প্রতীকী ছবি।
সরকারি আবাসনে স্বামীর সঙ্গে থেকেও অন্যায় ভাবে এক শিক্ষিকা বছরের পর বছর ধরে বাড়ি ভাড়া বাবদ সরকারি টাকা নিচ্ছেন— গত বছর বীরভূমের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আদালতে এমনই অভিযোগে মামলা ঠুকেছিলেন তাঁর সহ-শিক্ষিকারা। আদালতের নির্দেশে সেই শিক্ষিকাকে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হয়েছিল।
জেলা শিক্ষা দফতরের অনুমান, এমন ঘটনা আরও রয়েছে। শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা সঠিক নিয়ম মেনে বাড়ি ভাড়ার টাকা তুলছেন কি না, রাজ্য শিক্ষা দফতরের নির্দেশে তা জানতে উদ্যোগী হলো জেলা শিক্ষা দফতর।
শিক্ষা দফতর ও জেলার বিভিন্ন স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) গত বছর ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতিটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে একটি নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন। তাতে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষিকা এবং টিআইসিদের বলা হয়েছে— ‘আপনার স্কুলের সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন এবং তাঁদের স্বামী বা স্ত্রী রোজগার করেন কি না, সেই সংক্রান্ত তথ্য বিশদে জেনে রিপোর্ট করুন। কারও ক্ষেত্রে নিয়মের অন্যথা হলে জানুয়ারি মাস থেকে বাড়ি ভাড়া বাদ দিয়ে বিল পাঠাবেন।’
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরে দু’দফায় স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা সরকারের তরফে বাড়ি ভাড়া বাবদ টাকা পেয়ে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি মাসে বাড়ি ভাড়া বাবদ পরিবারপিছু সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা পেতে পারেন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী বা সরকারি কর্মীরা। কিন্তু সরকারি চাকুরে স্বামী ও স্ত্রী একই বাড়িতে থাকলে দু’জনে আলাদা করে বাড়ি ভাড়ার টাকা তুলতে পারবেন না। যে কোনও এক জন টাকা নেবেন। ব্যতিক্রম রয়েছে শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রী যদি নির্দিষ্ট দূরত্বে (১৫০ কিলোমিটারের বেশি) আলাদা আলাদা বাড়িতে থাকেন, সে ক্ষেত্রে দু’জনেই বাড়ি ভাড়া নিতে পারেন। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই এক ছাদের তলায় থাকলেও আলাদা আলাদা ভাবে বাড়ি ভাড়ার টাকা তোলেন। এতে অপব্যয় হচ্ছে সরকারি টাকার।
বীরভূমের জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রেজাউল হক বলেন, ‘‘সঠিক নিয়ম মেনে শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা বাড়ি ভাড়া তুলছেন কি না, তা জানতেই রাজ্যের নির্দেশে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, এ বার থেকে বছরে দু’বার— জানুয়ারি এবং জুলাই মাসে এই তথ্য জানাতে হবে স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষক এবং টিআইসি-কে।
এ বিষয়ে জেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া— বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়ে নির্দেশিকা চাওয়ার মধ্যে দোষের কিছু নেই। সরকারি টাকা কেউ কেন অন্যায় ভাবে তুলবেন। এই নিয়ম আগেই ছিল। হয়তো আবশ্যিক ছিল না। কিন্তু নির্দেশিকার দু’টি বিষয় নিয়ে আপত্তি রয়েছে শিক্ষকদের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, এতে ঘুরিয়ে শিক্ষকদের ‘অপমানিত’ করা হচ্ছে। তাঁরা জানান, নির্দেশিকায় বলা হয়েছে শিক্ষক শিক্ষিকা বা শিক্ষাকর্মীদের স্বামী বা স্ত্রী সরকারি চাকরি করলে তো বটেই, এমনকী বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করলেও তাঁর বেতন-স্লিপ জমা দিতে হবে। কারও স্বামী বা স্ত্রী ভিন্ন পেশা বা ব্যবসায়ী হলে তার সাপেক্ষেও তথ্য দিতে হবে। কেউ ব্যবসা করলে দিতে হবে ট্রেড লাইসেন্স ও জিএসটি নম্বর। ছাড় নেই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের স্ত্রী গৃহিনী হলেও উপযুক্ত ঘোষণাপত্র স্কুলে দাখিল করতে হবে। শিক্ষকদের আপত্তি এখানেই।
শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, কেন অন্য পেশা বা ব্যবসা বা গৃহিনী হলেও তার তথ্য দাখিল করতে হবে তাঁদের স্বামী বা স্ত্রীদের। সরকারের কাছে থেকে তো তাঁরা বাড়ি ভাড়ার টাকা নিচ্ছেন না। নির্দেশিকায় থাকা এই বিষয়গুলি নিয়ে সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন কোনও কোনও স্কুলের প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষিকারাও। তাঁরা বলছেন, ‘‘সরকারি চাকরি না করলেও কাউকে কী বলা যায় আপনার স্ত্রী বা স্বামী-র ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স বা জিএসটি নম্বর নিয়ে আসুন। বেসরকারি সংস্থা হলে পে স্লিপ দিন। আপনার স্ত্রী গৃহিনী হলেও তাঁকে ঘোষণাপত্র দিতে হবে।’’ তাঁদের বক্তব্য, কার কাছে ‘প্রমাণীকৃত’ করে স্ত্রীদের গৃহিণী হওয়ার ঘোষণাপত্র দিতে হবে, নির্দেশিকায় তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। কারও কারও মন্তব্য, ‘‘এ অনধিকার চর্চা।’’
দিনকয়েকের মধ্যেই প্রতিটি স্কুলকে ওই রিপোর্ট চূড়ান্ত করতে হবে। কিন্তু নির্দেশিকার ওই বিষয়গুলি নিয়ে দোটানায় পড়েছেন প্রধান শিক্ষক, টিআইসি-রা। ডিআই রেজাউল হক বলেন, ‘‘রাজ্যের নির্দেশে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেখানে এমন কোনও বিষয় রয়েছে কি না, তা দেখে বলতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy