Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অভিষেকের সামনেই জোর ঝগড়া

দল সূত্রের খবর, শুক্রবারের বৈঠকে অভিষেক পূর্ণবাবু ও শান্তিভূষণবাবুকে এক সাথে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

সতর্কতা: কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা পার হয়েই নেতা-কর্মীরা বৈঠকে এলেন। ছবি: সুজিত মাহাতো

সতর্কতা: কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা পার হয়েই নেতা-কর্মীরা বৈঠকে এলেন। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৩
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলে দ্বন্দ্ব রুখতে বৈঠক করতে এসেছিলেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর সামনেই বিতণ্ডায় জড়ালেন রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি ও নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদবের অনুগামীরা। বিবাদ থামাতে শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হল খোদ অভিষেককে। দুই নেতাকেই দিলেন কড়া নিদান। ঝালদা পুরসভা নিয়েও তৃণমূল নেতৃত্বের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হন তিনি। শুক্রবার পুরুলিয়া সার্কিট হাউসে এমনই ঘটেছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

দল সূত্রের খবর, শুক্রবারের বৈঠকে অভিষেক পূর্ণবাবু ও শান্তিভূষণবাবুকে এক সাথে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পঞ্চায়েতে নিতুড়িয়াতে ফল খারাপ হলে দল কড়া ব্যবস্থা নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখেন অভিষেক। তবে কিছুটা হলেও এ দিনের বৈঠকে অ্যাডভান্টেজ পেয়েছেন বিধায়ক। গত বিধানসভা নির্বাচনে শান্তিভূষণবাবু তাঁর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত করেছেন বলে এ দিন বৈঠকে অভিযোগ তোলেন পূর্ণবাবু। পূর্ণচন্দ্রবাবু তাঁর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন বলে শান্তিভূষণবাবু বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তা ধোপে টেকেনি। অভিষেক তাঁকে সাফ জানিয়ে দেন, বিধানসভা নির্বাচনে শান্তিভূষণবাবুর কার্যকলাপ সম্পর্কে তাঁর কাছে নির্দিষ্ট ভাবে খবর রয়েছে।

নিতুড়িয়া ব্লকে ওই দুই নেতার সম্পর্ক বিধানসভা ভোটের পর থেকে তলানিতে এসে ঠেকেছে। তাঁদের দ্বন্দ্বের জেরে নিতুড়িয়ায় এখনও ব্লক কমিটিও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এমনকী ব্লক সভাপতি পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারেননি জেলা নেতৃত্ব। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত ভোটে দল ভুগতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে তৃণমূলে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিন বক্তব্য রাখতে উঠে বিধায়ক সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে বিধানসভা নির্বাচনে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তোলেন। শান্তিভূষণবাবু তা মানতে চাননি। সেই সময়ে অভিষেকের সামনেই বিবাদ বেধে যায় দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে। দু’জনকে এক সঙ্গে কাজ করতে বলেন অভিষেক। জানিয়ে দেন, শান্তিভূষণবাবুর বিরুদ্ধে বিধায়কের তোলা অভিযোগ প্রমাণিত হলে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্য দিকে, রঘুনাথপুর বিধানসভারই সাঁতুড়ি ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি বাপ্পা মুখোপাধ্যায়ের সাথে ব্লক সভাপতি রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর আদৌও বনিবনা নেই। এ দিন দু’জনেই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিষেকের কাছে নালিশ ঠোকেন। তাঁদেরও মিলেমিশে কাজ করার নিদান দেওয়া হয়। পাড়া ব্লক থেকে জেতা জেলা পরিষদে সহ-সভাপতি মীরা বাউরির বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে অভিযোগ তুলে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁকে ফের প্রার্থী না করার দাবি তুলেছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সীমা বাউরি। এ জন্য তাঁকে কড়া কথা শুনতে হয়েছে।

কংগ্রেস জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো বাঘমুণ্ডির বিধায়ক। সেই বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েত সমিতি-সহ সব পঞ্চায়েত এ বার তৃণমূলের চাই বলে দাবি করেছেন অভিষেক। দল সূত্রে খবর, বাঘমুণ্ডির জন্য তিনি যুব নেতা সুশান্ত মাহাতোকে দায়িত্ব দেন।

তবে এই বিধানসভার আওতাধীন ঝালদা পুরএলাকায় দলের কাজকর্ম নিয়ে যে তিনি বিরক্ত, তা স্পষ্ট ভাষাতেই বুঝিয়ে দেন। বৈঠকের ভিতরেই ঝালদার পুরপ্রধান ও এক নেতা বিতণ্ডায় জড়ান। দলের এক নেতা বোঝানোর চেষ্টা করেন, ঝালদা পুরসভার অন্দরে দলীয় কাউন্সিলরদের ঐক্যমত্যের অভাবের কারণে দ্বন্দ্বের ছবি প্রকট হচ্ছে। পুরপ্রধান অভিযোগ তোলেন, কয়েকজন কাউন্সিলর দল ছাড়ার প্রস্তুতি শুরু করে কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।

এমন বিতণ্ডায় বিরক্ত যুব সভাপতি তখন সরাসরিই জানিয়ে দেন, কেউ দল থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে রাস্তা খোলা রয়েছে। এখনি চলে যেতে পারেন। তবে দল থেকে বেরিয়ে গেলে ফেরার রাস্তা কিন্তু বন্ধ, সেটাও খেয়াল রাখতে বলেন। দ্বন্দ্ব ভুলে ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতিও পেতে হবে বলে নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন তিনি।

আড়শা পঞ্চায়েত সমিতিতে কেন বার বার অনাস্থা আসছে, তা ব্লক নেতৃত্বের কাছে জানতে চান অভিষেক। ব্লকের দুই নেতা জানান, দলের সঙ্গে সমন্বয় না রেখে পঞ্চায়েত সমিতিতে কাজ হচ্ছে। আবার পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী অভিযোগ তোলেন, তিনি দলের সহযোগিতা পান না। জেলা সভাপতি শান্তিরামবাবুকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন, কখনও পরিস্থিতি এমন হয় যে দলের সংখ্যা গরিষ্ঠের পাশেই থাকতে হয়। জেলা সভাপতির কাছে এমন কথা শুনে অভিষেক পরিষ্কার ভাষায় জানান, দলের নীতি মোতাবেক কাজ করতে হবে। সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশ যাই বলুক, নীতির প্রশ্নে কোন আপস নয়।

জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো, জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো-সহ অন্য নেতৃত্বকে পাশে বসিয়ে অভিষেক বার্তা দেন, ‘‘তাঁর কাছে সব খবরই জেলা থেকে পৌঁছয়। সামনে নির্বাচন, তাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE