Advertisement
০১ মে ২০২৪

কোথাও মার খেল বিজেপি, পাল্টাও

লাভপুরের কাশিয়াড়া ১৭১ নম্বর বুথে যেমন বিজেপির এজেন্টকে মারধরের পরে বুথ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

মুরারই থানার হাবিসপুর গ্রামে পুলিশি টহল। নিজস্ব চিত্র

মুরারই থানার হাবিসপুর গ্রামে পুলিশি টহল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ০১:২৩
Share: Save:

মার, পাল্টা মারে তাতল ভোটের সকাল-বিকেল। বিরোধী দলের নেতারা এর কিছু ঘটনাকে প্রতিরোধ হিসেবে দেখছেন। তৃণমূলের তরফে অবশ্য মারধরের অভিযোগ উড়িয়ে অবাধ ভোট হয়েছে বলেই দাবি করা হয়েছে।

লাভপুরের কাশিয়াড়া ১৭১ নম্বর বুথে যেমন বিজেপির এজেন্টকে মারধরের পরে বুথ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সোমবার বিকেলের ওই ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। জওয়ান এবং পুলিশ অবশ্য ওই অভিযোগ মানেননি। অভিযোগ মানেননি তৃণমূল নেতারাও। আবার সিউড়ি ১ ব্লকের ভুরকুনা গ্রাম পঞ্চায়েতের কামারডাঙায় ভোট দিতে যাওয়ার পথে তৃণমূল কর্মীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। মহম্মদবাজারের লোহাবাজারেও বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে।

লাভপুরের ঘটনার জেরে কিছু ভোটার ভোট না দিয়েই বাড়ির পথে পা বাড়ান। এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ছুটে আসেন পুলিশ, প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ডেকে আনেন। ফলে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বুথের সামনে দেখা যায় লম্বা লাইন। বিজেপির এজেন্ট প্রিয়রঞ্জন মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘বুথ দখলের উদ্দেশ্যে তৃণমূলের লোকেরা মারধর করে বুথ থেকে বের করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা বাধা দিতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়।’’ প্রিসাইডিং অফিসার গৌতম চক্রবর্তী জানান, বুথের ভিতরে ওই ধরণের কোনও ঘটনা ঘটেনি। বাইরে বুথের কাছাকাছি সাইকেল নিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল হয়েছিল। তাঁর কাছে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি বলেও দাবি গৌতমবাবুর। তৃণমূলের লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সর্বত্র শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। হার নিশ্চিত জেনে ওরা ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।’’

সিউড়ি ১ ব্লকের ভুরকুনার কামারডাঙায় তৃণমূলের কর্মীরাই প্রথমে আক্রমণ চালায় বলে পাল্টা দাবি স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের। তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, সোমবার সকালে তাঁদের কয়েক জন কর্মী ভোট দিতে কামারডাঙা যাচ্ছিলেন। মাঝপাড়ার বিজেপি তাঁদের পথ আটকায় এবং বাঁশ, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের উপরে চড়াও হয়। তখন বেধড়ক মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনায় তিন তৃণমূল কর্মী আহত হন। তাঁরা সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় বিজেপি নেতা উদয় হাজরার অবশ্য দাবি, ‘‘ওরা প্রথমে আমাদের উপরে আক্রমণ চালায়। আদিবাসী পাড়ায় তাণ্ডব করে। প্রতিরোধ করতে গিয়ে আমাদের চার জন আহত হন।’’

মহম্মদবাজার থানার লোহাবাজার ২৭ নম্বর বুথের কাছে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে প্রথমে ধস্তাধস্তি ও পরে হাতাহাতি হয় বলে অভিযোগ। মহম্মদবাজার অঞ্চলের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি অলোক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘বিজেপির ছেলেরা বুথের কাছেই ভোটারদের বিজেপিকে ভোট দেওয়ার কথা বলছিল। সেই সময় আমাদের দুই কর্মী ভোট দিয়ে ফিরে আসছিলেন। ওই কথার প্রতিবাদ করায় বিজেপির কর্মীরা সন্দীপ দাস ও প্রদীপ দাসকে মারধর করে।’’ মহম্মদবাজার পুলিশ এলে সকলেই পালিয়ে যায়। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিজেপির সাত জনের নামে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য ফণিরঞ্জন রায়। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি নয়, তৃণমূল কর্মীরাই বুথের কাছে মানুষকে জোর করে তৃণমূলে ভোট দেওয়ার কথা বলছিল। তার প্রতিবাদ করাতেই মারধর।’’ ঘটনায় বিজেপির পক্ষ থেকেও তৃণমূলের বেশ কয়েক জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের হবে বলে খবর।

লাভপুরের দ্বারকা বুথেও বিজেপি কর্মীদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূল অভিযোগ মানতে চায়নি। অন্য দিকে, নানুরের বেলুটি হাইস্কুল বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা প্রতিবন্ধী ভোটারের পছন্দের ব্যক্তিকে দিয়ে ভোট দিতে বাধা দেওয়ায় তৃণমূল সহ অন্য দলের এজেন্টরা সাড়ে চারটের পরে বুথ থেকে বেরিয়ে যান। তাতে দীর্ঘ সময় ভোট বন্ধ থাকে। বিডিও (নানুর) অরূপকুমার মণ্ডল এমন ঘটনার কথা জানা নেই বলে দাবি করেছেন। বিজেপির পোলিং এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে মুরারইতে।

বিজেপির অভিযোগ, প্রথম ঘটনাটি ঘটে মুরারই থানার সাফুয়া গ্রামের ৮৭ নম্বর বুথে। সোমবার সকালে সুখচাঁদ সরকার বিজেপির পোলিং এজেন্টদের নিয়ে বুথের দিকে গেলে তৃণমূলের কর্মীরা মেরে নাক ফাটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। বাচাঁতে গিয়ে মার খান নিহার মণ্ডল। বিজেপির পোলিং এজেন্ট ছাড়াই ওই বুথে ভোটগ্রহণ হয়। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আরও অভিযোগ, মহুরাপুর অঞ্চলে সাবাইপুর ও পারকাদি গ্রামে বিজেপির কোনও এজেন্ট বসতে দেওয়া হয়নি। গোড়শা পঞ্চায়েতের ১৯ নম্বর বুথে কংগ্রেসের পোলিং এজেন্টকে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়। সিপিএমের পক্ষ থেকে মুরারই কবি নজরুল কলেজের বুথে বিরোধীদের এজেন্ট দিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে।

পাড়ুইয়ের ২৬, ২৭ ও ৩০ নম্বর বুথেও বিজেপির এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পাড়ুইয়ের নিতাইপুরে বোমাবাজির খবরও আসে। ইলামবাজারের ডুমুনপুরে তৃণমূল ছাড়া অন্য দলের এজেন্টদের থাকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পাড়ুই থানার বনশঙ্কা গ্রাম পঞ্চায়েতের তালিবপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ২৮৯/ ২৮০ বুথে ভোট নিয়ে বচসা হয় বাহিনীর সঙ্গে বুথকর্মীদের। এক ভোটকর্মী আহত হন। উত্তেজিত জনতার ইটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ানও আহত হন। ইলামবাজারের ব্লক সভাপতি ফজরুল রহমান বিজেপির সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE