মণ্ডপে বাড়ছে দৈত্যাকৃতি এডিস ইজিপ্টাই। ছবি: সুজিত মাহাতো
রাস্তার ধারে ওঁত পেতে পেল্লাই এক মশা। আকারে এতই বড় যে ঘাড় তুলে দেখতে হয়। পুজোর ৯৭ বর্ষে আস্ত এক ডেঙ্গির মশা ঘাঁটি গেড়েছে পুরুলিয়ার প্রাইভেট রোড মহিলা মণ্ডল দুর্গাপুজো কমিটির তোরণে। থিম, বলাই বাহুল্য— ডেঙ্গি সচেতনতা।
চলতি বছরে শহরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। আক্রান্তের সংখ্যা একাধিক। শহরের স্টেশন পাড়ার এই পুজো কমিটির ভাবনায় তাই ঠাঁই পেয়েছে ডেঙ্গি সচেতনতা। ডেকরেটরের লোকজনের সঙ্গে মণ্ডপ সাজানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন কমিটির সদস্যেরাও। মণ্ডপের সাজগোজ থেকে শুরু করে প্রতিমা আনা, পুজোর আয়োজন, অঞ্জলি থেকে প্রসাদ বিতরণ, পাড়ার খুদেদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান— সব মহিলারাই দেখভাল করেন। কমিটির সম্পাদিকা নিতু হাজরার কথায়, ‘‘কর্তারা তো কাজে ব্যস্ত। তাঁদের সময় কোথায়। তাই রেল আবাসনের এই পুজোর সব আমরাই দেখভাল করি।’’
উদ্যোক্তাদের দাবি, পুরুলিয়া শহরে থিম পুজোর প্রচলন তাঁদের হাত ধরেই। বেশ কয়েক বছর আগে কাশীপুরের সুদৃশ পঞ্চকোট রাজবাড়ি গড়েছিলেন মণ্ডপ হিসেবে। মণ্ডপের কাজ দেখভালের ফাঁকে নিকি কুমারী, চিন্তামণি মাঝি, নিতুদেবী হাজরা-সহ অন্যরা জানালেন, পুজোর থিম নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই নানা মত উঠে আসছিল। সেই সময়ে হঠাৎই তাঁদের মাথায় আসে এমন ভাবনা। পূর্ণিমা রায় নামে এক সদস্যার কথায়, ‘‘থিম হিসেবে ওটা সকলেরই মনে ধরে। তা ছাড়া এর একটা সামাজিক দিকও রয়েছে। আর পিছিয়ে আসিনি।’’
প্যান্ডেলের তোরণটাই হচ্ছে একটা আস্ত মশা। ডেঙ্গির মশা কেমন দেখতে সে সম্পর্কে দর্শকেরা একটা ধারণা পাবেন। মণ্ডপের চার দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে নোংরা। ডাবের খোসা, টায়ার বা মাটির ভাঁড়ে থাকবে জমা জল। স্বচ্ছ জলে ডিম পাড়ে ডেঙ্গির মশা এডিস। সে বার্তাই দেওয়া হবে। এক সদস্যার কথায়, ‘‘আমাদের তরফে বার্তা খুব স্পষ্ট। আমরা নিজেরা ঘরের চারপাশ অপরিস্কার করে রাখলে যে আখেরে আমাদেরই ক্ষতি, সেটাই চোখের সামনে তুলে
ধরা হবে।’’
পাশাপাশি থাকবে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আক্রান্তের চিকিৎসা করা হচ্ছে। সুস্থ হওয়ার পরে তরল খাবার বেশি খাওয়ানো-সহ যে ধরনের সতর্কতা আক্রান্ত হওয়ার আগে বা পরে নেওয়া দরকার তা সবই থাকবে মণ্ডপ জুড়ে। দেবী দুর্গা এখানে মশক নামক অসুর নিধনকারী। কল্পনা ভট্টাচার্য, দীপালি ধীবর-সহ অন্য সদস্যেরা জানালেন, স্বাস্থ্য দফতর এই ভাবনা ফুটিয়ে তুলতে
সাহায্য করছে।
পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্ত উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘খুবই ভাল উদ্যোগ। স্বাস্থ্য দফতর নিয়মিত প্রচার করছে, কী ভাবে ডেঙ্গি থেকে দূরে থাকা যায়, আক্রান্ত হলেই বা কী করতে হবে। কিন্তু একটি পুজো কমিটি যদি পুজোয় থিম হিসেবে বিষয়টিকে উপস্থাপিত করে তা হলে তা বাড়তি গুরুত্ব পায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy