আঁতুড়-ঘর। নিজস্ব চিত্র
গরম পড়তেই সকাল-সন্ধে বাড়ছে মশার উপদ্রব। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। আর মশাদের বংশবৃদ্ধি মানেই অনিবার্য ভাবে মশাবাহিত রোগের উপস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে জেলার পুর এলাকাগুলি ঠিক কতটা প্রস্তুত বা আদৌ প্রস্তুত কিনা— তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যেই।
চিন্তা আরও বাড়িয়েছে গত বছরের অভিজ্ঞতা। কারণ, গত বারেই জেলায় প্রায় ৫০০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দোসর ছিল ম্যালেরিয়াও। জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘গত বারে জেলায় ডেঙ্গির প্রভাব যথেষ্টই ছিল। মোট ২,৭৬৯ জনের ডেঙ্গি নির্ণায়ক ‘ম্যাক অ্যালাইজা টেস্ট’ করা হযেছিল। ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল ৪৮৮ জনের শরীরে। মাত্র এক জনের মৃতু হলেও পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক।’’
তাই এ বার মশাদের বংশবিস্তার রুখতে পুরসভা ও প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। আগামী ২১ তারিখ ফের ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া দমনে বোলপুর, সিউড়ি ও সাঁইথিয়া পুরসভার প্রতিটি কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মত, বাড়িতে বাড়িতে এই বিষয়ে সচেতনতা প্রচার না হলে মশাবাহিত রোগ কমানো সম্ভব নয়।
কমবেশি ৮০ হাজার মানুষ বাস করেন শতাব্দী প্রাচীন পুর শহর সিউড়িতে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মশাদের আঁতুরঘর বলে পরিচিত শহরের নিকাশি নালাগুলিই নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এই গ্রীষ্মেও শহরের একাধিক নিকাশি নালায় জল জমে রয়েছে। একই ভাবে আবর্জনার স্তুপ জমে বিভিন্ন ওয়ার্ডে। শেষ বার মশানাশক রাসায়নিক স্প্রে করা হয়েছিল মাস ছয়েক আগে। তা হলে মশার উপদ্রব কমবে কী করে? নিয়মিত নিকাশি নালা বা আবর্জনা পরিষ্কার করা হয় না এই অভিযোগ না মানলেও সম্প্রতি যে মশানাশক স্প্রে বা ধোঁয়া এলাকায় এলাকায় ছড়ানো হয়নি, তা মানছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরেরাই।
যদিও সিউড়ি পুরসভার উপপুরপ্রধান বিদ্যাসাগর সাউ দাবি করেছেন, ‘‘মশার উপদ্রপ বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু পুরসভাও হাত গুটিয়ে বসে নেই। এপ্রিলেই প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মশা মারার রাসায়নিক স্পে করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে প্রতিটি ওয়ার্ডে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমাতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গঠিত হয়েছে মহিলা আরোগ্য কল্যাণ সমিতি। মশাবাহিত রোগ নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে সেই কমিটিও প্রচার চালাবে।’’ উপপুরপ্রধানের যুক্তি, গত বার ডেঙ্গি ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল বর্ষায়। সেই অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে বর্ষার আগেই এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার কথা বিশেষ ভাবে ভাবা হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, ধোঁয়া দিয়ে মশা রোধ করা নিয়ে বাসিন্দাদের সমস্যা থাকায় গত বারই ১০টি অটোমেটিক স্প্রেয়ার কিনেছে পুরসভা। সেগুলিই এ বার কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যা শুনে শহরবাসী প্রশ্ন তুলেছেন, পুরসভা মশা মারার রাসায়নিক স্প্রে না করুক, নিয়মিত নিকাশি নালা ও আবর্জনা কেন পরিষ্কার করা হচ্ছে না? এ ব্যাপারে পুরসভার আর্থিক অভাবকেই দায়ী করছেন বিদ্যাসাগরবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের কর্মীর অভাব নেই। সদিচ্ছারও অভাব নেই। আদতে পুরসভা অর্থসঙ্কটে ভোগায় সব কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।’’ অর্থ-সঙ্কটের কারণ হিসেবে শহরের বিভিন্ন সরকারি অফিস, আদালতের পুরকর বাকি রাখাকেই দায়ী করেছে তিনি। বিদ্যাসাগরবাবুর দাবি, ‘‘শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি থেকেই ২ কোটি টাকার উপর কর বাকি। তা না পেলে পুরসভার পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।’’ এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এসডিও (সিউড়ি সদর) কৌশিক সিংহ বলেন, ‘‘পুরসভা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে এত টাকার কর পাবে, তা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখে পদক্ষেপ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy