Advertisement
E-Paper

আর পড়ব কী করে, ঘুম নেই পারমিতার

নেপালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ থেকে শুরু করে ক্যানসার আক্রান্ত স্কুল পড়ুয়াদের চিকিৎসার জন্য শিক্ষকদের সঙ্গে পথে নামতে দেখা গিয়েছিল তাকেও। আজ উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করেও অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধ হতে বসেছে সেই পারমিতা নাগের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০১:৩২
মায়ের সঙ্গে পারমিতা। — নিজস্ব চিত্র।

মায়ের সঙ্গে পারমিতা। — নিজস্ব চিত্র।

নেপালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ থেকে শুরু করে ক্যানসার আক্রান্ত স্কুল পড়ুয়াদের চিকিৎসার জন্য শিক্ষকদের সঙ্গে পথে নামতে দেখা গিয়েছিল তাকেও। আজ উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করেও অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধ হতে বসেছে সেই পারমিতা নাগের।

আমোদপুর বাজার পাড়ার বাসিন্দা পারমিতা এ বারে স্থানীয় জয়দূর্গা হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪০১ নম্বর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। ইচ্ছে রয়েছে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হওয়ার। তার ইচ্ছাপূরণে বাধা একটাই, অর্থাভাব। মাত্র আড়াই বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছে পারমিতা। মা হাসিদেবী অঙ্গনওয়াড়ী কর্মী। তাঁর সামান্য আয়েই এত দিন কোনও রকমে চলেছে পড়ার খরচ, খাওয়া পড়া। এ বার বাস কিংবা ট্রেনে ভাড়া দিয়ে ন্যূনতম ২০ কিলোমিটার দূরের কলেজে পড়তে যেতে হবে তাকে। নয়তো মেস অথবা হস্টেলে থাকতে হবে। কলেজে পড়ার খরচ তো রয়েছেই। স্কুলে তবু বইপত্র থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে থেকে মিলেছে বিনা বেতনের টিউশনি। কলেজের নতুন পরিবেশে সেই সহযোগিতা নাও মিলতে পারে!

এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কী করে মেয়েকে পড়াবেন, তা ভেবে রাতের ঘুম উবেছে হাসিদেবীর। তিনি বলেন, ‘‘অঙ্গনওয়ারী কর্মী হিসাবে যে ক’টা টাকা পাই, তাতে মা-মেয়ের দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জোগাড় করতেই হিমসিম খেতে হয়েছে। স্কুলের শিক্ষকেরা পাশে ছিলেন বলেই ও পড়াশোনা করতে পেরেছে। এরপর কি হবে কে জানে!’’

উত্তর জানা নেই পারমিতারও। সে বলে চলে , ‘‘প্রথম দিকে তো মায়ের চাকরিটাও ছিল না। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা যে কি কষ্ট করে আমাকে মানুষ করেছেন তা আমিই জানি। মা অবশ্য সব সময় দুঃশ্চিন্তা করতে বারণ করেন। কিন্তু বুঝতে তো পারি আমার পড়া নিয়ে মায়ের চিন্তার শেষ নেই!’’

এই পারমিতাকেই বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে শিক্ষকদের সঙ্গে নেপালের ভূমিকম্প থেকে শুরু করে নিজের স্কুলের দুই ক্যানসার আক্রান্ত পড়ুয়ার জন্য বাজারে বাজারে কৌটো নিয়ে অর্থ সংগ্রহ করতে। সেই টাকায় চিকিৎসা করিয়েই এক জন পড়ুয়া এখন আরোগ্যের পথে। এক জনকে অবশ্য চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি। ওই দুই পড়ুয়ার বাবা জনার্দন দাস এবং বাঞ্ছারাম দাসরা মনে রেখেছেন সে দিনের কথা। বলছেন, ‘‘সে দিন ছেলের চিকিৎসার জন্য অর্থা ভাবে আমরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম। শিক্ষকমশাই এবং অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে পারমিতাও চাঁদা তুলে সেই চিন্তা দূর করেছিল।’’ আজ পড়াশোনার জন্য অর্থা ভাবে সেই মেয়েটিই দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে জেনে ছটফট করছেন তাঁরা। কিন্তু, সাহায্য করবেন সেই সঙ্গতি কই?

প্রধান শিক্ষক সুশান্ত ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘পড়াশোনায় নিষ্ঠার পাশাপাশি অন্যের জন্য পারমিতার মধ্যে রয়েছে সহমর্মিতা বোধ রয়েছে। সে এক দিকে যেমন প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা করেছে তেমনই অন্যের বিপদে আমাদের সঙ্গে পথেও নেমেছে। আমারও ওর পাশে থাকার চেষ্টা করব।’’

HS result Student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy