Advertisement
০১ মে ২০২৪
আজ বাসাপাড়ায় শহিদ সমাবেশ

সভা ভরানোই চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের

বাস ভাড়া করে আর পাশের জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকদের আনা নয়। কর্মী-সমর্থকেরা আনতে নির্দেশ পাঠানো হয়নি জেলার অন্যপ্রান্তগুলিতেও। বরং এলাকার কর্মী-সমর্থক দিয়েই নানুরের বাসাপাড়ায় আজ বুধবারের শহিদ সমাবেশে লোক ভরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নানুর শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

বাস ভাড়া করে আর পাশের জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকদের আনা নয়। কর্মী-সমর্থকেরা আনতে নির্দেশ পাঠানো হয়নি জেলার অন্যপ্রান্তগুলিতেও। বরং এলাকার কর্মী-সমর্থক দিয়েই নানুরের বাসাপাড়ায় আজ বুধবারের শহিদ সমাবেশে লোক ভরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল।

বিধানসভায় হারের পরে কাজলহীন-নানুরে দলের শক্তি যাচাই করতেই এমন পরিকল্পনা বলে খবর। যদিও দাদার ‘সাহায্য’ ছাড়া দলের ক্ষমতাসীন এই চ্যালেঞ্জ পূরণ করতে পারবে না বলেই কাজল শেখ অনুগামীদের দাবি। এই পরিস্থিতিতে মুখে না নিয়ে আসার কথা বললেও আদতে বাইরের লোকেদের এনেই সভাস্থল ভরানো হবে বলে ওই অনুগামীদের আশঙ্কা। দলের জেলা যুব সভাপতি তথা এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরা যদিও মুখে বলছেন, ‘‘এখানে সবাই তৃণমূলের লোক। সব মিলিয়ে ১৫ হাজার লোক সমাগমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। নানুরের লোকেই এ বার মাঠ ভরে যাবে। বাইরে থেকে লোক আনার প্রয়োজনই পড়বে না।’’

২০০০ সালের ২৭ জুলাই সূচপুরে সিপিএমের নেতা-কর্মীদের হাতে ১১ জন খেতমজুর খুন হন। নিহতদের দলের সদস্য বলে দাবি করে পরের বছর থেকেই ওই দিন বাসাপাড়ায় শহিদ সমাবেশের আয়োজন করেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে সময় বাস ভর্তি করে জেলার নানা প্রান্ত ছাড়াও পাশের বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদ থেকে কাতারে কাতারে কর্মী-সমর্থকেরা আসতেন। কার্যত জনসমুদ্র আছড়ে পড়ত নানুরের বাসাপাড়া বাজার এলাকা। যদিও কয়েক বছরের মধ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ক্রমে সেই আবেগ ফিকে হতে শুরু করে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আর দেখা যায় না শহিদ স্মরণে। ২০১৪ সালেই এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরার সঙ্গে গোষ্ঠী বিবাদের জেরে ওই সমাবেশে যোগ দিতে বেঁকে বসেন যুব নেতা কাজল শেখ। দলীয় সূত্রের খবর, সে বার মুকুল রায়ের মধ্যস্থতায় পরে অবশ্য মত বদলান কাজল। ওই সমাবেশে ছেলে শুভ্রাংশুর সঙ্গে হাজির ছিলেন মকুল। মুকুল মাইক্রোফোন ধরার আগে পর্যন্ত সমাবেশের একটা বড় ফাঁকা অংশ কাজলের নেতৃত্বে আসা এক বিশাল মিছিলে ভরাট হতে দেখা যায়। ২০১৫ সালে কার্যত নমো নমো করে ওই সমাবেশ সারা হয়।

তার পরে এ বারের সমাবেশ বিশেষ তাৎপর্যপূণ বলেই মনে করছে জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। কারণ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে এ বারই নানুর বিধানসভা হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। আর সেই হারের পিছনে কাজলের হাত রয়েছে বলে তৃণমূলেরই অনেকে মনে করেন। কাজলই গোপনে সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গদাধরকে হারিয়েছেন বলে অভিযোগ। তার পর থেকেই গদাধরকে জেলা যুব সভাপতির পদ দিয়ে কাজলকে ব্রাত্য করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দল।

কাজলকে ব্রাত্য করে নানুরের কর্মী-সমর্থক দিয়ে সমাবেশ ভরানোটা গদাধরের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন ব্লক স্তরের বহু নেতা। ওই সব নেতাদের মতে, ‘‘সমাবেশে রের্কড সংখ্যক কর্মী-সমর্থক হাজির করে গদাধর অনুগামীরা বুঝিয়ে দিতে চান, দলের বিদ্রোহীদের দিন ফুরিয়েছে।’’ ওই নেতাদের দাবি, সেই লক্ষ্যে সমাবেশের জন্য কয়েক দিন আগে থেকেই ভিলেজ পুলিশের একাংশের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে কাজল-অনুগামীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকা ধরে দেখা হবে, তাঁদের মধ্যে ঠিক কারা সমাবেশে আসছেন। সেই অনুযায়ী দলীয় নেতৃত্ব ব্যবস্থা নেবে। ওই নেতার কথায়, ‘‘কাজলের সঙ্গ ছেড়ে দলের হয়ে কাজ করলে সেই মতো তাঁরা ‘পুরস্কার’ পাবেন। আর যাঁরা দলের প্রতি নিজেদের আনুগত্য দেখাতে ব্যর্থ হবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দল কড়া অবস্থান নেবে।’’ ঠিক কী সেই কড়া অবস্থান, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি ওই নেতা।

জেলার পুলিশ কর্তারা অবশ্য গোপনে এমন কোনও তালিকা তৈরির কথা মানেনি। মানেননি গদাধর এবং তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যও। তাঁদের সাফ বক্তব্য, বিশেষ কাউকে (কাজল) কোনও বার্তা দিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিধানসভা আসন হাতছাড়া হলেও নানুরের মানুষ যে দলের পাশেই রয়েছেন, এ বারের শহিদ সমাবেশেই তা প্রমাণিত হয়ে যাবে। কাজলের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি।

তবে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ অনুগামীর কটাক্ষ, ‘‘সভা ভরাতে যে পরিকল্পনাই হোক না কেন, দাদার হাত ছাড়া যে নানুর চলে না, তা এ বারের বিধানসভা ভোটেই অনেকে টের পেয়েছেন। বাইরে থেকে লোক এনেই ওদের সভাস্থল ভরাতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Martyr's day rally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE