টোটো বাড়ছে শহরে
১৯৮৪ সালে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে একটা রিকশা কিনেছিলাম। তারপর থেকে একটাই রুটিন আমার। সকাল সকাল সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডের সামনে রিকশা লাগিয়ে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করি। বাস থেকে নামা যাত্রীদের নিয়ে, কখনও স্টেশন, কখনও হাসপাতাল, কখনও প্রশাসন ভবন বা শহরের পাড়ায় পৌঁছে দেওয়া। প্রতিদিন রিকশা থেকে যা আয় হয়, তাতেই চলে এক মেয়ে, তিন ছেলে আর আমাদের স্বামী-স্ত্রীর।
দিন গেলে ১৫০-২০০ যাই বা আয় হত, ছ’ জনের সংসার চলে যেত টেনেটুনে। কিন্তু শহরে টোটোর রমরমায় মাত্র মাস তিনেকের মধ্যেই দিনযাপন অন্যরকম হয়ে গিয়েছে আমাদের। এখন সময়মত রিকশা লাগালেও যাত্রী হয় না! দিনে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা আয় করতেই হিমসিম অবস্থা। দিন দিন যেভাবে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, তাতে আর রিকশা চালিয়ে সংসার চলবে না। বলা হয়, আমরা নাকি খারাপ ব্যবহার করি। বেশি ভাড়া নিই। কেউ কেউ এমন করলেও নিজে কখনও বেশি ভাড়া কোনও যাত্রীর কাছ থেকে নিইনি। বরং অসুস্থ গরিব রোগীকে বিনা ভাড়ায় হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি, এমনও হয়েছে।
প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। গাফিলতি তো রয়েছেই প্রাশাসনের। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা নেই। পুরসভার গাফিলতিতে শহরের বাইরে থেকে বহু রিকশা এসে প্রতিদিন সিউড়িতে চলে। পুরসভা অনুমোদিত স্ট্যান্ড ছাড়া যেখানে সেখানে রিকশা লাগায়। এতে শহরে যানজটের সমস্যা আগেই বাড়িয়েছিল। টোটো আসায় সেটা বাড়ল। প্রশাসন বলছে, টোটো চালানোর অনুমতি দেয়নি তারা। অথচ দিন দিন টোটোর সংখ্যা বাড়ছে। যাত্রীরাও টোটোতেই যেতে চাইছেন। আমার টোটো কেনার ক্ষমতা নেই। জানি না, এ শহরে আমাদের মতো মানুষের সংসার চলবে কী করে!
বরুণ দাস, রিকশা চালক
পথের জট কাটান
সাইকেলেই স্কুল যেতাম। মাস ছয়েক আগে, সাইকেল ছেড়ে স্কুটি কিনেছি। স্কুল, কলেজের পাঠ শেষ করে এখন আমি স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রী। একা যেতে যেতে রোজ মনে হয়, এতদিনেও শহরের ট্রাফিক নিয়ম না মানার ধারা সেই একই রয়েছে। ট্রাফিক রুল ভাঙার প্রবণতা যেন মানুষের মধ্যে বেড়েই চলেছে। পাল্লা দিয়ে রাস্তায় বাড়ছে হেলমেটহীন বাইক অরোহীদের দাপট। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এই শহরের বাসিন্দারা বা চার চাকা চালকরাও ট্রাফিক নিয়মের তোয়াক্কা করেন না! এক একসময় যানজটে থমকে থাকতে হয়। যাঁরা নিয়ম মানতে চাইছেন, তাঁরাই যেন অপরাধী। প্রশাসন একটু সতর্ক হলে, পথের জট কাটে শহরে। আর একটি বিষয় না বলে পারছি না, সিউড়ি শহরজুড়ে আবর্জনার স্তূপের কথা। অধিকাংশ ওয়ার্ডেই একটি ভ্যাট পর্যন্ত নেই। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা, জেলাশাসকের বাংলোর পাশেও আবর্জনা জমে থাকে রাস্তায়। পুকুরের জলে গিয়ে পড়ায়, জল দূষিত হয়। রোগ ছাড়ায়। অনেক হল, এ সব দিকে এ বার নজর দিক প্রশাসন।
নাসরিন আখতারি, ছাত্রী
হেরিটেজ কমিটি হোক
ব্রিটিশ আমলেও এখনকার মতো সিউড়িই ছিল জেলা সদর। গোটা শহর জুড়ে এখনও ছড়িয়ে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন ইংরেজ আমলের সেই স্মৃতি-ছাপ। কালেকটোরেট ভবন, জজ কোর্ট, জেলাশাসকের বাংলো, সংশোধনাগার, জেলা স্কুল, জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয়, চার্চ, সিউড়ির সাহেবপাড়া— এ সবকিছুই সেই আমলের। ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িগুলিতে এখনও সরকারি অফিস কাছাড়ি রয়েছে। সেগুলি ঠিকঠাক থাকলেও এমন অনেক কিছু যা প্রশাসনিক উদাসীনতায় নষ্ট হয়েছে। কয়েক দশক আগেও প্রশাসনভবনের কাছে চালু অবস্থায় ছিল একটি সুদৃশ্য ফোয়ারা। বর্তমানের আবগারি কার্যালয়েই ছিল একসময়ের আস্তাবল। সেগুলির চিহ্ন মাত্র নেই আর! তেমনভাবেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে শহরের বড়বাগান এলাকায় থাকা বহু বিখ্যাত মানুষের সমাধিক্ষেত্র। সিউড়ি শহরে নারীশিক্ষা ও ইংরাজী শিক্ষা বিস্তারে যে মানুষটি পথিকৃৎ সেই রেভারেণ্ড জেমস উইলিয়ামসনের সমাধি ক্ষেত্রটি রয়েছে এখানেই। এছাড়াও রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সমাধি। যেগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটির সমাধি ফলক চুরি হয়ে গিয়েছে। যেগুলি রয়েছে, অবিলম্বে সেগুলির সংরক্ষণ প্রয়োজন। আমার আক্ষেপ, সিউড়ি ছাড়া অধিকাংশ পুরসভায় একটি করে হেরিটেজ কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিই এসব দেখাশোনা করে। সিউড়িতে এমন একটি কমিটি দ্রুত গঠিত হোক।
সুকুমার সিংহ, প্রাক্তন সরকারি কর্মী
মেয়েদের নিরাপত্তা চাই
সিউড়ি শহরে সকাল বিকেল বেড়ানোর মতো মাঠ বলতে দু’টি। সন্ধ্যার সময় সেই মাঠেই এলাকার মহিলাদের কটুক্তি শুনতে হয়েছে। যার জন্য সন্ধ্যার দিকে মহিলারা খুব একটা নিরাপত্তা বোধ করেন না ওই মাঠে। একইভাবে স্কুল ছুটির সময় যখন স্কুল থেকে মেয়েরা বাড়ি ফেরে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় তাদের। তারা যেন সমস্যা না পড়ে, সে জন্য স্কুল ছুটির সময়, বা সন্ধ্যার দিকে পুলিশি টহল দরকার। শহরে মেয়েদের নিরাপত্তা চাই। সিউড়ি শহরে এমনিতেই প্রেক্ষাগৃহ কম। তার উপর দীর্ঘ দিন ধরে রবীন্দ্রসদনে কাজ চলছে। সংস্কারের জন্য বন্ধ থাকায়, সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মীদের। দ্রুত কাজ শেষ করতে প্রশাসন উদ্যোগ নিলে আমাদের শহরবাসীর উপকার হয়।
মহুয়া সাহা, নাট্যকর্মী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy