Advertisement
২৬ মার্চ ২০২৩
Raghunathpur

জেলায় আসতে পারে কেন্দ্রীয় দল স্কুল চকচকে রাখতে পড়াশোনা ‘শিকেয়’

সূত্রের খবর, পুরুলিয়া জেলায় প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ৩,০৬৭টি। তার মধ্যে বহু স্কুলেই শিক্ষক মোটে দু’জন। এক জন শিক্ষক থাকা স্কুলের সংখ্যাও কম নয়।

Logo of Pradhan Mantri Poshan Shakti Nirman, Government of India

রঘুনাথপুরের একটি স্কুলে পিএম পোষণের লোগো আঁকা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল, দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:০৬
Share: Save:

স্কুলে আঁকতে হবে পিএম পোষণের ‘লোগো’। পাশে থাকবে সপ্তাহের কোন দিনে কী কী পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হচ্ছে তার তালিকা। প্রতিদিন এক জন ব্যক্তি মিড-ডে মিল পরখ করে নির্দিষ্ট খাতায় মতামত লিখবেন। চালের মাপ, খরচের হিসাব রাখতে হবে। স্কুল চত্বর ও শৌচালয়ও রাখতে হবে ঝাঁ চকচকে। রান্নাঘরে যেন না থাকে নোংরা, ঝুল, মাকড়শার জাল। মিড-ডে মিল পরিদর্শনে কেন্দ্রীয় দলের আসার সম্ভাবনা থাকায় ওই সব শর্ত যাতে অবশ্যই স্কুলগুলি পূরণ করে, সে জন্য একের পর এক নির্দেশ পাঠাচ্ছে পুরুলিয়া জেলা শিক্ষা দফতর। আর সেই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা অনেক স্কুলের। শিক্ষক সংগঠগুলির দাবি, ওই সব শর্ত পূরণের ঠেলায় ফাঁক পড়ে যাচ্ছে স্কুলের পড়াশোনায়।

Advertisement

তবে তা মানেননি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান তথা বান্দোয়ানের তৃণমূল বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন। তিনি বলেন, ‘‘মিড-ডে মিলের নথি দৈনিক প্রতিটি স্কুলকে তৈরি রাখতে হয়। যারা তা করেনি তাদের সমস্যা হতে পারে। খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ৯৯ শতাংশ স্কুলেই মিড-ডে মিলের সমস্ত বিষয় ‘আপ টু ডেট’ করা হয়ে গিয়েছে। সে জন্য পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে না।”

সূত্রের খবর, পুরুলিয়া জেলায় প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ৩,০৬৭টি। তার মধ্যে বহু স্কুলেই শিক্ষক মোটে দু’জন। এক জন শিক্ষক থাকা স্কুলের সংখ্যাও কম নয়। ওই সব স্কুলের শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা, মিড-ডে মিল সংক্রান্ত দৈনিক কাজকর্ম মিটিয়ে পড়ানোর জন্য হাতে বিশেষ সময় থাকে না। তাঁদের অনেকেরই দাবি, কেন্দ্রীয় দল যে কোনও সময়ে পুরুলিয়াতে পরিদর্শনে আসতে পারে, সে বিষয় উল্লেখ করে ‘উপরমহল’ থেকে দৈনিক নতুন নতুন নির্দেশ আসছে। আর তা পালন করতে গিয়ে বেলা বয়ে যাচ্ছে।

এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও সমস্যা। পিএম পোষণের লোগো, খাদ্য-তালিকা সহ দৈনিক মিড ডে মিলের হিসাব রাখার জন্য তিনটি করে বোর্ড আঁকাতে হচ্ছে স্কুলগুলিকে। কিন্তু সাত তাড়াতাড়ি আঁকার লোক মিলবে কী করে? কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকের কথায়, ‘‘পড়ানোর কাজ ফেলে শিল্পী খুঁজতে বেরোতে হচ্ছে!”

Advertisement

এখানেই শেষ নয়। মিড-ডে মিলের রান্নাঘর পরিচ্ছন্ন রাখা, স্কুল চত্বর, শৌচালয় দৈনিক সাফাইয়ের কাজ থেকে হিসেবপত্র দেখাশোনার কাজ সবই করতে হচ্ছে শিক্ষকদেরই। খেয়াল রাখতে হচ্ছে, রাঁধুনিদের নোখ কাটা কি না। অ্যাপ্রোন ও গ্লাভস পরে রান্না করছেন কি না।

আছে অন্য সমস্যাও। সাঁতুড়ির কুলাই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক তথা সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুশান্ত কেওড়া জানান, নির্দেশ অনুযায়ী কাঠে মিড-ডে মিল রান্না করা চলবে না। রান্না হবে জ্বালানি গ্যাসে। আগে আভেন পেলেও বুধবার প্রথম রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার এসেছে ওই স্কুলে। সুশান্ত বলেন, ‘‘রান্নার কাজে যুক্ত আদিবাসী স্বনির্ভর দলের সদস্যেরা গ্যাসের উনুনে রান্নায় অভ্যস্ত নয়। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, গ্যাসে রান্না করতে পারবেন না। এ বার যদি কেন্দ্রীয় দল আসে তাহলে কী ঘটবে, বোঝা যাচ্ছে না।”

ঝালদার মাঠারি স্কুলের শিক্ষক ভূদেব কুমার বলেন, ‘‘স্কুলে পড়ুয়া ৮৩ জন, শিক্ষক মাত্র দু’জন। মিড-ডে মিলের কাজেই যদি ব্যস্ত থাকি, পড়াব কখন?” পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আদ্রা চক্রের সভাপতি তথা গগনাবাইদ স্কুলের শিক্ষক সিদ্ধার্থ পাল জানান, তাঁর স্কুলে ২১৭ জন পড়ুয়া, শিক্ষক মাত্র দুই। তার ক্ষোভ, ‘‘মিড-ডে মিলের কাজ দেখভাল করতে গিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। পড়াশোনা কার্যত লাটে উঠেছে।’’

কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে ঘুরতে শুরু করার পর থেকেই স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল ছাড়া কার্যত অন্য কিছু হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন শিক্ষক সংগঠন বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক রাজকিশোর মাহাতো এবং এবিপিটিএ-র জেলা সম্পাদক নিলয় মুখোপাধ্যায়দের। দু’জনেই বলেন, ‘‘এই কারণেই আমরা দাবি করেছিলাম, মিড-ডে মিলের মূল দায়িত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করা হোক শিক্ষকদের। দুপুরের খাবার পরিচালনা করুক পঞ্চায়েত বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী। শিক্ষকেরা থাকুক শুধু তদারকির দায়িত্বে। তাহলে স্কুলগুলিতে এই পরিস্থিতি তৈরি হত না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.