Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গান স্যালুটে বিদায় শহিদের

মোটরবাইক দুর্ঘটনায় উধমপুরে কর্মরত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইনটেলিজেন্স বিভাগের কর্মী বীরভূমের মুরারইয়ের রুদ্রনগরের নজরুল শেখের মৃত্যু হয়েছে।

শোক: মুরারইয়ের রুদ্রনগরে নজরুল শেখের শেষযাত্রায় ভি়ড়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

শোক: মুরারইয়ের রুদ্রনগরে নজরুল শেখের শেষযাত্রায় ভি়ড়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুরারই শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৭
Share: Save:

কফিন ঘিরে উৎসুক জনতা। পারলে বাঁশের ব্যারিকেড টপকে কফিনে ঢাকা দেহ ছুঁয়ে ফেলেন তাঁরা। রবিবার দুপুরে যে খবর অনেকেরই বিশ্বাস হয়নি, মঙ্গলবার কাকভোরে তাঁরাই গ্রামের মিঞাপাড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। বাদ যাননি মহিলারাও। বাঁশগাছের ঝোপ এড়িয়ে একটু উঁচু জায়গা দেখে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

মোটরবাইক দুর্ঘটনায় উধমপুরে কর্মরত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইনটেলিজেন্স বিভাগের কর্মী বীরভূমের মুরারইয়ের রুদ্রনগরের নজরুল শেখের মৃত্যু হয়েছে। এই খবর জানিয়ে রবিবার দুপুরে সেনাকর্তারা যখন ফোন করেছিলেন, তখন সদ্য খেতে বসেছেন নজরুলের বাবা ফজলে করিম। আগাগোড়া হিন্দিতে কথা বলায় শুরুতে তিনি বুঝতেই পারেননি কী বলছেন সেনাকর্তারা। ভাতের থালার সামনে থেকে উঠে ভাইপোকে ফোনটা এগিয়ে দিয়েছিলেন ক্ষুদ্রচাষি ফজলে করিম। খারাপ খরবটা জানাজানি হয় তারপরই। হাওয়ার বেগে ছড়িয়ে যায় দুঃসংবাদটা। পাশের গ্রাম সুহুদিঘি, গোয়ালমাল, কোপা, দারিয়াপুর, বোনহা, চাতরা, মুরারই জেনে যায় সেনাবাহিনীর কর্মী, সদা মিশুকে স্বভাবের নজরুল আর নেই।

২৭ বছরের নজরুল ছিলেন বাড়ির চার ভাইবোনের মধ্যে মেজো। টালির ছাউনি দেওয়া দু’খোপের বাড়িতে পরিবারের ছ’জন সদস্যের আয় বলতে বাবা ফজলে করিমের নামে নিজের দু’বিঘা জমি, আর পরের জমিতে ভাগচাষ। ন’বছর আগে উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে পড়তে সংসারের অভাব ঘোচাতে কাজের চেষ্টা করতে থাকে নজরুল। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সেনাবাহিনীর কাজও পেয়ে যায়। ফজলে করিমের কথায়, ‘‘কাজে যোগ দিয়েই ভাইবোনদের মধ্যে বড় দিদির বিয়ের খরচে কিছুটা হলেও সাহায্য করেছিল নজরুল। চার শতক জায়গার উপরে বসত বাড়ি পাকা করতেও উদ্যোগী হয়। ছুটিতে বাড়িতে আসলে বা কর্মস্থল থেকে ফোনে জানাত বাড়িটা শেষ করে বোনের বিয়ে দেবে। তারপরে নিজে বিয়ে করবে। কিন্তু সব কিছু ফেলে রেখে ছেলেটাই আমার চলে গেল।’’ মহরমে পনেরো দিনের ছুটিতে আসা দাদা আর নেই ভাবতে পারছে না বোন রুকসানা খাতুনও।

ছুটিতে বাড়ি ফিরলে নজরুলের বেশির ভাগ সময় কাটত পাড়া-পড়শি, বন্ধু, ভাইবোনদের সঙ্গে গল্প করে। সেই নজরুলের শেষ বারের মতো ফেরার অপেক্ষায় সারারাত জেগে কাটিয়েছে পাড়ার ছেলেরা। মঙ্গলবার সকাল সাতটায় সেনাবাহিনীর গাড়ি ঢুকতেই রুদ্রনগর গ্রামের মানুষ তো বটেই, আশপাশ গ্রামের লোকজন ভিড় করে। একবেলা হয়ে ছুটি হয়ে যায় স্কুলও। দুপুরের গান স্যালুট দিয়ে গ্রামের যুবককে চিরবিদায় জানাতে ভিড় উপচে পড়ে মিঞাপাড়ায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murarai Martyr Funeral
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE