Advertisement
০৫ মে ২০২৪
মেধা তালিকায় বাঁকুড়ার তিন পড়ুয়া

কৃতীর মুখে রাজনীতির চর্চা

এক বার, দু’বার হয়। তা বলে বারবার? ইচ্ছা থাকলে তা-ও যে হয়, দেখাচ্ছে বাঁকুড়া। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে প্রতি বছর মেধা তালিকায় ঠাঁই পাওয়াটা যেন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে রাঢ়বঙ্গের এই জেলা।

নিজের সাফল্যে বন্ধুকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছে রাজ্যে চতুর্থ দেবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজের সাফল্যে বন্ধুকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছে রাজ্যে চতুর্থ দেবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০১:৫০
Share: Save:

এক বার, দু’বার হয়। তা বলে বারবার? ইচ্ছা থাকলে তা-ও যে হয়, দেখাচ্ছে বাঁকুড়া। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে প্রতি বছর মেধা তালিকায় ঠাঁই পাওয়াটা যেন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে রাঢ়বঙ্গের এই জেলা।

এ বারও তার ব্যতিক্রম হল না। মাধ্যমিকের ভাই-বোনেরা পেরেছিল। উচ্চ মাধ্যমিকেও রাজ্যের সেরার তালিকায় ছাপ ফেলল বাঁকুড়ার ছাত্রছাত্রীরা। প্রথম দশ জনের তালিকায় এই জেলার তিন ছাত্র উঠে এসেছে। ফের নজর কেড়েছে বাঁকুড়া জেলা স্কুল। রাজ্য মেধা তালিকার চতুর্থ ও দশম স্থানে রয়েছে এই স্কুলের দুই ছাত্র। রাজ্যে নবম স্থানে উঠে এসে চমক দিয়েছে বড়জোড়া উচ্চবিদ্যালয়ের এক দুঃস্থ পরিবারের ছাত্র।

আজকালকার পড়ুয়ারা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাতেই নারাজ। আর বাবা-মায়েরাও ছেলেমেয়েদের এই জগৎ থেকে দূরেই রাখতে চান। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যের মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে আসা বাঁকুড়া জেলা স্কুলের ছাত্র দেবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়। উচ্চমাধ্যমিকে ৪৮৯ নম্বর পেয়েছে সে। তার স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। তবে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আসারও ইচ্ছে রয়েছে জেলা স্কুলে দাঁড়িয়ে জানায় দেবজ্যোতি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবার সঙ্গে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আনন্দবাজার পত্রিকা পড়া তার চাই-ই।

দেবজ্যোতির বাবা ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায় ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ। স্কুলডাঙার চট্টোপাধ্যায় বাড়ির সকাল শুরুই হয় বাবা-ছেলের আড্ডায়। জমিয়ে দু’জনে রাজ্য-রাজনীতি নিয়ে চর্চা করেন। পরীক্ষার মুখেও এই রুটিনে কোনও কাটছাঁট পড়েনি। কিন্তু ছেলের সঙ্গে রাজনীতির আলোচনা করার ঘোর বিরোধী মা শান্তিদেবী। এ নিয়ে প্রায়ই ছেলে ও স্বামীর সঙ্গে তাঁর খিটির-মিটির বাঁধে। যদিও তাতে আড্ডা বন্ধ হয়নি।

(বাঁ দিক থেকে) সৌম্যকান্তি মণ্ডল, প্রতাপকুমার মাহাতো ও সাবর্ণি ভট্টাচার্য।—নিজস্ব চিত্র

দেবজ্যোতি জানাচ্ছে, পড়ার ফাঁকে সন্ধ্যাবেলায় টিভির নিউজ চ্যানেলে চোখ রাখা তার অভ্যাস। ভোট নিয়ে আলোচনা হলে তো কথাই নেই। তখন টিভির সামনে থেকে তাকে নড়ানো মুশকিল। রাজনীতির প্রতি ছেলের এই আকর্ষণ উপভোগ করেন ভোলানাথবাবু। তাঁর কথায়, “আমার ছেলে খুব সহানুভুতিশীল। এতে আমার গর্ব হয়। রাজনীতি নিয়ে যদি ওর মত ছেলেরা যদি মাথা না ঘামায়, তো কারা ঘামাবে? দেশের প্রতি সবারই একটা কর্তব্য রয়েছে।”

বর্তমান রাজনীতিকদের কারও মধ্যেই অবশ্য নিজের আদর্শ খুঁজে পায়নি দেবজ্যোতি। তবে যদি রাজনীতিতে সে আসে তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু সংস্কার করার ইচ্ছে রয়েছে তার। সে বলে, “অনেক কিছু খামতি রয়েছে। শিক্ষার মান থেকে শিক্ষার পদ্ধতি— সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তন দরকার।” তার মতে, “ভোটে যাঁরা দাঁড়াবেন তাঁদের জন্যও ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা দরকার বলে আমি মনে করি।” দেবজ্যোতি রসায়নবিদ্যায় ১০০, অঙ্কে ৯৯, পদার্থবিদ্যায় ৯৬, রাশিবিজ্ঞানে ৯৬, বাংলায় ৮৪ ও ইংরেজিতে ৯৮ নম্বর পেয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভাল স্থান পাওয়ার জন্য সে ভাল করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাঁকুড়া জিলা স্কুলেরই ছাত্র সৌম্যকান্তি মণ্ডল ৪৮৩ নম্বর পেয়ে রাজ্যে দশম হয়েছে। ভবিষ্যতে সে ডাক্তার হতে চায়। সৌম্যকান্তির বাবা দিলীপকুমার মণ্ডল বাঁকুড়া কেঞ্জাকুড়া মোলবনা হাইস্কুলের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক। সৌম্যকান্তি বাংলায় ৮৫, ইংরেজিতে ৯১, রসায়নবিদ্যায় ৯৯, অঙ্কে ৯৯, পদার্থবিদ্যায় ৯৯ ও জীববিদ্যায় ৯৮ নম্বর পেয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি তার নেশা বই পড়া ও হিন্দি সিনেমা দেখা।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী পুরুলিয়া জেলায় ছেলেদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রথম সেই জেলা স্কুলেরই ছাত্র। এই স্কুলের প্রতাপকুমার মাহাতো উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৮২ নম্বর পেয়েছে। কেন্দা থানা এলাকার বালিগুমা গ্রামের বাসিন্দা হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে বাবার চাকরির সুবাদে তারা পুরুলিয়ার দুলমি এলাকার বাসিন্দা। গণিতে ১০০, পদার্থবিদ্যায় ৯৯ ও রসায়নে ৯৭ পেয়েছে সে। আইপিএলে তার প্রিয় দল কেকেআর। কিন্তু জয়েন্ট এন্ট্রান্স, ভর্তির টেনশন ইত্যাদির কারণে খেলা সে ভাবে দেখা হয়ে উঠছে না বলে খানিকটা আক্ষেপ রয়েছে প্রফেসর শঙ্কুর এই ফ্যানের। তার লক্ষ্য ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা।

তবে এই কৃতীর প্রতি অবিচারের অভিযোগ তুলেছেন তাঁর স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক অশোক মিশ্র। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের কাছে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার নম্বর মুখবন্ধ খামে আসে। তা খুলে দেখছি জীববিদ্যার প্র্যাকটিক্যালে ওর যে নম্বর রয়েছে, তার থেকে দু’নম্বর কম ওর মার্কশিটে উল্লেখ রয়েছে। ওই দু’নম্বর যোগ হলে সে রাজ্যের মেধা তালিকায় ন’নম্বরে থাকতে পারত।’’

জেলায় মাধ্যমিকে মেয়েদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রথম হয়েছে পুরুলিয়া রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ের সাবর্ণি ভট্টাচার্য। কলা বিভাগের ছাত্রী হিসেবে তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৭২। তার পছন্দের বিষয় গল্পের বই পড়া। তার কথায়, ‘‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ বসু ও গোয়েন্দা গল্প আমার খুব ভাল লাগে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই সময়, প্রথম আলো, পূর্ব-পশ্চিম, মনের মানুষ আমার খুবই ভালো লেগেছে। পরীক্ষা দিয়ে ‘দেখি নাই ফিরে’ পড়ে ফেলেছি।’’ মাধ্যমিকেও মেয়েদের মধ্যে সে জেলায় প্রথম ছিল। তার ইচ্ছে, ইতিহাস নিয়ে পড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

HS Political Student result
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE