বালি যাচ্ছে ভ্যানোতেই

বর্ষায় জেলার সর্বত্রই নদ-নদী থেকে বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বিষ্ণুপুর শহরে ভ্যানো (ইঞ্জিন ভ্যান) চালানোতেও। কিন্তু, বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া বিড়াই নদী থেকে বালি তুলেই শহরের মধ্যে ধোঁয়া উড়িয়ে ছুটছে বালি-বাহী ভ্যানো! বাসিন্দাদের প্রশ্ন, প্রশাসন সব দেখেও পদক্ষেপ করছে না কেন?

বিড়াই নদীতে বালি তোলার অনুমতি নেই। তবুও চাকদহ গ্রামে দেখা গেল বালি তোলা চলছে। সেই বালিই আসছে বিষ্ণুপুর শহরে। নিজস্ব চিত্র

বিড়াই নদীতে বালি তোলার অনুমতি নেই। তবুও চাকদহ গ্রামে দেখা গেল বালি তোলা চলছে। সেই বালিই আসছে বিষ্ণুপুর শহরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:২০
Share: Save:

বর্ষায় জেলার সর্বত্রই নদ-নদী থেকে বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বিষ্ণুপুর শহরে ভ্যানো (ইঞ্জিন ভ্যান) চালানোতেও। কিন্তু, বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া বিড়াই নদী থেকে বালি তুলেই শহরের মধ্যে ধোঁয়া উড়িয়ে ছুটছে বালি-বাহী ভ্যানো! বাসিন্দাদের প্রশ্ন, প্রশাসন সব দেখেও পদক্ষেপ করছে না কেন?

Advertisement

বস্তুত, জেলার ইজারা দেওয়া নদীঘাটগুলিতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বালি তোলা বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তার উপরে বিড়াই নদীতে বালি তোলার ইজারাও দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও সেই নদী থেকে দিনের পর দিন বালি তোলা চলছে। বাসিন্দাদের দাবি, বিষ্ণুপুর শহরে এখন যে সব নির্মাণ হচ্ছে, তার অধিকাংশই কাজ হচ্ছে বিড়াই নদীর বালিতে। আর সেই বালি আসছে ভ্যানোতে।

এই শহরে ভ্যানো বাড়বাড়ন্তে বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। তাঁরা জানাচ্ছেন, বিষ্ণুপুর শহরের উত্তর দিকে বাইপাস ধরে হাঁড়িঘাট মোড় এবং সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের সামনে দিয়ে ভোর-রাত থেকে বিকট শব্দ তুলে বালি ভর্তি একের পর এক ভ্যানো কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে শহরে ঢুকতে থাকে। যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

মাঝিপাড়ার জীতেন্দ্রনাথ মাঝি, ঝুমা সাঁতরা বলেন, ‘‘অবৈজ্ঞানিক ভাবে তৈরি ভ্যানোর না আছে ভাল ব্রেক না, আছে ভাল টায়ার। ব্রেক টিপলে, বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে তবেই থামে। তাই পথে বেরোলে আতঙ্কে থাকি। কেন যে ভ্যানো বন্ধ হচ্ছে না, কে জানে!’’ কলেজ পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সুনির্মল বসু বলেন, ‘‘এক দিন বাজার থেকে ফেরার পথে বালি ভর্তি ভ্যানোর ধাক্কায় পড়ে গিয়ে চোট পাই। তারপর থেকে বাজারে যাওয়া ছেড়েই দিয়েছি।’’

Advertisement

শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দিঘিরপাড়, মাঝিপাড়া, কাদাকুলি পাড়া, মল্লেশ্বরের বাসিন্দারদের ঘুম ভাঙে ভ্যানের বিকট শব্দে। ওই এলাকার কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘প্রতি দশ মিনিটে আটটা ইঞ্জিন ভ্যানো বালি নিয়ে শহরে ঢুকছে। সারা দিন ধরে শহরের অলিগলি থেকে বাজার, বাচ্চাদের স্কুলের সামনে, এমনকী বিষ্ণুপুর থানার সামনে দিয়ে অবৈধ ইঞ্জিন ভ্যানো চোরাই বালি নিয়ে ছুটছে। কোথায় থাকে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-এর বার্তা?’’

বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কয়েক সপ্তাহ আগে মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল শহরের পথে ভ্যানো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেন। তারপরেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’’

নিষেধের পরে বালি তোলাই বা চলছে কী ভাবে?

মঙ্গলবার শহর লাগোয়া চাকদহ গ্রামে বিড়াই নদীতে গিয়ে দেখা গেল, অবাধে বালি তোলা চলছে। সেই বালি ভ্যানোয় চাপানো হচ্ছে। কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? যদিও বিষ্ণুপুর মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ফাল্গুনী শতপথী বলেন, ‘‘এখন নদী থেকে বালি তোলা অবৈধ। তাছাড়া বিড়াই নদীতে বালি তোলার অনুমতিই নেই। অপরিকল্পিত ভাবে বালি তোলা হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে আশপাশের গ্রামগুলির বিপদ বাড়তে পারে। আমাদের পরিকাঠামো ও কর্মীর অভাব আছে। তা সত্ত্বেও বহু বার অভিযান চালানো হয়েছে। মামলাও কম হয়নি। ভ্যানোও ধরা হয়েছে।’’ বিষ্ণুপুর থানা জানাচ্ছে, প্রধান রাস্তায় পুলিশের পাহারা রয়েছে। তাই ভ্যানো নিয়ে অলি গলি দিয়ে ঢুকছে। স্কুল শুরু ও ছুটির সময়ে শহরে ভ্যানো ঢোকা বন্ধ করায় জোর দেওয়া হচ্ছে।’’

কেন নিয়ম ভাঙছেন? ইঞ্জিন ভ্যানের চালকেরা বলেন, ‘‘ কলকারখানা বন্ধ। এই কাজ করব না তো খাব কী?’’

প্রশাসন ও পুলিশের একাংশের দাবি, ভ্যানো চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই তাঁরা আর্থিক দুরাবস্থার দোহাই দেয়। যদিও বিষ্ণুপুর বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, নদী থেকে বালি তোলার কাজ স্থানীয়েরা করলেও বালির ব্যবসা লাভজনক হওয়ায়, শহরের অনেকেই ভ্যানো কিনে কাজে লাগাচ্ছে। ফলে, ভ্যানো চালকদের মতোই লাভবান হচ্ছেন ভ্যানোর লগ্নিকারীরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.