গ্রামের মাথায় মেঘ জমলেই প্রমাদ গুনতে শুরু করেন উলকুণ্ডার সাগর চন্দ্ররা। বিকেল বিকেল মেঘ করলে, গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়েন লোকপাড়ার আনন্দময় কোলে, তামাল মণ্ডলরা!
উঠোনে বড়ি ভিজলে ভিজুক কিংবা বেড়ার গায়ে কাপড়, সবার আগে মোমবাতি, হ্যারিকেন-লন্ঠন হাতের কাছে রাখা চাই!
কেন না, একবার বৃষ্টি শুরু হলেই অন্ধকারে ডুবে যায় ময়ূরেশ্বরের গাঁ-ঘর। তাঁদের অভিযোগ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুৎ ফেরে না এলাকায়!
বৃষ্টির দিনে কার্যত, আতঙ্কে দিন কাটে এলাকার বাসিন্দাদের। ফুটো চাল বেয়ে বৃষ্টিতে ঘর ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও, বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখলেই কপালে ভাঁজ পড়ে তাঁদের। তাঁদের দাবি, সামান্য বৃষ্টিতেই তার ভিজে গেলেই উধাও হয়ে যায় বিদ্যুৎ। ক্রমশ ক্ষোভ জমছে এলাকায়। বিদ্যুৎ দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার সহস্রাধিক গ্রামে ৪ টি ফিডারের মাধ্যমে স্থানীয় কোটাসুর সাব স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়ে তুমুল ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘গ্রীষ্মকালে ‘লো ভোল্টেজের’ দাপট তো রয়েইছে। যোগ হয়েছে বৃষ্টিজনিত কারণে ভোগান্তি। ছিটেফোঁটা বৃষ্টিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উধাও হয়ে যায় বিদ্যুৎ। মেরামতির পর কিছুক্ষণ বিদ্যুৎ চালু হতে না হতেই ফের একই কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিস্তৃণ এলাকা। বিদ্যুৎ দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। এর ফলে আকাশে মেঘ দেখলেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কায় ভোগেন স্থানীয় ভগবতীপুরের সুশান্ত দে, নবগ্রামের কেশব ভাণ্ডারী, লোকপাড়ার আনন্দময় কোলে, তামাল মণ্ডলরা।
তারা জানান, বৃষ্টিতে তার ভিজে গেলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ উধাও। কত দিন যে এভাবে বিদ্যুৎ চলে যাবে!
কেন এমন হচ্ছে? বিদ্যুৎ দফতরেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, জোড়াতালি মেরামতির কারণেই ভোগান্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। সূত্রের হিসাব অনুযায়ী ৩০/৩৫ বছর আগে ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়। তারপর থেকেই চলছে প্রয়োজন মাফিক তাৎক্ষণিক জোড়াতালি দিয়ে মেরামতির কাজ। মূলত সেই কারণে বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যহত হচ্ছে। কারণ কুপরিবাহী ‘পিন ইন্সুলেটর এবং ডিসের’ সাহার্য্যে ১১০০০ ভোল্টের বিদ্যুৎ পরিবাহী তার টাঙানো হয়।
দীর্ঘ দিন আগে লাগানো ওইসব সামগ্রী পুরোপুরি বদলানোই হয়নি। বহু ‘পিন ইনসুলেটর এবং ডিসে’ বিভিন্ন কারণে ফাটল সৃষ্টি হয়ে রয়েছে। অন্যান্য সময় ওইসব সামগ্রীতেই বিদ্যুৎ সরবরাহে তেমন কোনও সমস্যা না হলেও বৃষ্টিতে ‘পিন এবং ডিসের’ ফাটল বেয়ে জল ঢুকে শর্টসার্কিট ঘটায়। আবার বাজ পড়েও নতুন করে ফাটল সৃষ্টি হয়। তখন হয় মেইন ফিউজ পুড়ে কিংবা সাবস্টেশনের ‘গিয়ার টিপ’ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বিদ্যুৎকর্মীরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসাবে দু’একটি ‘পিন অথবা ডিস’ পরিবর্তন করেন। কিন্তু ততক্ষণে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় ফাটল ধরা ‘পিন-ডিস’গুলিও শুকিয়ে সাময়িক বিদ্যুৎ সরবরাহের উপযোগী হয়ে ওঠে। বিদ্যুৎ কর্মীরা ওই অবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করে সাবস্টেশনে ফিরতে না ফিরতে ফের বৃষ্টিতে অন্ধকারে ডুবে যায় গ্রামের পর গ্রাম। শুরু হয় বিদ্যুৎ দফতরকে দুষে গাঁ-ঘরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ।
কনুটিয়ার মহঃ জানে আলম, উলকুণ্ডার সাগর চন্দ্ররা বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতির মাসুল দিতে হয় আমাদের। দুঃসহ গরমে বাড়িতে থাকা দায় হয়ে তো ওঠেই, শিকেয় ওঠে ছেলেমেয়েদের পঠনপাঠনও। অথচ বিদ্যুৎ দফতরে অভিযোগ জানিয়েও কোন লাভ হয় না। নেতা-মন্ত্রীদের কাছে গিয়েও কোনও ফল হয়নি।’’
জানা গেল, তারের অবস্থাও তথৈবচ। বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের ব্যাখ্যা, ২৫/৩০ বছরের পুরনো তারেই চলছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে বলে বিদ্যুৎকর্মীদের একাংশই জানিয়েছেন। ঘন ঘন জোড়া দেওয়ার ফলে ওইসব তারের পরিবাহিতা যেমন অনেক কমে গিয়েছে তেমনই সর্টসার্কিটের সময় ফিউজের তার পোড়ার আগেই কমজোরি জায়গায় তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বিদ্যুৎকর্মীরা অবশ্য জোড়াতালি মেরামতের পাশাপাশি পরিকল্পনাহীন পরিকাঠামোকেও দায়ি করেছেন। তাঁদের মতে, ‘‘দেখভালের এবং দ্রুত মেরামতির জন্য সাধারণত রাস্তার পাশে পাশে বিদ্যুতের মূলপরিবাহী তার টাঙানো উচিত। মূলপরিবাহী তার থেকে ‘ফিউজ আইসুলেটারের’ মাধ্যমে আলাদা আলাদা গ্রামে ঢোকানো হলে প্রাথমিকভাবে খরচ কিছুটা বেশি হলেও আজকে এই সমস্যা এত প্রকট হত না।’’ তাঁরা জানাচ্ছেন, অন্তত একসঙ্গে বিস্তৃর্ণ এলাকা অন্ধকারে ডুবত না।
ময়ূরেশ্বর গ্রুপ সাপ্লাইয়ের স্টেশন ম্যানেজার তথা অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সৌম্যজিৎ ভৌমিক বলেন, ‘‘এখন আর ওই পরিস্থিতি নেই। আসলে, সাব-স্টেশন থেকে ওইসব এলাকার দূরত্ব অনেক বেশি, ওই জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হলেও হতেও পারে। আমরা সংস্কারের জন্য উপরমহলে কথা বলেছি।’’
ভাসল কজওয়ে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ফের ভাসল রানিগঞ্জ- মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে থাকা খয়রাশোলের শাল নদীর কজওয়ে। বৃহস্পতিবার দিনভর ব্যাহত হল আসানসোল, সিউড়ি রুটের বাস চলাচলে। ঝুঁকি নিয়ে কজওয়ে পারাপার করতে গিয়ে যাতে কেউ বিপদে না পড়েন, তা দেখতে কজওয়ের দু’দিকে উপস্থিত ছিল দুবরাজপুর ও খয়রাশোল থানার পুলিশ। কজওয়ের দু’দিকে আটকে পড়ে প্রচুর যানবাহন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy