Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অস্ত্রের ‘শোভা’ নবমীর যাত্রায়

ত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সেখানে ২২ থেকে ৩০ বছরের জনা পঞ্চাশেক যুবকের হাতে তলোয়ার, টাঙ্গি প্রভৃতি অস্ত্র দেখা যায়। তবে, শান্তিপূর্ণ ভাবেই শোভাযাত্রা হয়।

প্রকাশ্যে: রঘুনাথপুর শহরের বালিচূড়া এলাকায় অস্ত্র হাতে শোভাযাত্রা। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ্যে: রঘুনাথপুর শহরের বালিচূড়া এলাকায় অস্ত্র হাতে শোভাযাত্রা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২৬
Share: Save:

নির্বাচনী বিধি চালু হয়ে যাওয়ায় অস্ত্র নিয়ে রামনবনীর শোভাযাত্রা করা যাবে না বলে বারবার আয়োজকদের জানিয়েছিল জেলা পুলিশ ও প্রশাসন। কিন্তু, শনিবার বিকালে সেই নিয়ম ভেঙে অস্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রা করার অভিযোগ উঠল রঘুনাথপুর শহরের দু’টি শোভাযাত্রার আয়োজনদের বিরুদ্ধে।

এ দিন বিকালে রঘুনাথপুর শহরে রামনবমীর দু’টি শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। একটি বার হয় একটি আশ্রমের কাছ থেকে। অন্যটি ধোবাপাড়া এলাকা থেকে বার হয়। দু’টি শোভাযাত্রায় শ’পাঁচেক করে লোক ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সেখানে ২২ থেকে ৩০ বছরের জনা পঞ্চাশেক যুবকের হাতে তলোয়ার, টাঙ্গি প্রভৃতি অস্ত্র দেখা যায়। তবে, শান্তিপূর্ণ ভাবেই শোভাযাত্রা হয়।

তবে ওই কমিটিগুলি কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। শোভাযাত্রার আগেপিছে কিছু সংখ্যায় পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারকে দেখা যায়। তাঁদেরও লোকজনের হাত থেকে অস্ত্র সরিয়ে নিতে দেখা যায়নি বলে দাবি। ওই দুই শোভাযাত্রাকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

এই জেলায় শনিবার ও রবিবার মোট ১৯৩টি শোভাযাত্রা বার হওয়ার কথা। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘প্রশাসন আগেই রামনবমীর শোভাযাত্রার উদ্যোক্তাদের জানিয়ে ছিল, নির্বাচনী বিধি বলবৎ হওয়ায় অস্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রা করা যাবে না। তারপরেও কেউ সেই নির্দেশ অমান্য করলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’’ যদিও জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া দাবি করেন, ‘‘জেলার কোথাও অস্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রা হয়েছে বলে জানি না।’’

এ দিন সকালে পুরুলিয়া শহরে রামনবমীর একটি বিরাট শোভাযাত্রা বেরোয় পুরুলিয়া শহরের গোশালা হনুমান মন্দির থেকে। সেখানে আবার উচ্চস্বরে সাউন্ডবক্স বাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘পুরুলিয়া শহরের শোভাযাত্রায় অস্ত্র না থাকলেও চড়া শব্দে বক্স বেজেছে। শব্দবিধি আইন মোতাবেক উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’’ আয়োজকদের তরফে বজরং দলের জেলা কমিটির সহ সংযোজক তারকনাথ পরামাণিক দাবি করেন, ‘‘কোথাও কোথাও সামান্য একটু চড়া শব্দে বাজলেও আমরা সঙ্গে সঙ্গে শব্দের মাত্রা কমিয়েছি।’’

বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে ওই শোভাযাত্রা রাম-হনুমানের মূর্তি নিয়ে অলঙ্গিডাঙা মোড়, গাড়িখানা, সদরপাড়া, পোস্টঅফিস মোড়, চকবাজার, মধ্যবাজার, নামোপাড়া, রথতলা, স্টেশন, রাধাকৃষ্ণ মোড়, নীলকুঠিডাঙা, পুরাতন পুলিশ লাইন, হাটের মোড়, চাঁইবাসা রোড হয়ে পুরো শহর পরিক্রমা করে।

শোভাযাত্রায় ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। মহিলারা ছিলেন পুরো ভাগে। বিজেপির পুরুলিয়া কেন্দ্রের প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো থেকে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী-সহ নেতৃত্বকেও দেখা যায় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার জেরে একাধিক রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়। আয়োজকদের দাবি, শোভাযাত্রায় ৫০ হাজার মানুষ ছিলেন। যদিও পুলিশের হিসেব মোতাবেক এই সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় হাজারের বেশি নয়।

বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া, শালতোড়া, মেজিয়া, পাত্রসায়র-সহ বিভিন্ন এলাকায় এ দিন রামনবমীর শোভাযাত্রা হয়। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভাবেই জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় শোভাযাত্রা হয়। সব জায়গায় পুলিশ ছিল।” অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ ও প্রশাসন একগুচ্ছ বিধিনিষেধ জারি করে শোভাযাত্রায়। এ দিন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে প্রশাসনের প্রস্তুতি সম্পর্কে চিঠি দিয়ে জানায় বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, “সব শোভাযাত্রার উপরে আমাদের নজর রয়েছে।” আজ রবিবারও পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া শহরে রামনবমীর শোভাযাত্রা হওয়ার কথা। সেই শোভাযাত্রাতেও নজর থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Ramnavami Rally Weapons
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE