Advertisement
০৫ মে ২০২৪
শৌচাগারে নানা আপত্তি

খুঁটি রোগা, অভিযোগ গ্রামবাসীর

মাটিতে দেড় ফুট গর্ত করে পুঁতে দেওয়া চারটে ঢালাই খুঁটি। বিজয় ধীবরের মতে, যে খুঁটিগুলি ‘রোগাসোগা’। সেই খুঁটির মধ্যে থাকা চ্যানেলে (খাঁজ) পাতলা ঢালাই প্লেট সেট করে তৈরি তিন দিকের দেওয়াল।

আড়াল: দুবরাজপুরে এমন শৌচালয় নিয়েই আপত্তি উঠেছে। নিজস্ব চিত্র

আড়াল: দুবরাজপুরে এমন শৌচালয় নিয়েই আপত্তি উঠেছে। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৭ ০১:২৫
Share: Save:

মাটিতে দেড় ফুট গর্ত করে পুঁতে দেওয়া চারটে ঢালাই খুঁটি। বিজয় ধীবরের মতে, যে খুঁটিগুলি ‘রোগাসোগা’। সেই খুঁটির মধ্যে থাকা চ্যানেলে (খাঁজ) পাতলা ঢালাই প্লেট সেট করে তৈরি তিন দিকের দেওয়াল। মাথায় আড়াই ইঞ্চি পুরু ঢালাই ছাদ। এর পর মেঝেয় প্যান বসিয়ে একটা টিনের দরজা লাগালেই তৈরি শৌচাগার।

সরকারি প্রকল্পে তৈরি শৌচাগারে এত কেন ‘দুর্বল’ হবে, প্রশ্ন তুলেছিলেন দুবরাজপুরের বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের মঙ্গলপুর গ্রামের বাসিন্দা বিজয় ধীবর। অন্তত সেই যুক্তি দেখিয়েই তিনি নিজের বাড়িতে শৌচাগার গড়তে দেননি। সরকারি প্রকল্পের বিরোধিতার জন্য গত ১৭ মার্চ বিডিও (দুবরাজপুর) বনমালী রায়ের নির্দেশে সময়িক ভাবে রেশন বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁর পরিবারের। বিজয়ই নন, কাজ নিম্নমানের হচ্ছে অভিযোগ তুলে নিজেদের বাড়িতে শৌচাগার তৈরির বিরোধিতা করায় ওই গ্রামের আরও তিনটি পরিবারের বিরুদ্ধেও রেশন বন্ধের নির্দেশ জারি করেছিল ব্লক প্রশাসন। বাকি তিন জন শৌচাগারে সম্মত হওয়ায় রেশন পাচ্ছেন। বিজয়ের দাবি, তিনি নিজের পকেট থেকে টাকা লাগিয়ে আরও ভাল শৌচাগার বানাতে ইচ্ছুক। প্রশাসনের সঙ্গে যুদ্ধ করা তাঁর উদ্দেশ্য নয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৬৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ইতিমধ্যেই ৫৩টি নির্মল ঘোষিত। মার্চের মধ্যেই আরও ৫৬টি পঞ্চায়েতকে নির্মল করার লক্ষ্য ছিল। সময়সীমা বেড়ে এপ্রিল করা হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে দুবরাজপুর ব্লকের বালিজুড়ি, পদুমা ও পারুলিয়া পঞ্চায়েত। এই তিন পঞ্চায়েত এলাকায় সিংহভাগ কাজ শেষ। সময়মতো শেষ করতে জোরকদমে কাজ চলছে। নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচিত পঞ্চায়েতগুলির সমীক্ষা অনুয়াযী যে-সব পরিবারে শৌচাগার নেই, সেই পরিবারগুলি ৯০০ টাকা দেবে। বাকি ১০ হাজার টাকা দেবে সরকার। কেউ যদি টাকা দিতে অক্ষম হন, তা হলে তিনি ছ’দিন শ্রম দিলে ৯০০ টাকা দিতে হবে না।

কিন্তু, স্রেফ শৌচাগার গড়ে দেওয়ার মধ্যেই মিশন নির্মল বাংলা বা কেন্দ্রের স্বচ্ছ ভারত অভিয়ান কর্মসূচির দায়িত্ব শেষ হচ্ছে না। মাঠেঘাটে শৌচকর্মের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ছাড়ানোটাই মূল লক্ষ্য। কিন্তু, প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, বাড়িতে জল নেই অথবা শৌচাগার বানানোর জায়গা নেই-সহ নানা ফিকির তুলে শৌচাগার বানানোয় ব্যাগড়া দিচ্ছেন গ্রামবাসীর একাংশ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শৌচাগারের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা। সংখ্যায় আপত্তি তোলার লোক কম হলেও তাঁদের দেখে প্রভাবিত হচ্ছেন আশপাশের অনেকে। বীরভূম প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘মূলত এই কারণেই আমাদের কিছু ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ করতে হচ্ছে।’’

জেলা থেকে নির্দেশ পেয়ে শৌচাগার রয়েছে অথচ ব্যবহার করেন না কিংবা নিজের বাড়িতে শৌচাগার বানাতেই বাধা দিচ্ছেন— এমন উপভোক্তাদের চিহ্নিত করে তাঁদের রেশন ও অন্যান্য সরকারি সুযোগ সুবিধা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুবরাজপুর ব্লক প্রশাসন।

কিন্তু, শৌচাগারের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। শৌচাগার পাওয়া পরিবারের এক বড় অংশেরই দাবি, যেমন তেমন করে জোড়াতালি দিয়ে তৈরি হওয়া এই শৌচাগার দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার নয়। অভিযোগ, চিমনি ইট দিয়ে তৈরি শৌচাগার অনেক বেশি টেঁকসই হলেও দ্রুত কাজ তোলার জন্য তা করা হচ্ছে না। বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের মঙ্গলপুর ও হালসোত গ্রামের উপভোক্তারদের একাংশের ক্ষোভ, ঢালাই করার খুঁটি নিম্নমানের। শৌচাগারের ভিতে ঢালাই বা ডেটো থাকছে না। দেওয়ালে কোনও পলেস্তরা নেই। দরজার ছিটকানি আটকানো যায় না। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, বর্ষার নরম মাটিতে খুঁটি হেলে গিয়ে বা হনুমান জোরে লাফালেই এই শৌচাগার ভেঙে পড়তে পারে।

কাজের মান যে খুব ভাল নয় তা আড়ালে মানছেন স্যানিটারি মার্টের (যারা শৌচাগার বানানোর দায়িত্বে) সঙ্গে যুক্ত লোকজনও। তাঁদের বক্তব্য, এই মডেল দেখতে ভাল তবে। তবে ততটা পোক্ত নয়। বিডিও যদিও বলছেন, ‘‘আশঙ্কা অমূলক। তা ছাড়া, কাজে গফিলতি হচ্ছে কিনা প্রতিনিয়ত দেখভাল করা হচ্ছে।’’ বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী জানাচ্ছেন, উপভোক্তাদের শৌচাগার বানানোটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু, ওই মডেলের শৌচাগারই বানাতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। চাইলে অন্য মডেলও বানাতে পারেন। চাইলে আরও টাকা লাগিয়ে উপভোক্তা উন্নত শৌচাগার গড়তে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Toilet Village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE