Advertisement
১০ মে ২০২৪
সচিবকে চিঠি নেপালের

বালির জল গড়াতে পারে বিধানসভায়

নদী থেকে ট্রাক্টরে বালি তুলে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ব্লক এলাকায় যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদের অনেকের আপত্তি এই জায়গাটাতেই। ঝালদার ট্রাক্টর মালিকেরা সংগঠন গড়ে এর প্রতিবাদে নেমেছেন।

পুরুলিয়ার কাঁসাই নদীর একটি ঘাটে চলছে বালি তোলা। ফাইল চিত্র

পুরুলিয়ার কাঁসাই নদীর একটি ঘাটে চলছে বালি তোলা। ফাইল চিত্র

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০৭
Share: Save:

এক ট্রাক্টর বালির দাম পুরুলিয়ায় কত?

এক একটা জায়গায় এক এক রকমের।

নদী থেকে ট্রাক্টরে বালি তুলে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ব্লক এলাকায় যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদের অনেকের আপত্তি এই জায়গাটাতেই। ঝালদার ট্রাক্টর মালিকেরা সংগঠন গড়ে এর প্রতিবাদে নেমেছেন।

বিধায়ক নেপাল মাহাতো জানাচ্ছেন, জল গড়াতে চলেছে বিধানসভা পর্যন্ত। বালি সংক্রান্ত এই সমস্ত ব্যাপার দেখে বিধানসভার সাব-অর্ডিনেট লেজিসলেটিভ কমিটি। নেপালবাবু সেটির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘‘কমিটির সদস্যদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনার পরে মাইনস অ্যান্ড মিনারেলস দফতরের প্রধান সচিবকে বৈঠক ডাকার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’

ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, জেলার বিভিন্ন বালির ঘাট লিজ দিয়ে দেওয়া হয়। ট্রাক্টর পিছু বালির জন্য ইজারাদার সরকারকে কত টাকা দেবেন, সেটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকে। দফতরের ঝালদা ১ ব্লকের আধিকারিক স্বপন সাহা বলেন, ‘‘ঘাটের ইজারাদার কত দরে বালি বেচবেন, সেই ব্যাপারে আমরা সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারি না।’’ এই প্রসঙ্গে ইজারাদারদের বক্তব্য, তাঁরা ব্যবসা করছেন। ফলে দাম হাঁকার ব্যাপারে তাঁদের হক থেকেই যায়।

কিন্তু কতদূর? প্রশ্ন তুলছেন ঝালদার বাসিন্দা অসিত কান্দুর মতো কেউ কেউ। অসিতবাবু বলেন, ‘‘এক ট্রাক্টর বালি ঝালদায় ক’দিন আগেও যে দামে পাওয়া যেত, এখন সেটাই তিন গুণ হয়ে গিয়েছে। গরীব বা নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষজন কোথায় যাবেন?’’ একই বক্তব্য ঝালদা তৃণমূল নেতা চিরঞ্জীব চন্দ্রেরও। তিনি বলেন, ‘‘বালির মতো প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে ইচ্ছামতো টাকার খেলা চলতে পারে না।’’ দাবি উঠছে, বিষয়টাতে সরকারের রাশ থাকুক।

ইচ্ছামতো বালির দর হাঁকার বিরুদ্ধে সম্প্রতি আন্দোলনে নেমেছিলেন ঝালদার ট্রাক্টর মালিকদের একাংশ। তাঁরা গড়ে তোলেন ‘জঙ্গলমহল ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশন’।

আন্দোলনের জেরে নির্মাণের কাজে বালির জোগানে টান পড়ে। ট্রাক্টর মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শশীভূষণ মিশ্র বলেন, ‘‘রসিদে দেখতে পাই, এক ট্রাক্টর বালির জন্য সরকার আড়াইশো টাকা করে নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। জেলার অন্য কিছু অনেক জায়গায় দর তো আরও বেশি বলে শুনতে পাই।’’ তাঁদের অভিযোগ, দামে লাগাম না থাকায় কোপটা পড়ছে সাধারণ মানুষের উপরেই।

নেপালবাবু বলেন, ‘‘ঝালদায় সম্প্রতি ট্রাক্টর মালিকেরা আন্দোলনে নেমেছিলেন। তার পরেই বিষয়টি আমাদের নজরে আসে।’’ তিনি জানান, মাইনস অ্যান্ড মিনারেলস দফতরের প্রধান সচিবকে কমিটির পক্ষ থেকে বৈঠক ডাকার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হবে, ইজারাদার কী দরে বালি বেচবেন সেই ব্যাপারে কী নির্দেশিকা রয়েছে। স্পষ্ট নির্দেশিকা না থাকলে এ বারে সেটা করার চেষ্টা হবে বলে দাবি করেছেন নেপালবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আইনের ফাঁক গলে বালি নিয়ে যা খুশি করতে পারেন না ইজারাদারেরা।’’

নেপালবাবুর দাবি, নদীর এক একটি ঘাটের সীমানা কতটা, তা আগে বেঁধে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের। এখন সেই ক্ষমতা রাজ্যের হাতে। প্রতিনিধি হিসেবে কাজটা করেন জেলাস্তরের কোনও পদস্থ আধিকারিক। কিন্তু জেলা স্তর থেকে সর্বত্র নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না বলে দাবি তাঁর। নেপালবাবু বলেন, ‘‘এর সুযোগ নিয়ে অনেকেই সীমানা টপকে বালি তুলে নিচ্ছে। দেখার কেউ নেই।’’ তাঁর অভিযোগ, এতে রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশেরও।

চলতি মাসেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের প্রধান সচিবের সঙ্গে কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা বলে জানাচ্ছেন বিধায়ক। সেখানে সীমানা সংক্রান্ত ব্যাপারও তুলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Legislative Assembly Sand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE