Advertisement
০৪ মে ২০২৪
তালা খুলছে বন্ধ পার্টি অফিসের

সিপিএমকে বাঁচাতে মদত তৃণমূলের, নালিশ বিজেপির

সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “জেলায় আমাদের বন্ধ পার্টি অফিসগুলির মধ্যে প্রায় সব খোলা হয়ে গিয়েছে। বাকি কেবল পাত্রসায়রের কাঁকড়ডাঙার জোনাল অফিস। শীঘ্রই তা খুলব।’’

খুলল পাত্রসায়রের জামকুড়ি লোকাল কমিটির অফিস।নিজস্ব চিত্র

খুলল পাত্রসায়রের জামকুড়ি লোকাল কমিটির অফিস।নিজস্ব চিত্র

তারাশঙ্কর গুপ্ত ও রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
পাত্রসায়র ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ০০:১২
Share: Save:

আট বছর আগে রাজ্যে পালাবদলের পরে সিপিএমের পার্টি অফিসগুলিতে একে একে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল তালা। লোকসভা ভোটের মুখে বাঁকুড়া জেলার সেই সব অফিসই ফের খুলছে। আধাসেনার আশ্বাসে নয়, সিপিএমের নেতারা দাবি করছেন, পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় তাঁরাই বন্ধ পার্টি অফিস খুলছেন। শুক্রবারই খোলা হয়েছে পাত্রসায়রের সিপিএমের জামকুড়ির লোকাল কমিটির অফিস। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “জেলায় আমাদের বন্ধ পার্টি অফিসগুলির মধ্যে প্রায় সব খোলা হয়ে গিয়েছে। বাকি কেবল পাত্রসায়রের কাঁকড়ডাঙার জোনাল অফিস। শীঘ্রই তা খুলব।’’

সিপিএম নেতৃত্ব দাবি করেছেন, গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি পাল্টেছে। ঘরছাড়ারা ফিরেছেন। দলের কর্মীরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করছেন। প্রার্থীও প্রচারে ঘুরছেন। যদিও এক বছর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে শুধু পাত্রসায়র ব্লকই নয়, পুরো বিষ্ণুপুর মহকুমাতেই ভোট হয়নি। অন্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গেই সিপিএম নেতৃত্বও তখন দাবি করেছিলেন, তৃণমূলের বাধাতেই তাঁদের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা করতে পারেননি। তাহলে, লোকসভা ভোটের আগে পরিস্থিতি পাল্টে গেল কী ভাবে? তা নিয়েই শুরু হয়েছে চর্চা। বিরোধীভোট ভাগ করতে তৃণমূল আড়ালে থেকে সিপিএমকে সক্রিয় করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করছে বিজেপি।

এক সময়ে সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল পাত্রসায়র। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের পরেই সেখানে মাথাচাড়া দেয় তৃণমূল। দু’পক্ষের তুমুল গোলমালে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। খুনোখুনিও হয়। ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকারের পতনের পর পাত্রসায়র-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় সিপিএমের পার্টি অফিসে হামলার অভিযোগ ওঠে। বন্ধ হয়ে যায় পার্টি অফিস। নেতা-কর্মীরা ‘বাড়িছাড়া’ হন।

সিপিএমের পাত্রসায়র এরিয়া কমিটির সম্পাদক লালমোহন গোস্বামী দাবি করেন, ২০১১ সালে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরের দিনই কাঁকরডাঙায় দলের জোনাল অফিস ভাঙচুর করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বালসিতে এক সিপিএম কর্মী খুন হন। পরের বছর পাত্রসায়র স্টেশনের কাছে ফের খুন হন দলের আর এক কর্মী। পাত্রসায়র ব্লকে ১৯৮ জন কর্মী ঘরছাড়া হন। তা সত্ত্বেও জামকুড়ির পার্টি অফিসটি কোনও রকমে চলছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের ১৫ মে সেই অফিসেও ভাঙচুর চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বছরখানেক পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় একে একে তাঁরা ফিরছেন।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

যদিও পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি পার্থপ্রতিম সিংহের দাবি, “বাম আমলে সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে আমাদের বহু কর্মী খুন হয়েছিলেন। পরে তাঁরা জনরোষের শিকার হন।’’

শুক্রবার লালমোহন গোস্বামী কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে জামকুড়ির ওই পার্টি অফিস অফিস খোলেন। তিনি দাবি করেন, ‘‘লোকসভা ভোটের মুখে মানুষের ভরসা পাচ্ছি। তাই পার্টি অফিস খুলছি।’’

জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মূলত খাতড়া মহকুমা ও বাঁকুড়া সদর মহকুমার একাংশে ভোট হয়েছে। তার মধ্যে কিছু জায়গায় বিজেপির উত্থান লক্ষ্য করা গিয়েছে। তাঁদের অনুমান, বিজেপির সমর্থন বাড়ার পিছনে বাম তথা সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে। ঘটনা হল, তারপরই কোতুলপুর, বিষ্ণুপুর, ইন্দাস, মেজিয়া, তালড্যাংরা ব্লকের বন্ধ থাকা সিপিএমের বেশ কিছু পার্টি অফিস খুলেছে।

বিজেপির বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের প্রার্থী সৌমিত্র খাঁয়ের দাবি, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠায় সিপিএম-সহ সমস্ত শাসক-বিরোধীরা আমাদের সমর্থন জানাচ্ছেন। তাই লোকসভা ভোটে বিরোধী ভোট ভাঙাতেই সিপিএমের পার্টি অফিস খোলাচ্ছে তৃণমূল।’’

তা মানতে নারাজ সিপিএম ও তৃণমূল নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিতবাবুর দাবি, ‘‘জামকুড়িতে দলীয় কার্যালয় খোলার রাতেই তৃণমূলের লোকজন আমাদের কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে। এরপরেও বিজেপি ও কথা বলে কী ভাবে?’’ বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল সাঁতরার দাবি, ‘‘সিপিএমের সন্ত্রাস মুছতেই মানুষ আমাদের দায়িত্বে দিয়েছে। ওদের সমর্থনের প্রশ্নই নেই।’’

যদিও সিপিএমের নিচুতলার কর্মীরা বলছেন, জেলার বেশ কিছু জায়গায় এখনও লোকাল কমিটি ও শাখা কমিটির অফিস বন্ধ রয়েছে। পাত্রসায়রেই বন্ধ রয়েছে রসুলপুর ও বালসি লোকাল কমিটির অফিস। সে সবও এ বার চালু করার দাবি তুলছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 CPM Patrasayar Purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE