Advertisement
০১ মে ২০২৪
Lok Sabha Election 2024

সেতু হয়নি, ঘোচেনি জল-সঙ্কটও

বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা শালতোড়া, মেজিয়া ও গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের একাংশকে নিয়ে শালতোড়া বিধানসভা কেন্দ্র৷ গত লোকসভা নির্বাচন থেকেই এখানে একচেটিয়া ক্ষমতা বিজেপির।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
শালতোড়া শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৪৪
Share: Save:

দামোদর নদের উপরে সেতু গড়ে দেননি বিজেপি সাংসদ। ঘরে ঘরে জল পৌঁছতে ব্যর্থ তৃণমূল সরকারও। আরও একটি লোকসভা নির্বাচনের আগে পাওয়া না-পাওয়ার হিসেব কষতে গিয়ে ঘুরেফিরে এই আক্ষেপই শোনা যাচ্ছে শালতোড়া বিধানসভা কেন্দ্র এলাকার ভোটারদের মুখে।

পাথুরে এলাকা শালতোড়ায় প্রাকৃতির সম্পদের শেষ নেই। ‘‘পাথর থেকে কয়লা, বালি— কী নেই এখানে, তারপরেও এলাকার উন্নয়ন সেই তিমিরেই।’’— শালতোড়া মোড়ের একটি চা দোকানে দাঁড়িয়ে এমনই আক্ষেপ করছিলেন স্থানীয় যুবক সুমন কর্মকার। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বছর পঁয়তাল্লিশের অনুপ কর্মকার। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলেন, ‘‘দামোদরের পাড়ে দাঁড়ালে মন খারাপ করে। ওপারে আলো ঝলমলে আসানসোল-বার্নপুর শিল্পাঞ্চলে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য হাতছানি দেয়, আর এপারে আমরা বাড়িতে খাবার জলটুকুও পাই না। দামোদর নদ পার করতে ভরসা সেই সাঁকো। বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার গতবার কথা দিয়েছিলেন, ভোটে জিতে কুকড়াকুড়ি ঘাট থেকে বার্নপুর যাওয়ার স্থায়ী সেতু গড়ে দেবেন। কোথায় সেতু?’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা শালতোড়া, মেজিয়া ও গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের একাংশকে নিয়ে শালতোড়া বিধানসভা কেন্দ্র৷ গত লোকসভা নির্বাচন থেকেই এখানে একচেটিয়া ক্ষমতা বিজেপির। ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনেও এখানে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী চন্দনা বাউরি। এই কেন্দ্রের আওতাতেই রয়েছে মেজিয়া ও গঙ্গাজলঘাটি শিল্পতালুক থেকে ডিভিসির মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। তারপরেও এলাকার ছেলেদের ভবিষ্যৎ পরিযায়ী শ্রমিক।

শালতোড়ার এক পরিযায়ী শ্রমিক বলেন, ‘‘আগে এখানে পাথরখাদানগুলো চলত। তখন কাজের অভাব ছিল না। এখন খাদান বন্ধ। মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটির কারখানাগুলোয় চেষ্টা করেও কাজ পাইনি। বার্নপুরেও কাজের অভাব। তাই বাধ্য হয়েই ভিন্‌ রাজ্যে যেতে হয়েছে।’’

কাজের অভাব যেমন রয়েছে, জলের অভাব নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই। গত লোকসভা নির্বাচনে শালতোড়াতেই সে বারের তৃণমূল প্রার্থী তথা তৎকালীন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের গাড়ি আটকে জলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন মহিলারা। তারপরেও জলের সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ তুলছেন শালতোড়ার মুরলু, দুবরাজপুর, রাউতোড়া, শ্যামপুর, রামপুরের মতো গ্রামগুলির বাসিন্দারা। অথচ প্রশাসনের কাগজে-কলমে এই গ্রামগুলি পানীয় জল পরিষেবার আওতায় রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের দাবি, দামোদরের যেখান থেকে জল তোলার জন্য প্রকল্প গড়া হয়েছিল, সেখানে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় জল মিলছে না। এক দিন অন্তর এলাকায় জল দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের পাল্টা দাবি, সাত দিনের ব্যবধানেও জল মেলে না। কোনও দিন জল এলেও সরু সুতোর মতো পড়ে। গঙ্গাজলঘাটি ও মেজিয়া ব্লকে এখনও জল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি।

ভোটারদের আক্ষেপের মাঝেও ভোট-যুদ্ধে মেতে রাজনৈতিক দলগুলি। দেওয়াল লিখন, পোস্টার, ফেস্টুন, দলীয় পতাকায় ছয়লাপ। বিজেপি ও তৃণমূল দু’পক্ষই জয় নিয়ে আশাবাদী। বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের দাবি, ‘‘ওই সেতুর বিষয়ে রাজ্য সরকারকে বারবার কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে বলেছিলাম। কিন্তু রাজ্য পাঠাল না। এ কারণেই সেতু করা গেল না। কেন্দ্রের সদিচ্ছা রয়েছে, রাজ্য একধাপ এগোলেই কাজ হবে। এলাকাবাসীর সমস্যার জন্য তৃণমূলের রাজ্য সরকার দায়ী। কেন্দ্রের পরিষেবা, নানা প্রকল্প থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।’’ পাল্টা তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উনি আর কত মিথ্যা কথা বলবেন? রাজ্যকে তিনি কিছুই বলেননি।’’ তাঁর দাবি, তিনি জেলা পরিষদের সভাধিপতি থাকাকালীন শালতোড়ায় প্রচুর চেকড্যাম, রাস্তাঘাট, পর্যটন কেন্দ্র হয়। সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনাও গড়া হচ্ছে। অথচ সুভাষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকেও এলাকায় একটি হাসপাতাল বা স্কুল কিছুই করতে পারেনি।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE