Advertisement
০৬ মে ২০২৪

কাঁপুনিতেই মালুম, শীত এসেছে

দেরিতে এসেছে। কিন্তু রাজ্যে ঢুকেই একেবারে হামলে পড়েছে শীত! শীতের থাবায় হাড়ে কাঁপুনি শুরু হয়ে গিয়েছে পুরুলিয়া-বাঁকুড়াবাসীর। উলের শোয়েটার, হাতমোজা, কানঢাকা টুপিতেও যেন রক্ষে মিলছে না হিমেল হাওয়ার দাপট থেকে।

যাঁদের উপায় নেই, কুয়াশা ঢাকা সকালে গরম পোশাকে শরীর ঢেকে তাঁরা পথে নামলেন। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায়।

যাঁদের উপায় নেই, কুয়াশা ঢাকা সকালে গরম পোশাকে শরীর ঢেকে তাঁরা পথে নামলেন। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:২৬
Share: Save:

দেরিতে এসেছে। কিন্তু রাজ্যে ঢুকেই একেবারে হামলে পড়েছে শীত!

শীতের থাবায় হাড়ে কাঁপুনি শুরু হয়ে গিয়েছে পুরুলিয়া-বাঁকুড়াবাসীর। উলের শোয়েটার, হাতমোজা, কানঢাকা টুপিতেও যেন রক্ষে মিলছে না হিমেল হাওয়ার দাপট থেকে। মেঘে ঢাকা পড়েছে সূর্যের রোদ্দুর। একটু উষ্ণতার খোঁজে কেউ চা দোকানের উনুনের সামনে হাত পেতে বসে, কেউ আবার খসখস করে ঘঁষে চলেছেন দুই হাতের তালু। তাতেও গরম মিলছে কই!

এমনিতে নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই মোটের উপর শীতের আমেজ পড়ে যায় জেলায়। তবে এ বার উল্টো চিত্রই দেখা গিয়েছে দুউ জেলায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসেও উত্তরে হাওয়ার দেখা মিলছিল না জেলায়। ভর দুপুরে সরকারি অফিস কাছারি থেকে গৃহস্থের ঘরে পাখার বাতাসের প্রয়োজন পড়ছিল। অনেকেই আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘‘এ বার বুঝি শীত আর পড়ল না।’’ মঙ্গলবার পর্যন্ত আবহাওয়া দফতরের রেকর্ডে এখানে শীত ছিল না। সে দিন বাঁকুড়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল ১৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। পরিস্থিতি বদলে গেল বুধবার থেকেই। তাপমাত্রা এক ঝটকায় গিয়ে ঠেকল ১২.২-এ। পুরুলিয়ায় নামল ৮.৬ ডিগ্রিতে, মরসুমের সেটাই ছিল শীতলতম দিন। আর বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার তাপমাত্রা নেমে গেল ১১.৫ ডিগ্রিতে। যদিও পুরুলিয়ায় সর্বনিম্ম তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে হয় ৯.৬ ডিগ্রি।

এই দু’দিন আগেই ভর দুপুরে গায়ে জামা রাখা যাচ্ছিল না, রোদে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ঘেমে একশা হতে হচ্ছিল। দু’দিনেই চিত্রটা বদলে গেল! মাচানতলা মোড়ে একটি চা দোকানের উনুনে হাত সেঁকতে সেঁকতে এ কথাই বলছিলেন বাঁকুড়ার বাসিন্দা মদন রক্ষিত। ওই চা দোকানের মালিক বাপি দাস বলেন, “দু’দিন আগেও উনুনের সামনে দাঁড়িয়ে চা বানাতে গিয়ে ঘামছিলাম। আর এখন উনুনের আঁচটা ছেড়ে বের হতেই মন যাচ্ছে না।” ভর দুপুরেও গা থেকে আলাদা করা যাচ্ছে না শীতের পোশাক।

পুরুলিয়াতেও একই ছবি। এ দিন সকাল থেকে রোদের সঙ্গে হিমেল হাওয়া বইছিল জেলায়। তবে দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আকাশে মেঘ জমেছে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। ফলে দিনের বেলা বাইরে বসে রোদ পোহানোর আমেজটা থেকে এ দিন বঞ্চিত হতে হয়েছে বাসিন্দাদের।.

এ দিকে জমিয়ে ঠান্ডা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জনজীবনে। সকালের দিকে জেলা শহর পুরুলিয়া-সহ রঘুনাথপুর, আদ্রা, মানবাজারের মতোর এলাকার রাস্তাঘাট অন্যান্য সময়ের তুলনায় যথেষ্ঠই ফাঁকা ছিল। টুপি, মাফলার বেঁধে গায়ে সোয়েটার চাপিয়ে প্রাতর্ভ্রমণকারীর সংখ্যাও হঠাৎ করে কমে গিয়েছে। ভোরের দিকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসগুলিও ছিল অনেকটাই ফাঁকা। একই ছবি ট্রেনের ক্ষেত্রেও। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোরের দিকে কুয়াশার দাপটে এ দিন দূরপাল্লার দু’টি ট্রেন আদ্রায় দেরিতে ঢোকে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিত্য প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বেরিয়েছেন মানুষজন। ভিড় জমেছিল চায়ের দোকানগুলিতেও।

এ দিকে হঠাৎ করে ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার শান্তনু সাহু বলেন, ‘‘সপ্তাহের প্রথম দিকেও পুরুলিয়ায় দুপুর বেলায় গরম ভাব ছিল। দু’দিন ধরে ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় সবার একটু সাবধানতা নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক লোকজনের ক্ষেত্রে ঠান্ডা লেগে অসুখ হওয়ার সম্ভবনা থেকেই যায়।’’ তবে ঠান্ডার কারণে এখনই স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি কমেনি বলে জানাচ্ছে কয়েকটি স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে ঠান্ডা আরও বাড়লে স্কুলে পড়ুয়াদের হাজিরা কম হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এ দিকে ইংরেজি বছর শেষ হতে হাতে মাত্র আর ক’টা দিন বাকি। শীতের দেখা না মেলায় ভ্রমণ রসিকেরা কিছুটা বিষন্ন হয়ে পড়েছিলেন। এ বার হাসি ফুটেছে তাঁদের মুখে। শুশুনিয়া, মুকুটমণিপুর, বিহারীনাথ, অযোধ্যা পাহাড়, জয়চণ্ডী, বান্দোয়ানের মতো বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার পর্যটন স্থানগুলির ব্যবসায়ীরাও হাত কামড়াচ্ছিলেন এত দিন। মরসুমের বেশ ক’টা দিন এমনিতেই পার হয়ে গিয়েছে। ভিড় জমেনি এই সব জায়গায়। তবে এ বার পর্যটকদের দেখা মিলবে সেই আশায় বুক বাঁধছেন তাঁরাও। শুশুনিয়ার পাথর শিল্পী বাবলু কর্মকার, বিবেক কর্মকাররা জানাচ্ছেন, ডিসেম্বরের শুরু থেকেই পর্যটকদের ভিড়ে জমজমাট হতে শুরু করে এই পর্যটনস্থল। এ বার ছবিটা ছিল উল্টো। নির্দিষ্ট সময়ে শীত না আসায় অনেকটা সময়ই পার হয়ে গিয়েছে মরসুমের। তবে যে মেজাজ নিয়ে জেলায় শীত ঢুকেছে তা বজায় থাকলে চুটিয়ে ব্যবসা করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন শিল্পীরা। পেশায় গাড়ি চালক বাঁকুড়ার বাপি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অন্যান্য বছর এতদিন পর্যটকদের বেড়াতে যাওয়ার জন্য গাড়ি বুকিং করা শুরু হয়ে যায়। এ বছর এখনও শুরুই হয়নি। এ বার শীত পড়েছে। আশা করছি বেড়াতে যাওয়ার হিড়িক বাড়বে।”

সব মিলিয়ে অগ্রহায়ণের একেবারে শেষ লগ্নে শীতের আমেজে জমে গিয়েছে লালমাটির দেশ এই দুই জেলা। সামনেই পৌষ, মাঘ। শীত কী খেলা দেখায় সে দিকেই তাকিয়ে বাসিন্দারা।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

winter purulia bankura birbhum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE