Advertisement
E-Paper

ভোট লুট রুখে দেওয়ায় আগুন, চর্চা পাইকুনিতে

মঙ্গলবার রাতে উত্তপ্ত হয় ইলামবাজারের ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাইকুনি। বুধবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, শেখ শুকুরের আংশিক পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে বসে তাঁর মেয়ে সাবিনা খাতুন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৯ ০০:৩১
 অবশিষ্ট: আগুনে পুড়েছে বাড়ি। ইলামবাজারের পাইকুনি গ্রামে। ছবি: দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

অবশিষ্ট: আগুনে পুড়েছে বাড়ি। ইলামবাজারের পাইকুনি গ্রামে। ছবি: দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

প্রচার-পর্বের আগাগোড়া তুলনায় নির্বিঘ্নে কাটলেও ভোট শেষ হওয়ার পরের ৪৮ ঘণ্টায় লাভপুর থেকে বোলপুর, নানুর থেকে সাঁইথিয়া—বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক সংঘর্ষে ঝরল রক্ত, পুড়ল বাড়ি। বেশির ভাগ ঘটনায় উঠে এসেছে তৃণমূল বনাম বিজেপির লড়াইয়ের অভিযোগ। ইলামবাজারের পাইকুনি গ্রামে সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের দ্বন্দ্বের কথা উঠে এলেও স্থানীয়দের দাবি, পারিবারিক গোলমালেই কয়েকটি ঘরে আগুন লাগানো হয়।

মঙ্গলবার রাতে উত্তপ্ত হয় ইলামবাজারের ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাইকুনি। বুধবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, শেখ শুকুরের আংশিক পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে বসে তাঁর মেয়ে সাবিনা খাতুন। বললেন, ‘‘তিন মাস আগে বাবা মারা গিয়েছেন। মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ কয়েক জন এসে বাড়িতে আগুন লাগায়।’’ এ দিন ইলামবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন শুকুরের প্রথম পক্ষের স্ত্রী হাবিবা বিবি। মূল অভিযুক্ত হিসেবে পুলিশ আটক করেছে শেখ খিলাফতকে। তিনি সিপিএম কর্মী হিসেবে পরিচিত এবং নির্বাচনে পাইকুনি বুথের পোলিং এজেন্ট ছিলেন।

পাইকুনি গ্রামেই ঘর পুড়েছে তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত শেখ মুবারকেরও। প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ছোট ঝামেলা থেকে ঘর পুড়েছে। সব মিটেও গিয়েছে।’’ পুলিশের দাবি, পারিবারিক বিবাদেই এই ঘটনা। গ্রামবাসীদের কারও দাবি, ‘‘খিলাফত ভোট লুট রুখেছিলেন। তাই কিছু লোক এমন করেছে। ঘটনা সাজাতে নিজেদের চালাঘরও পুড়িয়েছে।’’

মঙ্গলবার রাতেই লাভপুরের ঠিবা গ্রামে পুলিশের সামনে এক বিজেপি নেতা, তাঁর মা এবং দলের এক কর্মীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ মানেননি। স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার বাড়িতে নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন বিজেপির ঠিবা বুথ কমিটির সভাপতি নীলকুমার বাগদি। অভিযোগ, সেই সময় কয়েক জন দুষ্কৃতী বাড়ির সামনে বোমা ছোঁড়ে। বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা তাড়া করলে দুষ্কৃতীরা পালায়। অভিযোগ, পুলিশ পৌঁছনোর পরেও কিছু দুষ্কৃতী ওই বিজেপি নেতার বাড়িতে হামলা চালায়। লাঠির আঘাতে নীলকমলবাবুর ডান পা ভাঙে, তাঁর মা মালতিদেবী ও সন্তোষ বাগদি নামে এক বিজেপি কর্মীর মাথাও ফাটে। নীলকমলবাবুর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের লোকেরা ভোটের কাজ থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছিলেন। কানে তুলিনি। সেই আক্রোশে আমার উপর চড়াও হয়।’’ তৃণমূলের লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী একে মিথ্যে অভিযোগ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। পুলিশের দাবি, তাদের সামনে কাউকে মারধর করা হয়নি। অভিযোগও জমা পড়েনি।

মঙ্গলবার রাতেই বোলপুরের রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েতের রজতপুরে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মারপিট হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, আহত হন চার বিজেপি সমর্থক। বুধবার সকালেও এক বিজেপি সমর্থক তৃণমূল কর্মীদের মারে জখম হন বলে অভিযোগ। বিজেপির কয়েক জন সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। বিজেপির অভিযোগ, হামলার ভয়ে রজতপুরের ১০-১৫ ঘর বিজেপি সমর্থকের পরিবার গ্রামছাড়া। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।’’

বোমাবাজিতে উত্তেজনা ছড়ায় নানুরের গোপডিহিতেও। স্থানীয় সূত্রে খবর, পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের ‘দখল’ ঘিরে শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদে ওই কাণ্ড ঘটেছে।। পুলিশ সাত জনকে আটক করেছে। এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে সাঁইথিয়ার কানাইপুর গ্রামেও।। পুলিশ জানায়, কয়েকটি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রেই তৃণমূলের তরফে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ ওড়ানো হয়েছে।

বুধবার সকালে তৃণমূল অঞ্চল সভাপতির পাশের বাড়ি থেকে তাজা বোমা ও তির-ধনুক উদ্ধার হওয়ায় উত্তেজনা ছড়ায় সদাইপুর থানার সাহাপুরে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শেখ মেহেরাজের বাড়ি থেকে সে সব উদ্ধার হয়েছে। বিজেপির দাবি, তিনি ওই এলাকার অঞ্চল সভাপতি শেখ এনামুলের ঘনিষ্ঠ। সন্ত্রাস ছড়াতেই বোমা মজুত করা হয়েছিল। তৃণমূল পাল্টা বিজেপির ঘাড়েই দায় ঠেলেছে।

Lok Sabha Election 2019 Election 2019 Phase Violence Fire Paikuni
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy