সেলফোনে বন্দি। —নিজস্ব চিত্র।
সাতসকালে বেমালুম ‘নিলাম’ হয়ে গেল ছাতিমতলা!
নিলাম! ‘নিলাম’-ই তো!
চমকে ওঠার কিছু নেই। উত্তরের কনকনে হাওয়ার বাঁকে এ বার পৌষমেলায়, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনতরো ‘নিলাম’এর সংখ্যা। কেবল ছাতিমতলা নয়, বিশ্বভারতীর স্টল, বাউলমঞ্চ, সিংহসদনের ঘর-বাড়ি, দরজা-দালান, ১৪০০ সাহিত্যের স্টল — পারলে গোটা শান্তিনিকেতনটাই বুঝি শেয়ার হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। তবে এ ‘নিলাম’ দর হেঁকে ‘দিবে আর নিবে’ নয়। ‘মিলাবে মিলিবে’-র নিলাম! বলে কয়ে মেলার ছবি বা লাইভ ভিডিও শেয়ার করা।
ধরুন, বাউলমঞ্চের মোক্ষম ছবি তুলেছেন। যেই না ফেসবুকে সেই ছবি ছেড়েছেন, তখনই হয়তো কমেন্ট পড়বে, ‘নিলাম’। কিংবা ‘চমৎকার ছবি হয়েছে। নিলাম হে!’ নিজের ওয়ালে পোস্ট করা ছবির কদর হয়তো বিশেষ জুটল না, এ দিকে ওই ‘নিলাম’-লিখিয়ের দেওয়ালে শেয়ার হওয়া পোস্টে চড়চড়িয়ে বাড়ছে লাইক আর কমেন্টের পারদ!
কিছুদিন আগে ফেসবুক এনেছে নতুন ফিচার— ‘লাইভ’। বিদেশের অনেক দুর্গাপুজো কমিটির কর্তারা এ বারে ক্ষণে ক্ষণে লাইভ ভিডিও আপলোড করেছেন নিজেদের পেজ-এ। দেশে থাকা পরিজন, ছুটি না পাওয়া দেশ-তুতো ভাইবোনেরা তার থেকে মেখে নিয়েছেন উৎসবের আমেজ। পৌষমেলার শান্তিনিকেতনও এ বারে সেই লাইভ ভিডিও হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে প্রোফাইলে, গ্রুপে। এমন একটি গ্রুপের অ্যাডমিনের সঙ্গেই কথা হচ্ছিল। ‘শান্তিনিকেতন’। ২০১৪ নাগাদ ফেসবুকে এই গ্রুপটি তৈরি করেন শুদ্ধসত্ত্ব ভট্টাচার্য। যার সদস্য সংখ্যা এখন দেড় হাজার! বিশ্বভারতীর সারা বছরের উৎসব-অনুষ্ঠানের মতো এ বার পৌষমেলারও তাজা আপডেট আপলোড হচ্ছে গ্রুপের ওয়ালে। শুদ্ধসত্ত্ববাবু বললেন, ‘‘শেয়ার ব্যাপারটা চুরি নয়। সারা বছর ধরে আমাদের একটা নেটওয়ার্ক চলে। বহু মানুষ ইনবক্সে অনুরোধ করেছেন, তাঁদের স্মৃতির মেলার ছবি দিতে। সে অনুরোধ রাখার চেষ্টা করছি মাত্র।’’
‘‘এ ভাবে নেওয়া যায় বুঝি!’’
রূপদস্তার পট্টিতে ঘাসে বসে নূপুর পরছিলেন প্রেসিডেন্সির মল্লিকা। ঘাড় ঘুরিয়ে ছুঁড়ে দিলেন প্রশ্ন। ‘নিলাম’ বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি হাতিয়ে নেওয়ার ঘোর বিরোধী তিনি। পাশে বসে পিঠের দিকে ক্যামেরার ব্যাগটা ঠেলে দিয়ে হাসতে হাসতে তাঁর ব্যাচমেট দিঘি বললেন, ‘‘সত্যি বলতে, এ বারে আসার কোনও ছকই ছিল না। ফেসবুকে শেয়ার হওয়া ছবি দেখতে দেখতে মনজুড়ে মেলা ডাকল!’’
কেবল মনকেমনের ছবি নয়, পৌষমেলার অনু্ষ্ঠান সূচি, প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা, সংকলন গ্রন্থের কভার, ব্লার্ব, মেলায় আসা অতিথিদের প্রোফাইল, হারানো স্টলের হদিশ এমনকী লেন-তস্য লেনের স্টলে বসে অপেক্ষারত ছেলেটির বা মেয়েটির কথাও এখন জনপ্রিয় শেয়ারিং।
লেন্সের মধ্যে দিয়ে পৌষমেলাকে অনের দিন ধরে দেখে আসছেন ফটোগ্রাফার অর্ণব ঘোষাল। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি বসে অনেকে মেলা দেখছেন, এটা দারুণ ব্যাপার। তবে এই ঢালাও শেয়ারের চক্করে প্রফেশনালদের ক্ষতি।’’ শখের ফটোগ্রাফার সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়, নবগোপাল রায়দেরও একই মত। তবে সবাই এক বাক্যে মানছেন, এই বন্দোবস্তে একটা খোলামেলা ‘ডকুমেন্টেশন’ হচ্ছে। মোবাইল বা কম্পিউটারের পর্দায় পাশাপাশি ফুটে উঠছে এক প্রান্তের এগজিবিশন গ্রাউন্ড আর অন্য প্রান্তের শালপট্টি। পুরোটাই হাতে গরম। ‘নিলাম’-ই মেলাচ্ছে মেলা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy